পানিতে ভীষণ ভয় মেয়েটির। শহুরে মেয়ে, তার ওপর বয়স একেবারেই কম।
‘স্বামী কেন আসামী’ চলচ্চিত্রটি দেখতে বসলে ওই দিনের কথা স্পষ্ট মনে ভাসে মুশফিকা তিনার। কত আগের কথা! তবুও স্পষ্ট মনে আছে। হাসতে হাসতে তিনা বললেন, ‘ভারতের জি বাংলা চ্যানেলে এই ছবিটা মাঝে মধ্যে দেখায়। আমার খুব হাসি পায়। তখন অভিনয়ের কিচ্ছু পারতাম না। তার ওপর চারদিকে এত মানুষ! বড় ক্যামেরার সামনে শট দিতে হবে- আমি রীতিমতো ভয়ে ছিলাম। কীভাবে যে কাজটা করেছিলাম!’
ছবিটি নিয়ে অবশ্য সন্তুষ্টিরও জায়গা রয়েছে তিনার। বললেন, ‘এখন যারা অভিনয়ে আসছে, তাদের কেউ শাবানা ম্যাডামকে পায়নি। আমি পেয়েছি। এটা আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি আমাকে খুব পছন্দ করতেন। ’
‘স্বামী কেন আসামী’ ছাড়াও ২০০৬ সালে টোকন ঠাকুরের ‘ব্ল্যাক আউট’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। নানা জটিলতায় এটি এখনও মুক্তি পায়নি। তবে গত বছর ছবিটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির যৌথ আয়োজনে ‘সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র উৎসব’-এ প্রদর্শিত হয়েছে। ঐ উৎসবে বিগত এক দশকে নির্মিত প্রায় ৫৫০টি চলচ্চিত্রের মধ্যে বাছাইকৃত ২০টি ছবি দেখানো হয়।
২০০৪ সালের বিনোদন বিচিত্রা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিজয় মুকুট জেতেন তিনা। বেশকিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করে অল্প সময়েই দর্শকপ্রিয়তা পেয়ে যান। কিন্তু ২০০৭ সালে চিত্রনায়ক রিয়াজকে বিয়ের পর মিডিয়া অধ্যায় একেবারেই ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। একেবারেই হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা। নো ক্যামেরা, নো মডেলিং। কেবল নাচই করে গেছেন। নাচের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন বাফায়। সেখানেই বাচ্চাদেরকে নাচ শেখাতেন, শেখাচ্ছেন এখনও। তার ভাষ্য, ‘বিয়ের পর মনে হলো- অনেক হয়েছে, আমার আর কিছু লাগবে না। মাকে সবসময় দেখে এসেছি ঘরোয়াভাবে জীবনযাপন করতে। মনে হলো, মায়ের মতো করেই সংসারে মনোযোগী হবো। ’
বিনোদন অঙ্গন থেকে তিনার দূরে থাকা কষ্ট দিয়েছে রিয়াজকেও। অভিনয়ের ব্যাপারে তিনি বরাবরই উৎসাহ দিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনার যুক্তি ছিলো, ‘অভিনয় সম্পর্কে আমার জ্ঞান একেবারেই শুন্যের কোঠায়। এর জন্য চর্চা ও জানাশোনা দরকার। আমার তো অভিনয়ের মূলভিত্তিই প্রস্তুত না। কীভাবে অভিনয় করবো?’
রিয়াজ তবু হাল ছাড়েননি। অবশেষে এ বছরের আগস্টে শহীদ-উন-নবীর ‘সুগার ফ্রি চকলেট কেক’ নামের একটি নাটকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনা। সঙ্গে রিয়াজও। তিনা বললেন, ‘এই কাজটি করার আগে রিয়াজ টানা দুই-তিন দিন ধরে আমাকে বুঝিয়েছে। ও বলেছে- অভিনয় এমন আহামরি শক্ত কোনো বিষয় না। তুমি বাসায় আমার সঙ্গে যেভাবে কথা বলো, ক্যামেরার সামনে সেভাবেই কথা বলবে। একদম সাবলীল। ওর কথায় কাজটি করেছি। গল্পটাও অবশ্য খুব ভালো লেগেছিলো। ’
তিনার এখনকার সিদ্ধান্ত- ভালো গল্প পেলে তিনি মাঝে মধ্যে নাটকে হাজিরা দেবেন। তবে হ্যাঁ, সঙ্গে রিয়াজের সম্মতি অবশ্যই থাকতে হবে। তার সাফ কথা, ‘আমি কাজ-পাগল না। তবে ভালো কাজের পাগল। সেই মানের গল্প হলে আমি অভিনয় করবো। দশটা না, একটা হলেও কাজটা যেন ভালো হয়। ’
আগামীতে নিজে একটি নাচের স্কুল গড়তে চান তিনা। তবে এখনই নয়। তিনা বললেন, ‘এর জন্য আরও অভিজ্ঞতা দরকার। আরও প্রস্তুত হতে হবে। বাস্তবায়ন যত দেরি হোক, স্বপ্নটা এখনই দেখে রাখা ভালো নয় কি!’
(ওপরের ছবিতে) রিয়াজের সঙ্গে তিনা
বাংলাদেশ সময় : ১৮১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৪