ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

আইপিও’র অনুমোদন কমেছে অর্ধেক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
আইপিও’র অনুমোদন কমেছে অর্ধেক

ঢাকা: বিদায়ী বছরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) কোম্পানির অনুমোদন অর্ধেক কম হয়েছে। চাহিদার চেয়ে আইপিও’র অনুমোদন কম হওয়ায়, ভালো-খারাপ বিবেচনা না করেই এসব কোম্পানির আবেদনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিদায়ী বছরের সর্বনিম্ন ২২ থেকে ৬৪ গুণ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের আবেদন জমা পড়েছে।

শুধু তাই নয়, বাজারে লেনদেন শুরুর পর কারসাজি করে ১০ গুণ বেশি দামের বিবিএস ক্যাবলসের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি করেছে ১৫৫ টাকায়। যা ২০১০ সালের কারসাজিকেও হার মানায়।

এতে দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারী উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০১৭ সালে ৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে আইপিও’র মাধ্যমে বাজার থেকে মোট ২১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে। অথচ এর আগের বছর ২০১৬ সালে ১১টি কোম্পানিকে মোট ৮৪৯ কোটি, টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছিলো। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কোম্পানির আইপিও’র অনুমোদন।

সূত্র জানায়, এর আগের বছর ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১২টির ৮৩০ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে ২০ কোম্পানিকে ১ হাজার ২৬৩ কোটি, ২০১৩ সালে ১২ কোম্পানিকে ৮৩০ কোটি, ২০১২ সালে ১৭ কোম্পানিকে ১ হাজার ২০৮ কোটি, ২০১১সালে ১৩ কোম্পানিকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি এবং ২০১০ সাল পুঁজিবাজারের মহাধসের বছরেও ১৮টি কোম্পানিকে ১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে।

এছাড়াও পুঁজিবাজারের মহাধসের আগের বছর ২০০৯ সালে ১৭ কোম্পানিকে ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এসব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে বিদায়ী বছরে গত আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম কোম্পানির আইপিও’র অনুমোদনের রেকর্ড গড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), অর্থনীতি এবং বাজেটের আকার বৃদ্ধি অনুসারে পুঁজিবাজার বড় হচ্ছে না। তাই বাজারে ভারসাম্য রক্ষায় নতুন করে ভালো ১ হাজার কোম্পানির তালিকাভূক্তি প্রয়োজন। কিন্তু চলতি বছর সেখানে মাত্র ৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। যা দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের জন্য কখনো সুখকর নয়।

অন্যদিকে চলতি বছর ডিএসইতে সূচক বৃদ্ধি হয়েছে ১ হাজার পয়েন্টের বেশি, বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে ৭৮ হাজার কোটি টাকা। নতুন করে দেশি-দেশি হাজার হাজার বিনিয়োগকারী বাজারে প্রবেশ করেছে। এসব কারণে আইপিওতে আসা কোম্পানির শেয়ার পেতে আবেদনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা।

ফলে ২০১৭ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আইপিওতে আবেদন ৫৪ গুণ বেশি পড়েছে, নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেডের আইপিওতে ২৮ গুণ, বিবিএস ক্যাবলস লিমিটেডের আইপিওতে ৪৮ গুণ, আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেডের আইপিওতে ২২ গুণ, ওইমেক্স ইলেক্টোডসের আইপিওতে ৬৪ গুণ এবং নাহি অ্যালুমোনিয়ামের আইপিও ৬৪ গুণ আবেদন বেশি জমা পড়ে। লেনদেন শুরুর পরও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে শেয়ারের দাম।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অদক্ষতা ও খামখেয়ালির কারণে গত আট বছরের মধ্যে সব চেয়ে কম কোম্পানির আইপিও’র অনুমোদন হয়েছে।

তা মানতে নারাজ বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনতে গিয়ে আইপিওর পরিমাণ কমে গেছে। এ ছাড়াও বুকবিল্ডিং সিস্টেমের নীতিমালা সংশোধন করার বেশ কিছু কোম্পানি প্রিমিয়াম নিয়ে বাজারে আসতে পারেনি। এ কারণে অনুমোদন দিতে দেরি হয়েছে। তবে আগামীতে আইপিওর অনুমোদন বাড়াবে বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, আইপিও কম অনুমোদনের দু’টি কারণ হতে পারে। এর মধ্যে একটি হতে পারে মানসম্মত কোম্পানির অভাব। অন্যটি হচ্ছে আইপিওতে আসার আবেদন জমার পরিমাণ কম থাকা।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি (বিএমবিএ) ছায়েদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন কারণে ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। এছাড়াও ভ্যাট-টেক্স না দিয়ে ব্যবসা করতে পারায় পুঁজিবাজারের জবাবদিহিতায় আসতে চায় না বেশির ভাগ কোম্পানি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
এমএফআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।