নারায়ণগঞ্জ: বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে খ্যাতি ছিল নারায়ণগঞ্জের কৃতি ফুটবলার মোনেম মুন্নার। তাকে বলা হতো বাংলাদেশ ফুটবল টিমের ‘প্রাচীর’।
তাঁর অকালে চলে যাওয়াটা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য সতীর্থদের। সেই সঙ্গে রয়েছে নানা আক্ষেপ। মুন্নার স্মৃতি ধরে রাখতে কিছু করতে না পারার ব্যর্থতাও পীড়া দেয় তাদেরকে। চরমভাবে অবমূল্যায়নের অভিযোগও তাদের।
বৃহস্পতিবার মোনেম মুন্নার দশম মৃত্যুবার্ষিকী। এদিন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে পৃথক কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, মুন্নার নামে কিছু করার বিষয়ে বহুবার চেষ্টা করেছি। তবে সরকারীভাবে কোন উদ্যোগ না থাকায় তা ফলপ্রসু হয়নি। একজন খেলোয়াড় সে যে দলেরই মতাদর্শী হোক না কেন তিনি গোটা দেশের। মুন্নার জন্য নারায়ণগঞ্জ ওসমানী স্টেডিয়ামের একটি প্যাভিলিয়ন নামকরণের দাবি ছিল। কিন্তু এখনো সেটা হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য গোলাম গাউস বলেন, মুন্না একজন ফুটবলার হিসেবে প্রতিটি ফুটবলারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। তার অকাল মৃত্যুতে নারায়ণগঞ্জ ফুটবল অনেকদূর পিছিয়ে পড়েছে। তার মতো একজন অভিভাবককে নারায়ণগঞ্জবাসী হারিয়েছে।
মোনেম মুন্নার নামে নারায়ণগঞ্জে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার উদ্যোগী হলে এ বিষয়টার সমাধান করা সম্ভব।
প্রয়াত ফুটবলার মুন্নার দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে জিমখানার সোনালী অতীত ক্লাবে দুঃস্থদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ কর্মসূচি পালিত হবে। বিকেলে শহরের ইসদাইরস্থ ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে মোনেম মুন্না স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া প্রয়াত মোনেম মুন্নার বাসভবনেও মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য ১৯৮১ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল দিয়ে আত্মপ্রকাশ করা মোনেম মুন্না ক্যারিয়ারের (১৯৮৭-৯৭) অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন আবাহনীতে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলেন। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত খেলেছেন জাতীয় দলে। ১৯৯৯ সালের রমজান মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। সেখানেই কিডনি সমস্যা ধরা পড়ে। ২০০০ সালের মার্চে ব্যাঙ্গালোরে বোন শামসুন নাহার আইভীর কিডনি তার দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ম্যানেজারের ভূমিকায় লড়াকু মুন্না আবারও মাঠে ফেরেন। ২০০৪ সালে দেহে ক্ষতিকারক ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। ২০০৫ সালের ২৬ জানুয়ারি গুরুতর অসুস্থ মুন্নাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় তিন সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টায় না ফেরার দেশে চলে যান এক মৌসুমে (১৯৯১ সালে ২০ লাখ টাকা) পারিশ্রমিকের রেকর্ড গড়া এ ফুটবলার।
বাংলাদেশ সময় : ১৩৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫