ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সিঙ্গাপুর

জীবন যেন এক রংধনুর হৃদয়!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৭
জীবন যেন এক রংধনুর হৃদয়! কুসুমার শিল্পকর্মের পাশে পু পে; ছবি: মাজেদুল নয়ন

সিঙ্গাপুর থেকে: গ্যালারিজুড়ে টিউলিপ আর টিউলিপ! যেনবা টিউলিপের ভেতরেই রয়েছে ধবধবে সাদা গ্যালারিটা। রংধনুর রংয়ে টিউলিপগুলো যেন ভেসে আছে। আর আমি টিউলিপের দুনিয়ায় হেঁটে বেড়াচ্ছি। এই দুনিয়া যেন এক গোলকধাঁধা। সুন্দরের ধাঁধা, যেন হৃদয়কে বিমোহিত, আবেশ-বিমূঢ় করে দেবে।করলোও তা-ই!

জাপানের ইয়াওই কুসামা এ মুহূর্তে দুনিয়ার আলোচিত শিল্পীদের (পেইন্টারদের)একজন। গত ৯ জুন থেকে শুরু হওয়া তার শিল্পপ্রদর্শনী চলবে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

থাই নিউজ নেটওয়ার্কের রিপোর্টার কানলেওই ওয়েকলেহং তার সহজ নাম রেখেছেন ‘পু পে’। তার সঙ্গে ন্যাশনাল গ্যালারি অব সিঙ্গাপুরে না গেলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না, এই নগরবাসী এতোটাই শিল্পপ্রিয় আর শিল্পরসিক।

কুসুমার প্রদর্শনীতে শিল্পরসিকরা; ছবি: মাজেদুল নয়নঢাকায় শিল্প প্রদর্শনীগুলোতে উদ্বোধনের সময় ছাড়া পরে আর তেমন দর্শক হয় না। কিন্তু সিঙ্গাপুর ব্যতিক্রম। আমার নিজের ধারণা ছিল, সিঙ্গাপুরের মানুষগুলো বুঝিবা রোবট। যেখানে কোন প্রাণ নেই, যন্ত্রের চর্চা হয় কেবল। শিল্পের দিকে চোখ ফেরাবার, শিল্প উপভোগের কোনো ইচ্ছো বা ফুরসত এদের নেই।

অজস্র বিন্দু দিয়ে আঁকা অপরূপ নীল চিত্রকর্ম; ছরি:মাজেদুল নয়ন কুসামার প্রদর্শনী দেখতে গত ২৯ জুলাই শনিবার পে'র সঙ্গী হলাম আমি। পে'র সবচেয়ে বড় গুণ তার সঙ্গে থাকলে সময় কেটে যাবে তরতর করে। সে এতোটাই বিনয়ী যে, দালাইলামাকেও হার মানাতে পারবে। আর শরীর বেঁকিয়ে ওর শিশুশুলভ হাসিটা মন কাড়বে যে কারোরই।

ন্যাশনাল গ্যালারির বেজমেন্টে টিকেট কাউন্টার। বলতেই হবে, এটা যেন বাংলাদেশে ক্রিকেট ম্যাচের টিকেট কাউন্টার। এতো এতো মানুষ চিত্রকর্ম আর শিল্পকলার বহুমাত্রিক প্রদশর্নী দেখতে এসেছে নগদ ৩০ ডলারের (১৮০০ টাকা) টিকেট কেটে। অবাকই লাগল দেখে।

পুরো এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে দুজনের জন্য টিকেট কাটলো পু পে। এ সময়টায় আমি রিপোর্ট লেখায় ব্যস্ত। টিকেট কেটে বিজয়ের হাসি মলিন হয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। যখন দেখা গেলো প্রথম গ্যালারিতে ঢুকতেই দীর্ঘ লাইন।

কুসুমার একটি শিল্পকর্ম; ছবি: মাজেদুল নয়নপ্রথমেই আয়না বসানো একটি গ্যালারি। গলি বানিয়ে সেখানে উত্তল দর্পণ বসিয়ে প্রতিফলন প্রতিসরণ আর নিক্ষেপণের ধাঁধায় পড়ে যাই আমরা। এটা লৌকিক জগতের মতো। কুসামা তৈলচিত্রের পাশাপাশি এ ধরনের পুরো একটি ঘরকে শিল্পকর্ম দিয়ে সাজিয়েছেন। যেখানে দর্শকমাত্র জড়িয়ে পড়বেন সৃজিত শিল্পকর্মের মনমোহন জালে।

১৯৫০ সালে প্রথম চিত্র প্রদর্শনীর পরই বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন কুসামা। সে যুগে তার চিত্রকর্মগুলোতে কিশোরী মনের ভাবাবেগ আর মায়ার গাঁথুনি নাড়িয়ে দেয় বিশ্বের শিল্পরসিকদের। এরপর প্রতি দশকেই নিজেকে ভিন্ন মাত্রায় হাজির করে চলেছেন কুসামা।

সাদা ক্যানভাসের ওপর তার বিন্দু বিন্দু কালো ফোঁটা দিয়ে তৈরি ‘জাল’ নামের চিত্রকর্ম প্রথম প্রদর্শিত হয় ১৯৫৯ সালে, নিউইয়র্কে। সাদা ক্যানভাসে হাত ঘোরাতে ঘোরাতে বিন্দু তৈরি করতে থাকেন তিনি।

বিন্দু তৈরি করে কাঁচঘেরা ঘরে আলোর ঝলকানিতে স্বর্গের ফোঁটা তৈরি করেছেন তিনি। এই ঘরে ১০ সেকেন্ডের বেশি সময় থাকতে দেয়া হয় না।

কুসুমার একটি শিল্পকর্ম:ছবি:মাজেদুল নয়ননীল কালো বিন্দু বিন্দু ভিন্ন রংয়ের কাচঘেরা ঘর নিয়ে যাবে এক অসীম মায়ার রাজ্যে। ১৯৬৫ সালে প্রথম এই শিল্পকর্ম তৈরি করেন তিনি। এটা যেন অসীমের পানে ছুটে চলা। এখানে ৫ সেকেন্ডের বেশি থাকতে দেয়া হয় না। কারণ এটা নেশা ধরিয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৭
এমএন/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সিঙ্গাপুর এর সর্বশেষ