ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

‘যত দাবিয়ে রাখতে চাইবে, তত উপরে উঠবো’

আবীর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
‘যত দাবিয়ে রাখতে চাইবে, তত উপরে উঠবো’ ফাইল ছবি

আন্তঃসার্ভিস ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় নতুন রেকর্ড গড়ে স্বর্ণ জিতেছেন দেশের সেরা ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। নিজের রেকর্ডই আবার ভেঙেছেন।

আসলে বারবার নিজের রেকর্ডগুলোই ভাঙতে হচ্ছে তাকে। এ যেন নিজের সঙ্গে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।  

২০১৬ সালে ভারতের শিলং-গুয়াহাটিতে এসএ গেমসের দ্বাদশ আসরে প্রথম স্বর্ণপদক জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভারোত্তোলনে নতুন এক দিগন্তের সূচনা করা মাবিয়া বলেন, ‘আমি চাই নতুন কারো রেকর্ড ভাঙতে। নিজের রেকর্ড আর কত দিন ভাঙবো? সেই ২০১৪-তে অন্যের রকের্ড ভেঙেছিলাম। এরপর আর অন্য কারো রেকর্ড ভাঙা হয়নি। নিজের রেকর্ডই ভাঙতে হচ্ছে। আমিও চাই আমার রেকর্ড কেউ ভাঙুক, হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হোক। ’

সাফল্যের বিচারে অন্য বেশ কিছু ফেডারেশনকে পেছনে ফেলতে পারে ভারোত্তোলন ফেডারেশন। এবারের আন্তঃসার্ভিস ভারোত্তোলনও জাতীয় রেকর্ড হয়েছে ৮টি। তবে তেমন কোনও সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছে না ফেডারেশন এবং খেলোয়াড়রা। পরপর দুটি এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া তাই নিজেদের আক্ষেপের কথা জানালেন, জানালেন অপ্রাপ্তি এবং হতাশার গল্প।  

এত অপ্রাপ্তির পরও দমে যাওয়ার পাত্র নন ২০১৫ সালে কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপ সিনিয়র ও জুনিয়রে রৌপ্য পদক এবং যুব কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে সোনার পদক জিতে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়া মাবিয়া। নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার মিশনে অবিচল তিনি, ‘আমি এর আগেও বলেছি আমাকে কোনও সুবিধা দিক কিংবা না দিক, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক আমাকে নিয়ে। যত জায়গা থেকেই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হোক; আমি আমার কাজ করে যাবো। ’

‘আমি ভারোত্তোলক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। এখন আমার সেই পরিচিতি ধরে রাখতে যা যা করা প্রয়োজন আমি করছি। আমাকে যারা পছন্দ করেনি এখন তাদের আমি প্রমাণ দিচ্ছি। তাদের দেখিয়ে দিচ্ছি যে আপনারা না চাইলেও আমি আপনাদের সামনে আসবো। ভালো খেলবো। বেনিফিট ছাড়াও ভারোত্তোলনে ভালো করা যায় এটাই আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। ’

নিজের ফেডারেশন নিয়ে কোনও আভিযোগ নেই মাবিয়ার। তারা নিজেদের মত চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ক্রীড়াপরিষদ এবং অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছে না ফেডারেশন, এমনটাই জানালেন মাবিয়া বলেন, ‘ভারোত্তোলন ফেডারেশন নিজের যোগ্যতায় নিজের মর্যাদা ধরে রেখছে। অনেক ফেডারেশন আছে যেখানে কোনও না কোনও দূর্নীতি রয়েছে। তবে ভারোত্তোলনে এমন কোনও অভিযোগ নেই । আমরা নিয়মিতই ফলাফল দিয়ে আসছি কিন্তু আমাদের প্রতিই সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হচ্ছে। ‘

‘অনেক ডিসিপ্লিন আছে যারা এক বছর পারফর্ম করলে পরের বছর থেকে আর কোনও খবর থাকে না। আমরা ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছি। অনেক ডিসিপ্লিন বিভিন্ন গেমসে হিটেই আউট হয়ে যায়। তবে তারা ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। বিভিন্ন গেমসে অংশ নিতে যাচ্ছে। অথচ বিভিন্ন গেমসে আমাদের নাম বারবারই বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ’

এসব অনিয়মের প্রতি কড়া জবাব নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই দিতে চান বলে জানিয়েছেন মাবিয়া, ‘দেশের বুদ্ধিজীবিদের যেভাবে হত্য করা হয়েছিল, দেশকে পঙ্গু করে দিতে, ঠিক সেভাবে ভারোত্তোলন যারা টিকিয়ে রাখতে পারে সেসব খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের ধারণা আমাদের সুযোগ-সুবিধা না দিলে আমরা এখান থেকে সরে যাবো। তবে হচ্ছে উল্টোটা, আমরা দাঁতে দাঁত চেপে নিজেদের উন্নতি করে যাচ্ছি। তাদের সফল হতে দেব না। আমরা আরও শক্ত হয়ে যাই। আমাদের যতই দাবায় রাখতে চেষ্টা করবে আমরা ততই উপরে উঠবো। ’

‘অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থাকার পরও ভারোত্তোলনের প্রতিযোগিগতা হয় একটি স্টোর রুমের মতো জায়গায়। এখানে কোনও সুযোগ-সুবিধা নাই। এটাতো স্পোর্টস অথরিটির জন্য লজ্জার। আমরা আর্ন্তজাতিক পর্যায় যে পরিমাণ শিরোপা এনে দিয়েছি; তারপর আমাদের এভাবে থাকার কথা না। ’

বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ইভেন্টে ভারোত্তোকদের পাঠাতে অনীহার কথাও জানিয়েছেন মাবিয়া। তিনি বলেন, ‘কোনও গেমসের সুযোগ আসলে বলে ভারোত্তোলন বাদ দাও। অথচ এমন ডিসিপ্লিনে ১১-১২ জন খেলোয়াড় পাঠানো হয় যারা বারবার হিটেই আউট হয়ে ফিরে আসে। বিভিন্ন গেমসে একজন পাঠায়, দুইজন পাঠায় না। ইসলামিক গেমসে আমরা চারজন যেতে চেয়েছিলাম। আমাদের দুজনকে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। আমরা বলেছিলাম আমরা নিজ খরচে যাব। তবুও আমাদের পাঠানো হয়নি। বিভিন্ন স্কলারশিপে আগেই ভারোত্তোলনকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ’

নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে একদিন ভারোত্তোলন স্বমহিমায় উজ্জ্বল হবে এমনটাই প্রত্যাশা মাবিয়ার। একদিন বদলে যাবে সব দৃশ্যপট সেই সুদিনের আশায়ই নিজের সেরাটা দিয়ে যাবেন, চালিয়ে যাবেন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
এআর/এমএইচএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।