ছোটপর্দার গণ্ডি পেরিয়ে তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে ফেলেছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। এর মধ্যে ‘প্রজাপতি’ ও ‘তারকাঁটা’ মুক্তি পেয়েছে।
মূলত টিভি নাটক নির্মাণের মাধ্যমেই ক্যারিয়ার শুরু করেন স্বপ্নবাজ মানুষ রাজ। নির্মাণ করেছেন একাধিক ধারাবাহিক ও শতাধিক একক নাটক ও টেলিছবি। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার ছবি ‘তারকাঁটা’। ছবিটি মুক্তির পর নানা ধরণের আলোচনা-সমালোচনা হয়। এই আলোচনা আর সমালোচনা প্রসঙ্গে রাজ কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো এখানে।
‘তারকাঁটা’ ছবি নির্মাণের শুরুর প্রথম থেকে কী কী প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসতে হয়েছে আপনাকে?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : শুরুর দিকে আসলে তেমন কোনো বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়নি আমাকে। আমার প্রযোজক তৈরি ছিলেন। তিনি আমার কাছে ছবির গল্প শুনতে চাইলে আমি তাকে দুটি গল্প শোনাই। তিনি দুটি গল্পই পছন্দ করেন। অন্য গল্পটি নিয়ে প্রথমে কাজ করতে চান প্রযোজক। কিন্তু ওটা নির্মাণের জন্য প্রচুর বাজেট দরকার। তাই আমরা বেছে নেই ‘তারকাঁটা’।
ছবির পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের গল্পটা শুনতে চাই।
রাজ : গল্প অনুযায়ী প্রথমে আমি ঠিক করি শুভ ও মিমকে। বড় বোনের চরিত্র নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। প্রযোজক মৌসুমীর নামটা প্রস্তাব করেন। আমি বললাম, তিনি যদি রাজি না হন। প্রযোজক মৌসুমীর সময় বরাদ্দের দায়িত্ব নিলেন। গল্প শোনানো হলো মৌসুমীকে। প্রথমে তিনি রাজি হননি। পরে তাকে গল্প ও তার চরিত্রের গুরুত্ব বোঝানোর পর তিনি রাজি হন।
ডা. এজাজ ও ফারুক আহমেদকে সবাই কমেডি অভিনেতা হিসেবে চেনে। তাদেরকে খল চরিত্রে নিলেন কী ভেবে?
রাজ : নির্মাতার কাজ হলো ঝুঁকি নেওয়া। আমিও ঝুঁকি নিলাম আর কি! নতুন কিছু দেখানোর ইচ্ছা ছিলো। এজাজ ভাইকে মনে হয়েছে পারবেন। তিনি খুব ভালো করেছেন। ফারুক ভাইয়ের চরিত্রে তিনি তার মতো করে চেষ্টা করেছেন।
ছবিটি মুক্তির পর অনেকে এটাকে গাননির্ভর ছবি বলছেন। আপনার যুক্তি কী?
রাজ : গান নির্ভর হয়েছে এটা সত্যি। একটা গান তিনবার ব্যবহার করেছি গল্পের প্রয়োজনে। গানগুলো একটু বেশিই হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কিছু দর্শক ইতিবাচক ছিলেন, কিছু দর্শক নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এমনও অনেক ছবি আছে যেখানে ৮ থেকে ১০টি গান ব্যবহার করা হয়। সেগুলো নিয়ে তো এমন কথা শুনি না।
অনেকেই 'তারকাঁটা'র বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ তুলেছেন...
রাজ : প্রথম কথা হচ্ছে এটা নকল ছবি নয়। বলিউডের হিন্দি ছবি 'আশিকি-টু'র একটি গানের দৃশ্যের সঙ্গে বিদ্যা সিনহা মিমের একটি অভিব্যক্তি মিলে গেছে। এটা মিলে যেতেই পারে। 'আশিকি-টু'র সঙ্গে ‘তারকাঁটা’র গল্পের কোনো মিল নাই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা-আলোচনার ঝড় বয়ে গেছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
রাজ : এ বিষয়ে আমি পুরোপুরি ইতিবাচক। কারণ আলোচনা-সমালোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক। আমি চাই সবসময় গঠনমূলক সমালোচনা হোক। এর মাঝখানে একটা কথা আছে। সমালোচনাটা করেছেন কারা? ফেসবুকে পাঁচশ'টা কমেন্টসের মধ্যে ৫০টা নেতিবাচক হলেও ৪৫০টা ইতিবাচক মন্তব্য পেয়েছি। ফেসবুক স্ট্যাটাসের নেগেটিভটা শুধু সবার চোখে পড়ছে, ইতিবাচকও তো অসংখ্য। সেটা নিয়ে তো কেউ আলোচনা করেননি। প্রতি সপ্তাহে দুটি ছবি মুক্তি পায়, আমরা তো কোথাও কোনো ছবি নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস, অনলাইন রিভিউ, ব্লগ পাইনি। ‘তারকাঁটা’ নিয়ে এত হচ্ছে কেন? ‘তারকাঁটা’ মুক্তির পরের সপ্তাহে দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। আমরা কি ওই দুটি ছবির নাম জানি? বা ফেসবুক, ব্লগ, অনলাইন রিভিউতে এসব ছবির উপস্থিতি পেয়েছি? প্রতিটি ছবি নিয়ে 'তারকাঁটা'র মতো এমন রিভিউ আর ফেসবুক ঝড় যদি নিয়মিত হয়, তাহলে বাংলা ছবির উন্নতি অনিবার্য। আমি চাই এটা নিয়মিত হোক।
নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস আপনার ছবিটি নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে আপনিও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফেসবুকে। কিন্তু এতে করে কি চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষতি হলো না?
রাজ : কারো ছবি যদি আমার খারাপ লাগে তাহলে আমি তাকে ফেসবুকে ইনবক্সে কিংবা ফোন করে আমার প্রতিক্রিয়া জানাবো। এভাবে জনসমক্ষে মন্তব্য করবো না। কারণ আমিও নির্মাতা, তিনিও নির্মাতা। তিনি আমার বড়, আমি তার কাছ থেকে শিখবো। কিন্তু আমি কী শিখলাম? তার ছবি মুক্তি পেলে আমাকেও স্ট্যাটাস দিতে হবে তার ছবির বিরুদ্ধে! এটা কি উচিৎ? জানি উচিৎ না। এতে করে দর্শকদের কাছে আমরা নিজেদের ছোট করছি।
অনেকেই আপনার ছবিকে নাটক-টেলিছবি বলে...
রাজ : আমার ছবি যখন সেন্সর ছাড়পত্র পায় তখন আমাকে পূর্ণ্যদৈর্ঘ্য ছায়াছবি হিসেবেই সনদপত্র দেওয়া হয়। ওখানে টেলিছবি বা নাটক উল্লেখ থাকে না। আর আমার জানা মতে, যারা সেন্সর বোর্ডের সদস্য তারা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিষ্ঠিত নির্মাতা, অভিনেত্রী, গবেষক, চলচ্চিত্র কর্মী, প্রযোজক। তারা যেহেতু এটাকে চলচ্চিত্র হিসেবে সনদপত্র দিচ্ছেন তাহলে নিশ্চয়ই এটা টেলিছবি বা নাটক না। ছোটপর্দা থেকে গিয়ে আমরা যারা ছবি নির্মাণ করছি, তাদের কাজ নিয়ে অনেকে আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন যে, এটা নাটক-টেলিছবির মতোই! আমি যদি নাট্যনির্মাতা না হয়ে সরাসরি ছবি নির্মাণ করতাম তাহলে সেটা নাটক হলেও ছবি হিসেবেই ভাবা হতো।
পরবর্তী ছবি কবে শুরু করছেন?
রাজ : শিগগিরই শুরু করবো। এবং সেটা গ্রেডিং করে বানাবো। নির্দিষ্ট একটি শ্রেণী বা গোষ্ঠীর জন্য বানাবো। একটা ছবি বানাবো অভিজাত শ্রেণীর জন্য, আর একটি ছবি পরিচালনা করবো সবশ্রেণীর জন্য।
বর্তমানের ব্যস্ততা...
রাজ : আসছে রোজার ঈদের জন্য একটি নাটক নির্মাণ করলাম। নাম 'রিটার্ন'। এটি প্রচার হবে চ্যানেল আইতে। এখন ছবির কাজ নিয়ে ভাবছি। এ ছাড়া অন্যান্য কিছু কাজের পরিকল্পনা করছি।
সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
রাজ : আপনাদেরও ধন্যবাদ। বাংলানিউজের জন্য শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশ সময় : ১৫০৩ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৪