ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে অন্যরকম শুক্রবার

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৮
ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে অন্যরকম শুক্রবার ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠের ফুটবল খেলা

ময়মনসিংহ: প্রতিদিনই খেলা হয় সেখানে তবে শুক্রবারটা ভিন্নরকম। ময়মনসিংহের সার্কিট হাউজ মাঠের দৃশ্যপট প্রতি সপ্তাহান্তেই পাল্টে যায়। মাঠে চলে খেলা, চারদিকে উপচেপড়া দর্শক। দেখে মনে হয় চলছে যেন ক্রীড়া উৎসব। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোনো বিরতি নেই।

রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান না থাকলে এ মাঠে ঠিকই থাকে খেলা। প্রাণচাঞ্চল্যই সার্কিট হাউজ মাঠের বৈশিষ্ট্য।

ময়মনসিংহ যে খেলার শহর তার প্রমাণ প্রতি শুক্রবারের সার্কিট হাউজ মাঠ।

সংস্কৃতির শহর ময়মনসিংহের মানুষের দুর্বলতা ক্রীড়া সংস্কৃতি। জেলা সদরের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র সার্কিট হাউজ মাঠ। যার দু’পাশেই গড়ে উঠেছে ক্রীড়া সংগঠনগুলোর নিজস্ব ঠিকানা। পূর্ব পাশে রয়েছে ক্রীড়াপল্লি। খেলার মাঠকেন্দ্রিক এই ক্রীড়াপল্লি ঐতিহ্যবাহী। আর সেই ঐতিহ্যের সাথে রয়েছে ক্রীড়ামোদী মানুষের উচ্ছ্বাস।

প্রতি শুক্রবার তাই সার্কিট হাউজ মাঠের চারদিকের সংখ্যাতীত মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়। অবস্থানগত কারণেই সার্কিট হাউজ মাঠটি গুরুত্বপূর্ণ। যা নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের কেন্দ্র।

ব্রহ্মপুত্রের উপকণ্ঠে দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন পার্ক জয়নুল উদ্যান ময়মনসিংহ শহরবাসীর সকাল-সন্ধ্যার মিলনমেলা। ছুটির দিনে বিকেলে পার্কটিতে থাকে লোকারণ্য। সার্কিট হাউজ মাঠের খেলা উপভোগ করতে তারা ভিড় করেন এখানে।
ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠের ফুটবল খেলাশহরের সার্কিট হাউজ মাঠে ক্রিকেট বা ফুটবল টুর্নামেন্ট না থাকলে শহরের পাড়া-মহল্লার ক্লাব বা সাধারণ খেলোয়াড়দের খেলা লেগেই থাকে। খেলা ছাড়া ফাঁকা থাকে না এই মাঠ। তবে শুক্রবার দিন খেলা মানেই মাঠের চারপাশে দর্শক সারি। যেন লোকারণ্য।  

বর্ষায় কাদামাটিতে এখন চলছে ফুটবল। বিশ্বকাপের উচ্ছ্বাস যেন এখনো শেষ হয়নি এ মাঠে। পেশাদার খেলোয়াড়দের খেলা না থাকলেও বিভিন্ন বয়সী মানুষজন শুক্রবার খেলোয়াড় হয়েই মাঠে নেমে পড়েন। শিশু থেকে শুরু করে বিবাহিত কিংবা বয়স্করাও দল বেঁধে মাঠ কাঁপাতে শুরু করেন। বহুমাত্রিক খেলাধুলা নিয়ে জমজমাট হয়ে ওঠে মাঠ।  

এ মাঠে দাঁড়িয়েই আলাপ হচ্ছিল শহরের মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তপন চন্দ্র দে’র সঙ্গে। সপ্তাহের প্রতিটি দিন পড়াশুনা আর স্কুল এই নিয়েই বুঁদ হয়ে থাকতে হয়। ফলে শুক্রবারের জন্য রীতিমতো অপেক্ষায় থাকতে হয় তাকে। সাত সকালেই হৈ হৈ করে মাঠে নেমে পড়ে সব বন্ধুরা মিলে।

কখন যে সময় চলে যাবে সেই হুঁশ নেই। চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি সহপাঠীদের সঙ্গে দুরন্তপনায় মেতে ওঠে ওদের ঠিকানা শহরের সার্কিট হাউজ মাঠ। কাদামাখা শরীরে উচ্ছ্বাস নিয়ে তপন বলছিলো, প্রতিদিন তো স্কুল থাকে। ক্লাস, পরীক্ষা আর প্রাইভেটের কারণে তো খেলাধুলার সময়ই পাই না। অপেক্ষা করি কখন শুক্রবার আসবে। শুক্রবার হলেই স্কুলের বন্ধুরা একসাথে এসে গ্রুপ করে খেলি, কখনো ফুটবল আবার কোন সময় ক্রিকেট।

তপনদের মতো শিশু-কিশোর বা বয়স্ক সবারই খেলাধুলার জন্য একমাত্র ভরসা এই সার্কিট হাউজ মাঠ। শরীরচর্চার পাশাপাশি একটি শিশুর মানসিক ও সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রেও খেলাধুলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

এসব বিষয় মাথায় রেখেই নিজের শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্য প্রতি শুক্রবার সূর্য উঁকি দিতেই বাসা থেকে হেঁটে হেঁটে সার্কিট হাউজ মাঠে চলে আসেন অনেক অভিভাবেকরা। তাদেরই একজন শফিকুল ইসলাম। পেশায় ব্যবসায়ী শফিকুল বলেন, ‘শহরের বেশিরভাগ বাসার সামনেই খোলা জায়গা নেই। খেলার মাঠও নেই। ফলে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ফুটবল খেলছি। এতে করে আমার সন্তানের মানসিক ক্লান্তিবোধ যেমন দূর হবে তেমনি শারীরিকভাবেও চাঙ্গা থাকবে। বাপ-ছেলের সম্পর্কের গাঁথুনিও আরো মজবুত হচ্ছে।  

এই মাঠেই কথা হচ্ছিল শহরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম আহমেদের সঙ্গে। মেসে থেকে পড়াশুনা করা এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই দিনটি ছাড়া আমরা কেউই ফ্রি থাকি না। আগের দিনেই পরিকল্পনা করে সবাই এক হয়ে শুক্রবার চলে আসি সার্কিট হাউজ মাঠে খেলতে। খেলায় আমাদের প্রতিপক্ষ থাকে অন্য আরেকটি মেসের বন্ধুরা। ছুটির দিনের শুরুটা এভাবেই খেলাধুলা করে কাটাই। আর বিকেলে জয়নুল উদ্যানে ঘুরে বেড়াই।  

‘শুধু ভোরের নির্মল বাতাসের জন্যই নয়, জীবনের প্রয়োজনেই মাঠে এসে ফুটবল খেলি। সবুজ দুর্বা ঘাসে দাবড়ে ছুটি। এতে শরীরচর্চার পাশাপাশি ঝরঝরে তাজা বাতাসে সজীব-সতেজ হয়ে ওঠে মন’ একদমে যেন বলে যাচ্ছিলেন শহরের সেনবাড়ি এলাকা থেকে এখানে আসা আব্দুর রউফ নামের এক স্কুল শিক্ষক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৮ 
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।