শেয়ারের দাম আরও কমে যাওয়ার আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করছেন বিনিয়োগকারীরা। অনেকেই লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা।
বাজারের এই দরপতনের প্রধান কারণ হিসেবে ব্যাংকের এডি রেশিও কমানোর সারকুলার নিয়ে নেতিবাচক প্রচার, খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বিভিন্ন কোম্পানির নেতিবাচক ইপিএস প্রকাশ ইস্যুকে চিহ্নিত করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এবং ডিএসই’র শীর্ষ ৩০ ব্রোকারেজ হাউজের জরুরি বৈঠকে এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়।
বৈঠকে বলা হয়, যে ইস্যুগুলোর কারণে দরপতন হচ্ছে এটা কোনো যৌক্তিক কারণ নয়, তবে দরপতন ঠেকাতে প্রয়োজন মার্কেট সাপোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মার্চেন্ট ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এই মুহূর্তে শেয়ার কিনে সাপোর্ট দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই। তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। বাজারকে এই অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তোলনে প্রয়োজন তারল্য প্রবাহ বাড়ানো এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমবিএ’র প্রেসিডেন্ট নাছির উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, নিম্নমুখী বাজারকে তুলে আনতে সাপোর্ট দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই।
তিনি বলেন, এক্সপোজার গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া নিয়মে চলতে গিয়ে বিনিয়োগের পরিধি কমেছে। তাই চলমান সংকটের আইসিবিসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারছে না।
এই সংকটের পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদী বাজার স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার লিমিটেডের ক্রাইটেরিয়া সংশোধন। এক্সপোজারের ব্যাংকগুলোকে রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ বাজারে বিনিয়োগ করার যে বিধান রয়েছে সেটির পরিবর্তে এক্সপোজারের হিসাব করতে শেয়ারের বাজার মূল্য গণনা না করে ক্রয় বা কস্ট প্রাইসে হিসাব করতে হবে। পাশাপাশি বন্ড এবং সাবসিডারি কোম্পানির বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখতে হবে।
যেভাবে শুরু হয় দরপতন:
জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয় দরপতন। যা ব্যাপক আকারে ধারণ করে ২৯ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণার পরদিন থেকে। এরপর থেকে মোট চার কর্যদিবস লেনদেন হয়েছে। আর এই চার কার্যদিবসই দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ চার কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক কমেছে ২৮৮ পয়েন্ট। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ৬৩৫ পয়েন্ট।
সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে নতুন করে পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন ১৪ হাজার ৬২৩ কোটি ৭১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। সিএসইতে বিনিয়োকারীদের পুঁজি নেই ১২ হাজার ৫৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পাশাপাশি লেনদেনও কমছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৮
এমএফআই/এমজেএফ