বাবা সংগীত পরিচালক আনোয়ার জাহান নান্টু, চাচা পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ও ইফতেখার জাহান এবং বড় ভাই পরিচালক আরিফ ইস্পাহানি জাহান। তাই সংস্কৃতিমনা পরিবারে বেড়ে ওঠা সাগর জাহানেরও ক্যামেরার পেছনে কাজ করাটা যেন অবধারিত ছিল।
তবে শুরুর দিকে বেশকিছু জীবনমুখী গান লিখেছেন ও গেয়েছেন সাগর জাহান। ১৯৯৭ সালে সাউন্ডটেক থেকে প্রকাশিত হয় তার লেখা, সুর ও গাওয়া গান নিয়ে ‘বেকার’ নামের একটি অ্যালবাম। প্লেব্যাক করেছেন পাঁচ বছর। ‘বিদ্রোহী বধূ’, ‘ভাবীর সংসার’, ‘সুখ শান্তি’, ‘পরিস্থান’, ‘আল হেলাল’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘বিধান’, ‘নির্দয়’, ‘শিমুল পারুল’ ছবিগুলোতে কণ্ঠ দেন।
প্রশ্ন এলো গানে থাকলেন না কেন? সাগর জাহানের উত্তর, ‘গানকে পেশা হিসেবে নিতে চাইনি। এটা আমার শখ। তাছাড়া ছবির গানের জন্য যুতসই গলা কিংবা স্টাইল আমার ছিল না। জীবনমুখী গান পছন্দ করতাম। ছোটগল্প লিখে বন্ধুদের শোনাতাম। ’
অনেক বছর লেখালেখির পর আরমান ভাই চরিত্র নিয়ে নাটক লেখা শুরু করেছিলেন নাট্যকার-নির্মাতা সাগর জাহান। নাটক প্রচারের পর প্রায় সবমহলেই ‘আরমান ভাই’ চরিত্রটি জনপ্রিয়তা পায়। তার আরেক জনপ্রিয় চরিত্র ‘সিকান্দার বক্স’। অনেক নাটকের ভিড়ে এ দুটি চরিত্রের কথা দর্শক আলাদাভাবে জানে।
সাগর জাহানের শৈশবের এক যুগ কেটেছে পুরান ঢাকার চকবাজারে। সেজন্যই হয়তো ‘আরমান ভাই’ চরিত্রটি সৃষ্টি করতে পেরেছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুরনো ঢাকায় ছোটবেলার অনেকটা সময় কেটেছে আমার। অনেকদিন ধরে লেখালেখি করার পর ভেবে দেখলাম একটি চরিত্র নিয়ে কোনো নাটক লিখলে কেমন হয়। এই চিন্তা থেকেই আরমান ভাই এবং পরে সিকান্দার বক্স লেখা শুরু করলাম। ’
তার মতে, আরমান ভাই চরিত্রটি স্বশিক্ষিত মানুষের গল্প। যার মনে কোনো খাদ নেই। কথা বলে সহজ-সরল এবং যে কারও প্রয়োজনে এগিয়ে আসে। আর সিকান্দার বক্স নাটকটি ব্রা²ণবাড়িয়ার ভাষায় লিখেছেন তিনি। আরমান ভাই চরিত্রে জাহিদ হাসান এবং সিকান্দার বক্সের ভ‚মিকায় মোশাররফ করিমের অভিনয় জনপ্রিয় হয়েছে। তাদেরকে নতুনভাবে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে নাটক দুটি। সাগর জাহান বলেন, ‘এ দুটি চরিত্রে জাহিদ ভাই ও মোশাররফ ভাই প্রাণবন্ত অভিনয় না করলে হয়তো নাটকগুলো এতোটা গ্রহণযোগ্যতা পেতো না। আরমান ভাই ও সিকান্দার বক্স আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। ’
আরমান ভাই ও সিকান্দার বক্স সিরিজের সিক্যুয়েলগুলো নির্মাণের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সাগর জাহান বলেন, ‘মানুষকে হাসানো অনেক কষ্টের কাজ। আমাকে দর্শকরা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আর পুরান ঢাকার পরিচিতিজনরা আমার কাজ সহজ করে দিয়েছেন অনেক কিছু। ’
সাগর জাহানের পুরো নাম শাহরিয়ার জাহান সাগর। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় গ্রাফিক ডিজাইনার ও ম্যানেজার পদে তিন বছর চাকরিও করেছেন সাগর জাহান। মূল নেশা ছিল লেখালিখি। সেদিকেই মনোযোগ দিয়েছেন। তার নাটক লেখার শুরুর গল্পটা বেশ মজার। ২০০৪ সালে নির্মাতা অরণ্য আনোয়ারের সঙ্গে দেখা তার। ততদিনে চাকরিও ছেড়েছেন। তাই বন্ধুদের উৎসাহে পান্থ শাহরিয়ার ও অরণ্য আনোয়ারের সঙ্গে নাটক নির্মাণের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে আড্ডার ছলে বলা গল্প শুনে লেখা শুরু করতে বলেন তারা। অরণ্য আনোয়ার বলেন, ‘যেভাবে গল্পটা শুনিয়েছো ওইভাবে গল্পটা লিখে ফেলো। ’ এরপর আর পেছনে তাকাননি, লেখা শুরু করেন সাগর জাহান।
অরণ্য আনোয়ারের পরিচালনায় তার লেখা প্রথম নাটক ছিল ‘নীলগ্রহ’। এতে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ ও অপি করিম। এরপর ‘স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন’, ‘হ্যালো কে’, মিস্টিরিয়াস জার্নি’ নাটকগুলো তার জন্য লিখেছেন। এরপর তো সকাল আহমেদ, রায়হান খান, ফজলুর রহমান. কৌশিক শংকর দাস, চয়নিকা চৌধুরী, মনিরুল ইসলাম মাসুম, মাসুদ মহিউদ্দিনসহ অনেক নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেন।
সাগর জাহানের লেখা উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছে ‘প্রার্থনা’, ‘বৃষ্টি কাল কাঁদবে’, ‘মানুষগুলো এমন কেন’, ‘এক কোটি ১৫৬০ টাকা’, ‘৯৬ হাওয়ারস’, ‘স্বপ্নের শুরু’, ‘বর্ষার দুইদিন’, ‘লাল টি-শার্ট’। ২০০৯ সালে তিনি পরিচালনা করেন ‘দূরের মেঘ’ নাটকটি। এরপর তার পরিচালনায় ‘বোরকা’, ‘শেষ ভালোবাসা শুরু’, ‘ভায়োলিন’, ‘আংটি’, ‘জেসমিন ও তার একগুচ্ছ ফুল’, ‘চুপ ভাই কিছু বলবে’, ‘দুটো রাত পাশাপাশি’, ‘চুপ ভাই কিছু বলবে’, ‘টাপুর টুপুর অপেরা’ নাটকগুলো দর্শক উপভোগ করেন।
আগামীতে বাংলা ছবি নির্মাণ করতে চান সাগর জাহান। তিনি বললেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার আমার ভক্ত ও শুভাকাক্সক্ষীদের ভালোবাসা। তাদের জন্য লিখে যেতে চাই। এ বছরের শেষভাগে বিনোদনমূলক একটি ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেবো। এটা দেখে যেন হেসে লুটোপুটি খায়। ’
বাংলাদেশ সময় : ১৭২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪