ঢাকা: সাড়ে ২১ লাখের অধিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে গিনেজ বুকে নাম লেখাতে চান বাংলাদেশের ক্রীড়া সংগঠকেরা।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের বেশি বেশি প্রচার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা।
মোট ২১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮০ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের জাতীয় পর্যায়ের খেলা শুরু হচ্ছে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি)।
এই আয়োজন নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে টুর্নামেন্ট আয়োজিত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৫০৯টি। এতে অংশ নিচ্ছে ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৬৫৩ শিক্ষার্থী। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৪৩১টি। খেলোয়াড়ের সংখ্যা ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৭ জন শিক্ষার্থী।
টুর্নামেন্ট দু’টির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘চলো সবাই স্কুলে যাই’।
প্রথমবার ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯৮ জন ছাত্র অংশগ্রহণ করে।
২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ১০ লাখ ৩৩ হাজার ১৯২ জন ছাত্র ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে ১০ লাখ ১৫ হাজার ৭০ জন ছাত্রী, ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯২৬ জন ছাত্র ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৬১৭ জন ছাত্রী অংশ নেয়।
২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন ছাত্র ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৪৩৭ জন ছাত্রী এবং ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮ জন ছাত্র ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৮ জন ছাত্রী অংশ নিয়েছিল।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মেস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, সংখ্যার দিক থেকে বিবেচনা করলে এই টুর্নামেন্ট দুটি বিশ্বের সর্ব বৃহৎ টুর্নামেন্ট, এটাকে ছোটদের বিশ্বকাপও বলা যায়।
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল বিশ্বের সব থেকে বড় টুর্নামেন্ট উল্লেখ করে বাফুফে সহ-সভাপতি বাদল রায় বলেন, এত বড় টুর্নামেন্ট গিনেজ বুকে যাওয়া উচিত, যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। পৃথিবীর কোন জায়গায় তৃণমূল পর্যায় থেকে এমন খেলা হয় না।
গিনেজ বুকের রেকর্ড গড়তে হলে আবেদনসহ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
বাদল রায় বাংলানিউজকে বলেন, গিনেজ বুকের রেকর্ডের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ বলেন, এত বড় টুর্নামেন্ট গিনেজ বুকে যাওয়ার ঘাটতি কেবল প্রচার, প্রচারের উপর গুরুত্ব দিয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রাথমিক শিক্ষা সচিব।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার স্মৃতি ধরে রাখতে ষষ্ঠবারের মতো বঙ্গবন্ধু এবং পঞ্চমবারের মতো বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের এই আয়োজন করেছে সরকার।
খুদে শিশুদের আর্ন্তজাতিকমানের খেলোয়াড় তৈরিতে জাতীয় পর্যায়ে বাছাই করে বাফুফেতে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান বাদল রায়।
বাফুফে’র সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম বলেন, এখান থেকে কীভাবে ভালো খেলোয়াড় তৈরি করা যায় তার পরিকল্পনা তৈরি করেছি। ২০/২৫ জন বা তার বেশি শিক্ষার্থীকে বাফুফে’র একাডেমির আওতায় নিয়ে আসবো, বিশ্বমানের খেলোয়াড় তৈরিতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়া হবে।
খুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার ইতিহাস ধরে রাখা ও পড়ালেখার পাশাপাশি শারীরিক গঠন এবং বিশ্বে আরও এগিয়ে নিতে চান মন্ত্রী।
‘ক্রিকেটে কয়েকটি দেশ খেলছে, ফুটবলে কয়েকশ’ মানুষ খেললে বিশ্বে প্রচার পাবে। কলসিন্দুরের মেয়েরা ইতোমধ্যে দৃষ্টি কেড়েছে, আরও কোনো স্কুল প্রচার পাবে। ’
টুর্নামেন্টে যে সকল শিশু ভালো ফলাফল করবে তাদের অনেকেই ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৩, পরবর্তীতে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সুযোগ পাবে বলে আশা করে মন্ত্রী বলেন, কোনো এক সময় তারা জাতীয় পর্যায়েও খেলবে। তারা দেশ-বিদেশে খেলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে, দেশের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে আসবে।
শিশুদের নিয়ে এই আয়োজনে আর্ন্তজাতিক সংস্থা ইউনিসেফ আর্থিকভাবে সাহায্য করতে চায় বলে জানান মন্ত্রী ফিজার।
জাতীয় পর্যায়ে চূড়ান্ত পর্বের খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী খেলার উদ্বোধন করবেন। জাতীয় পর্যায়ের এ খেলা চলবে ১০-১৫ ফেব্রুয়ারি।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্ট দুটির ফাইনাল খেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করবেন বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী।
শুরুর কথা:
‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন’ এ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে লেখাপড়ার পাশাপশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা, কাবিং কার্যক্রম, ফুটবল, ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলাধুলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। ২০০৯ সালে ঢাকা বিভাগে আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এ প্রতিযোগিতা ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু হয়ে উপজেলা, জেলা, এবং বিভাগীয় পর্যায়ে, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে সর্বমোট ১ হাজার ৭৫৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এবং মোট ১৪ হাজার ৬৩টি দল অংশগ্রহণ করে।
প্রতিযোগিতার ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট এসএমসি, স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও ক্রীড়ানুরাগী ব্যক্তিবর্গ, ইউপি চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, সদস্য ও মন্ত্রীগণ সহায়তা করেন।
এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য প্রতি বছর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট’ নামে প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণা দেন। এর প্রেক্ষিতে ২০১০ সাল খেকে সারাদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট’ চালু করা হয়।
পরবর্তীতে সর্বসম্মতিক্রমে ২০১১ সাল থেকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৬
এমআইএইচ/এমজেএফ