সিঙ্গাপুর থেকে: চট্টগ্রামের মুরাদপুরের গোলাম সারোয়ার (৩৭) গত ১৬ বছর ধরে রয়েছেন সিঙ্গাপুরে। ’৯৪ সালে এসএসসি পাশ করার পর ১৯৯৭ সালের জুন মাসে সিঙ্গাপুর পাড়ি জমান তিনি।
শনিবার দুপুরে দেস্কার রোডের বাংলা রেস্টুরেন্ট ‘ঘরোয়া’তে বসে কথা হয় তার সঙ্গে।
৪ ভাই ৩ বোনের সংসারে সারোয়ারই বড়। বাবা সাধারণ বীমায় চাকরি করতেন। ২০০০ সালে রিটায়ার করেন। এর আগেই ৯ জনের পরিবার বাবার একার পক্ষে চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।
সারোয়ার বলেন, এসএসসি পাশের পর দ্বায়িত্ব এসে পড়ে কাঁধে। এক সময় বেশ শুকনা ছিলাম আমি। মেঝো মামার লেদ মেশিনের ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করলাম। শিখতে থাকি কাজ। এর ফাঁকেই পাহাড়তলীতে মোস্তফা হাকিম কলেজে এইচএসসি পাশ করি। তবে মামার ওয়ার্কশপে আয় হতো খুব কম। তাই সিদ্ধান্ত নিই সিঙ্গাপুরে আসার।
তবে আমার মা এবং সেঝো মামা বাধ সাধেন। তারা বলেন, যে মামা কাজ শেখালো তাকে ছেড়ে চলে যাওয়া ঠিক হবে না।
অগত্যা আরো কিছু দিন মামার ওয়ার্কশপেই কাজ করেন সারোয়ার।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সেঝো মামার এক শিষ্য থাকতো সিঙ্গাপুর। তার মাধ্যমেই ৯৭ সালের জুন মাসে চলে আসি এখানে। সব খরচ মামাই বহন করেন।
বিদেশের মাটিতে পা রাখার তিন বছরের মধ্যে মারা গেলেন মা। দেখতে যেতে পারেননি মাকে। কিছুদিন পরে সেঝো মামাও মারা গেলেন। সেই স্মৃতি চারণে ভারী হয়ে আসে সারোয়ারের কণ্ঠ।
শোক কাটিয়ে নিজের মেঝো ভাইকেও নিয়ে আসেন সিঙ্গাপুর। দুই ভাই মিলে আয় করছিলেন, সম্পত্তি করছিলেন চার ভাইয়ের জন্যে। ২০০৬ সালে মারা যান বাবা। এরপরে বাঙ্গালি অনেক পরিবারের মতোই বিভিন্ন বিষয়ে ভাইদের মধ্যে মনঃমালিন্য শুরু হয়, ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়।
২০১৪ সালটার শুরুতে আবার ভাইরা সবাই এক সুতোয় চলে আসে। তবে সেটা যে আনন্দে, তা নয়। ব্লাডার ক্যান্সার ধরা পড়ে সারোয়ারের। বর্তমানের চিকিৎসা চলছে তার। চিকিৎসক বলেছেন, বর্তমানে অবস্থা ভাল। তবে নিয়মিত চেক আপ করাতে হবে।
২০০৮ সালে পরিবারের পছন্দে বিয়ে করেন সারোয়ার। বর্তমানে ৭ বছরের এক ছেলে এবং তিন বছরের এক মেয়ের জনক তিনি।
বর্তমানে গেটস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসের মোবাইল হোস টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত সারোয়ারের এইচএসসি পাশের পর আর পড়াশোনা হয়নি, তবে এখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ডিপ্লোমা করার প্রয়োজনিয়তা বোধ করেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিপ্লোমা’র ফাইনাল পরীক্ষা দেন তিনি। এরপরের ২৮ ফেব্রুয়ারি অপারেশন হয় ব্লাডার ক্যান্সারের।
এখানে হোস টেকনিশিয়ানদের নির্দিষ্ট পোশাক রয়েছে। পোশাকের উপর আর নিচের অংশ একটি চেইন দিয়ে কাভার দিতে হয়।
সারোয়ার বলেন, এখানে কাজের পরিবেশ ভাল। সিঙ্গাপুরবাসীর মতোই সুযোগ-সুবিধা পাই আমরা। খরচ বেশি হলেও, আয়ও বেশ। এখন মাসে ২ হাজার ২০০ ডলার আয় করছি। বোনাস ছাড়াও বাৎসরিক ছুটি রয়েছে, মেডিকেল ছুটি রয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে এখানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমি নিজেই ৪টি কোম্পানি পরিবর্তন করেছি। এখানে বৈধভাবে থাকতে পারলে আয় বেশ ভাল। তবে খরচটাও করতে হবে বুঝে-শুনে।
** ‘স্যরি’টা এক সময় যন্ত্রণা হয়ে উঠছিল’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৪