কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে প্রতিষ্ঠানটি একটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে ডিএসই-এর ৩ শতাংশ শেয়ার কিনবে। এজন্য তারা ৮১ কোটি টাকা দাম প্রস্তাব করেছে।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা। ফলে বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে কোনো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রি করা হলে এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি নিজেদের নামে নয়, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ নামে তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ আবেদন করেছে ব্রামার্স পাটনার্স অ্যান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
অভিযোগ রয়েছে, কর ফাঁকি দিতে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কোম্পানিটি অর্থ বিদেশে পাচার অথচ ডিএসই-এর মালিকানায় আসতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদবিরও চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী (সিইও) পাকিস্তানি বংশদ্ভূত খালিদ কাদের।
তবে এ বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো উত্তর নেই কোম্পানিটির ‘বিতর্কিত’ উদ্যোক্তাদের। এছাড়া অনিয়মের জন্য প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা কোম্পানিটির কাছে শেয়ার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পুঁজিবাজারের প্রভাবশালী একটিপক্ষ।
তবে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির সিইও খালিদ কাদের বাংলানিউজকে বলেন, প্যারাডাইস পেপার্সের বিষয়টি আপনারা খোঁজ নেন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।
‘ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ একটি কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়ে শেয়ার কেনার প্রস্তাব করেছে মাত্র। ’
তবে এর চেয়ে বেশি কিছুই বলতে চাননি তিনি।
পরবর্তীতে কোম্পানিটির কর্মকর্তা মোলাল্লেম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্যারাডাইস পেপার্সে নাম থাকার তথ্য সঠিক নয়। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন- মূল পেপার্সে বাংলাদেশের কোনো কোম্পানির নাম নেই। ’
পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনা বিষয়ে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, প্যারাডাইস পেপার্সে যে সব কোম্পানির নাম এসেছে, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
‘এই প্রতিষ্ঠানটি যদি শেয়ার বাজারে ব্যবসা করে, তবে তাদের আপাতত নিবিড়ভাবে নজরদারি (ক্লোজলি মনিটরিং) করা উচিত। কোনো অনিয়ম পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। ’
গতবছরের নভেম্বরে প্রকাশিত প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে বিশ্বের ১৮০টি দেশের রাজনীতিক, তারকা ও বিত্তশালী ব্যক্তির নাম আসে। যারা কর ফাঁকির জন্য বিদেশে অফশোর কোম্পানিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন।
বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) এসব তথ্য প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশের ১০টি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। এরমধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট একমাত্র প্রতিষ্ঠান ব্রামার্স অ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ)ও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি নেই। ফলে এই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের অর্থপাচারকারী হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। এমন কয়েকটি কোম্পানি ও ব্যক্তির বিষয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮
এমএফআই/ এমএ