ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

আমি ফ্রান্সকেই এগিয়ে ‍রাখবো: কায়সার হামিদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৮
আমি ফ্রান্সকেই এগিয়ে ‍রাখবো: কায়সার হামিদ কায়সার হামিদ/ছবি: শোয়েব মিথুন

ঢাকা: অনেকটা অম্ল-মধুর অনুভূতি নিয়েই রাশিয়া বিশ্বকাপ উপভোগ করছেন ৮০-৯০’র দশকে বাংলাদেশ ফুটবলের প্রাণভ্রমরা কায়সার হামিদ। প্রিয় দল ব্রাজিলের বিদায়ে যেমন তার ভক্তহৃদয়ে বিরহের সানাই বেজেছে, তেমন দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের হাল না ছাড়া ফুটবলে তার খেলোয়াড়ি হৃদয় ভরে উঠেছে হর্ষে। আর ফ্রান্সের গতিময় ফুটবল তাকে করেছে মুগ্ধ।

কায়সার হামিদের চোখে এবারের ব্রাজিল দলটি বেশ পরিপক্ব ছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না বলেই নাকি ৫ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনালের ওই লড়াইয়ে অভিশপ্ত কাজানে ব্রাজিলের হারের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে বেলজিয়ামের ‌সোনালি প্রজন্ম।

কেন অভিশপ্ত? 

এই কাজানেই এবারের আসর থেকে বিদায় নিয়েছে ফুটবলে সবসময়ের তিন ফেভারিট জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। বেলজিয়ানদের বিপক্ষে সেদিন দ্বিতীয়ার্ধে চোখ ধাঁধানো খেলা খেলেও সেলেসাওরা হেরে যায় ২-১ গোলের ব্যবধানে।
 
তাই যারপরনাই ব্যথিত নন্দিত সাবেক এই অধিনায়ক। ‘আমি মর্মাহত। কেননা আমি ব্রাজিল সমর্থক। ব্রাজিল খুব পরিপক্ব একটি দল ছিল। কিন্তু ভাগ্য ওদের সঙ্গে ছিল না বলেই সেদিন বেলজিয়ামের বিপক্ষে সুযোগ পাওয়ার পরেও তা কাজে লাগাতে পারেনি। পক্ষান্তরে বেলজিয়াম সুযোগ কাজে লাগিয়ে জয় তাদের পক্ষে নিয়ে নিয়েছে।
কায়সার হামিদ/ছবি: শোয়েব মিথুন 
দক্ষিণ কোরিয়াকে তিনি বাহবা দিচ্ছেন দাপুটে ফুটবলে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মান বধ করেছে বলে। বাংলানিউজের সঙ্গে একান্তে আলাপকালে মনে হলো ২৭ জুন কাজান অ্যারেনার সেই ম্যাচটি যেন আজও তার চোখে লেপ্টে আছে। আর জাপানকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ২ জুলাই শিরোপা প্রত্যাশী বেলজিয়ামের সঙ্গে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল না ছাড়ার লড়াই করেছে তাই।           
 
‘এবারের বিশ্বকাপটা আমার কাছে এজন্য ভালো লেগেছে যে ছোট দলগুলো ভাল খেলেছে। বিশেষ করে জাপান ও কোরিয়ার কথা বলবো। সত্যি ওরা অসাধারণ খেলেছে। কোরিয়ার মতো দেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের  ধরাশায়ী করেছে এটা আমার কাছে চমৎকার লেগেছে। জাপানও দারুণ খেলেছে। ওদের শেষ ম্যাচে তারা বেলজিয়ামকে যেভাবে বিপর্যস্ত করেছে এটা ছিল অসাধারণ। দুই গোলে এগিয়ে থাকার পরেও তাদের কিছু ভুল ছিল হয়তো, সেজন্য শেষ পর্যন্ত লিড ধরে রাখতে পারেনি। তারপরেও আমি বলবো জাপান ভালো ফুটবল খেলেছে। আশা করি এশিয়ান দলগুলো সামনে ভালো খেলবে। ’
 
প্রকারান্তরে আর্জেন্টিনা প্রসঙ্গে তাকে ততটা উচ্চকণ্ঠ মনে হলো না। কারণ একটাই। দলটি নিতান্তই মেসিনির্ভর ছিল। ঠিক এ কারণেই আলবিসেলেস্তারা পা হড়কাবে সেটা তিনি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন।  ‘আর্জেন্টিনার কথা বলবো না। ওরা খুব একটা গোছালো খেলা উপহার দিতে পারেনি। খুব একটি ভালো দলও ছিল না। মেসিনির্ভর ছিল। ওরা যে ফাইনালের আগেই হোঁচট খাবে বোঝা যাচ্ছিল। ’
কায়সারের সঙ্গে কথা বলছেন মহিবুর 
কিন্তু পরাশক্তি জার্মানির গ্রুপপর্ব থেকেই চলে যাওয়াটা তিনি ঠিক মেনে নিতে পারেননি। অভিজ্ঞ ম্যানুয়েল নয়্যার, সামি খেদিরা, মেসুত ওজিল, টনি ক্রুস, মারিও গোমেজ, থমাস মুলার এবং জেরমে বোয়েতাং, ইউলিয়ান ড্রাকসলার ও টিমো ভার্নারের উপস্থিতি সত্ত্বেও গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায়ে অবাক হয়েছেন।
 
‘জার্মানিকে নিয়ে সবাই প্রত্যাশা করেছিল যে ওরা ভালো করবে। তারা ওভারঅল সাইডও ভালো ছিল। কিন্তু তারা তিনটি খেলাতেই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এটা আমরা জার্মানদের কাছ থেকে আশা করিনি। তাদের আরো ভালো খেলা উচিত ছিল। ’

তবে ফরাসি সৌরভ ছড়িয়ে উড়ন্ত বেলজিয়ামকে মাটিতে নামিয়ে গ্রিজম্যান, এমবাপ্পে, পগবা, উমতিতিরা যেভাবে ফাইনালে উঠেছে তাতে তাদের যোগ্য বলেই আখ্যা দিলেন ১৯৮৬, ৮৭, ৮৮  সালে মোহামেডানকে হ্যাট্টিক শিরোপো এনে দেওয়া এই স্টপার ব্যাক। দলটির মাঠের দখলেও তিনি বিস্মিত। ১৫ জুলাই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ফাইনালের মহারণে জয়ী হতে পারলেই দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেতে পারবে দিদিয়ের দেশঁমের শিষ্যরা। প্রথম শিরোপা ঘরে তুলেছিল আজ থেকে ২০ বছর আগে (১৯৯৮)।
 
ম্যাচটিতে প্রতিপক্ষ হিসেবে ফরাসিরা পেয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের অন্তিম মুহূর্তে মারিও মান্দজুকিচের গোলে প্রথম ফাইনালের স্বাদ পেলো ইউরোপের অদম্য এ দলটি। এরআগে বিশ্বকাপ সাফল্য বলতে তাদের ঝুলিতে ছিল সেমিফাইনাল। সেটাও ওই ১৯৯৮ সালেই। এবার ফাইনালে অপ্রতিরোধ্য ফ্রান্সকে হারাতে পারলেই কেল্লাফতে। নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবে ফিফা বিশ্বকাপ। নিজেরাও প্রথমবারের মতো স্বপ্নের শিরোপায় চুমু খাবে।
 
তবে এই লড়াইয়ে  শ্রেয়তর দল হিসেবে ফরাসিদেরই এগিয়ে রাখছেন কায়সার হামিদ। ‘আমি মনে করি ফ্রান্স যোগ্যতর দল হিসেবেই ফাইনালে উঠে এসেছে। এবং ফ্রান্স দলটাও খবু ভালো। এমবাপ্পেসহ আরও যারা ফরাসি দলে খেলছে গোলকিপার, ডিফেন্স, মিডফিল্ড এবং স্ট্রাইকিং লাইন। অত্যন্ত চমৎকার খেলেই তারা ফাইনালে উঠেছে। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ফাইনালে আমি তাদেরই এগিয়ে রাখবো। তবে ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এবং আমরা চমৎকার একটি ফুটবল দেখবো। ’
 
বিশ্বকাপ আলোচনায় উঠে এলো বাংলাদেশের প্রসঙ্গও। কবে খেলবে লাল-সবুজের দল? প্রতিবেদকের করা এমন প্রশ্নে বেশ চিন্তিত দেখালো সাবেক এই মোহামেডান দলপতিকে। ‘বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আমি নিজেও চিন্তিত। এক সময় আমরা যে দলকে ৭, ৮ গোল দিতাম তারা এখন আমাদের উল্টো হারায়।  সাফ ফুটবলে আমরা আমরা তলানিতে পড়ে গেছি। সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে চিন্তা করবো কীভাবে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়। এরপরে বিশ্বকাপ। আমি মনে করি বাংলাদেশর ফুটবল এখন আইসিইউতে। ’
 
তাহলে প্রতিকার কী?  উত্তরে স্কুল ও বয়সভিত্তিক ফুটবলের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন দেশের এক সময়ের কাঁপন ধরানো এই ফুটবলার। ‘এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে তৃণমূল থেকে শুরু করতে হবে। স্কুল ফুটবলের ওপর জোর দিতে হবে এবং সেখান থেকে বের করে আনতে হবে। বিশ্বকাপে এমনও দল খেলছে যাদের লোকসংখ্যা আমাদের একটি জেলার থেকেও কম। তারা যদি খেলোয়াড় তৈরি করতে পারে আমরা কেন পারবো না? অদূর ভবিষ্যতে স্কুল ফুটবলের ওপর জোর দিতে হবে। অনূর্ধ্ব-৬, অনূর্ধ্ব-৮ ও অনূর্ধ্ব-১০ দলগুলোকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। এখান থেকেই খেলোয়াড় বের করে নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া আমি কোনো পথ দেখছি না। নতুন করে আমাদের শুরু করতে হবে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৮
এইচএল/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।