ঝুমুরকে চেনেন তো? নাফিসা কামাল ঝুমুর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ছেন।
কেন মডেলিং-অভিনয় করেন তিনি? প্রশ্ন ছিলো এমন। এ প্রশ্নের উদ্দেশ্য এমন নয় যে, তার মডেলিং-অভিনয়ে প্রবল আপত্তি আছে প্রশ্নকর্তার। তার ইচ্ছের গতিবিধি জানাই লক্ষ বরং। ঝুমুর ভাবলেন কিছুক্ষণ। কথায় কথায় জড়িয়ে নিলেন পরিবার, বন্ধুশ্রেণী, ক্যাম্পাসের পরিচিত-অপরিচিত মুখ। কিন্তু এই যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো, দিন গেলেই নতুন বিজ্ঞাপনের মিটিং, শুটিং, টিভি পর্দা, দৌড়ে বেড়াচ্ছেন ঢাকার এ-মাথা থেকে ও-মাথা; এতোকিছু কেন করছেন তিনি- সহজ করে বলতে পারলেন না। ফ্যাকাসে উচ্চারণে শুধু বললেন, ‘ফ্যাসিনেশন থেকে। ’
নিজের ভেতরে এই ‘ফ্যাসিনেশন’ প্রথম কবে টের পেলেন ঝুমুর? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তখনও। বিবিএ করছেন। পড়েন তৃতীয় বর্ষে। সাল ২০১২। ‘ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল’ প্রতিযোগিতায় হাজার প্রতিযোগীর একজন নাফিজা কামাল ঝুমুর। নানান ঝক্কি, অভিজ্ঞতা, চমক পেরিয়ে সেরা দশে তিনি। কিন্তু ভাগ্য অপ্রসন্ন। বাদ পড়েননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ছিলো, এ অজুহাতে নিজেই প্রতিযোগিতা ছেড়ে চলে আসেন। তবে যে ক’মাস ছিলেন প্রতিযোগিতায়, দারুণ সব বিষয়আশয় শিখেছিলেন। পুঁজি বলতে ওই অভিজ্ঞতা। ‘ফ্যাসিনেশন’ গাঢ় হলো। চলতে থাকলো পড়ালেখা। শুরু হলো কাজ।
গ্রামীণফোন, মোজো, প্রাণ, রবি-সহ বেশকিছু পণ্যের বিজ্ঞাপন করলেন। ‘প্রচুর ফটোশুট করেছি ওই সময়’- জানালেন ঝুমুর। মাঠে নেমে পড়লেন একেবারে কোমর বেঁধে! কিছুতেই হার মানতে রাজি নন যেন। করেও ফেললেন ‘হার না মানা নারী’। ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর বিজ্ঞাপনচিত্র এটি। গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে তিনি ফটোসাংবাদিক। দৌড়ান হরতাল-অবরোধ-সহিংসাকে তুড়ি মেরে। ঝুমুর বলতে চান, ‘এ কাজ দিয়েই লোকজন চিনেছে আমাকে। ’
তামিম ইকবালের সঙ্গে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর আরেকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে দেখা গেছে তাকে। দেখা গেছে ভিটের বিজ্ঞাপনচিত্রেও। এভাবেই বিজ্ঞাপনচিত্র, ফটোশুট, বিলবোর্ডে দিন ভালোই কাটছিলো যখন, তখন তার দেখা মিললো অভিনয়ে। ‘প্রাপ্তি’, ‘পুনরাবৃত্তি’, ‘৪২০ গরম পানি লেন’- টেলিছবিগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের হয়ে উঠেছেন ঝুমুর। এয়ারটেলের পরের টেলিছবি ‘মাংকি বিজনেস’-এও আছেন তিনি।
তবে মডেলিংয়ে যতটা দক্ষতা দেখাতে পারছেন তিনি, বড় গলায় বলতেও পারছেন- অভিনয়ের প্রশ্নে সেটা হচ্ছে না। তিনি নিজেও দিব্যি বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা। এ কারণেই বলছেন, ‘এমবিএ শেষ হলেই কোনো নাট্যদলে যোগ দেবো। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্চনাটকের দল আছে। তাদের সঙ্গে অনেক আগেই কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অতো সময় ছিলো না হাতে। পড়ালেখা পর্ব শেষ হোক। তারপরই এ ইচ্ছেটা পূরণের জন্য নেমে পড়বো। ’
এতো কাজের ফিরিস্তি একপাশে সরিয়ে দিলে, ঝুমুর মেয়েটা বড্ড ঘরোয়া। নিজেকে বলতে চান, ‘মা নির্ভর একটা মেয়ে’। নিজের প্রত্যেকটা জিনিসে মায়ের ছোঁয়া না থাকলে যেন চলেই না তার! ঝুমুর প্রচন্ড রকম শহুরেও। ঢাকাতেই জন্ম, বেড়ে ওঠা; এ শহরের প্রতিটা অলিগলি চেনা ভীষণ। চেনা অলিগলি সাঁতরে একদিন সবার চেনামুখ হয়ে উঠবেন- প্রত্যাশা ঝুমুরের।
বাংলাদেশ সময় : ১৫৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫