ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

সুপারওম্যান শ্রাবণ্য!

বৃষ্টি শেখ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৫
সুপারওম্যান শ্রাবণ্য! তৌহিদা শ্রাবণ্য/ ছবি:নূর /বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মা-বাবার কাছে তৌহিদা শ্রাবণ্য হলেন সুপারওম্যান! তাদের মেয়ে চাইলে নাকি সবই করতে পারেন! ‘চাইলে সব করতে পারি’ কথাটা তিনি বিশ্বাস করেন। ছোটবেলা থেকে সেটা করে দেখানোরও চেষ্টা করেছেন।

ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হওয়া থেকে শুরু করে নাচ-গান, আবৃত্তি এবং বিতর্ক সবকিছুতেই অংশগ্রহণ করে ভালো করার চেষ্টা থাকতো তার। যেটা করার সিদ্ধান্ত নেন তা করতেই হবে তার, করেনও।  

 

এতো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা এবং মডেলিংয়ের পাশাপাশি সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে অনার্স মার্কস নিয়ে পাস করা, একবারেই এফপিএস এবং বিসিএস পাস করায় বাবা-মা, পরিবার আর বন্ধুদের বিশ্বাস ইচ্ছা থাকলে সবই করতে পারেন তিনি। সুপারওম্যান খেতাবটা আছে বলেই পেশায় চিকিৎসক শ্রাবণ্য এই চ্যানেল থেকে ওই চ্যানেলে ছোটাছুটি করেন। কিন্তু হাঁফিয়ে ওঠেন না! ‘আমি সুপারওম্যান না? এই ব্যস্ততা বরং উপভোগই করি। কখনও হয়তো খাওয়ার সময়টুকুও থাকে না তবুও ব্যস্ত থাকতে এবং নিজেকে ব্যস্ততার মাঝে রাখতে আমার ভালো লাগে। সপ্তাহে দু’দিন হলেও ওয়ার্কআউট করি। হয়তো সেজন্যই আমি শক্তি পাই। ’ 

 

শ্রাবণ্যর ছোটবেলা কেটেছে রংপুর শহরের কাছের কুড়িগ্রামে। এখানে তার নানা বাড়ি, দাদা বাড়িও। এখানকার আকাশ, বাতাস, পথ-ঘাট, পথের দুই ধারের কৃষ্ণচূড়া গাছ সবকিছু তার কাছে খুব চেনা, খুব আপন। এখানকার প্রতিটা কোণ চষে বেড়িয়েছেন তিনি। ‘সেভেন স্টার নামে আমরা সাত বান্ধবী ছিলাম। সবাই ছিলাম দুষ্টের সেরা। এটা আমার শৈশবের বড় একটি অংশ। ’  

 

ছোটবেলায় সত্যিই অনেক দুষ্ট ছিলেন শ্রাবণ্য। একবার তো মা দুষ্টুমির কারণে শাস্তি হিসেবে হাত বেঁধে রেখেছিলেন! ‘ওই ঘটনা মনে পড়লে এখন হাসি পায় তার। মেয়ে হিসেবে আমি অনেক চঞ্চল, একটু অস্থিরও। তবে আমি কিন্তু অ-নে-ক লক্ষী মেয়ে!’

খেলাধুলার বেলায় ক্রিকেট বরাবরই শ্রাবণ্যর বেশি প্রিয়। ক্রিকেটা বোঝেন, খেলেছেনও। ছোটবেলায় খেললে তাকে রাখা হতো উইকেট কিপার। এখন চলছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। এ উপলক্ষে জিটিভির প্রতিদিনের অনুষ্ঠান ‘ক্রিকেট ম্যানিয়া’ উপস্থাপনা করছেণ তিনি। প্রতিদিন রাত ৮টা ৪০ মিনিটে এই চ্যানেলে সরাসরি পাওয়া যায় তাকে। ‘এখন পর্যন্ত আমার সবচেয়ে সাড়া পাওয়া কাজ এটাই। ’

 

উপস্থাপনায় শ্রাবণ্যর পথচলা শুরু চ্যানেল২৪-এর ‘লাইফস্টাইল ২৪’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোই তার জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেছে। এর সুবাদে তিনি ডাক পেয়ে যান শাহরিয়ার শাকিলের পরিচালনায় ‘ট্রাভেলার্স স্টোরি’র (চ্যানেল নাইন) জন্য। তাই চ্যানেল২৪-এর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বললেন, ‘আমাকে সবাই অনেক সহায়তা করেছেন। তাদের মধ্যে শাপলা ভাইয়ের কথা না বললেই নয়। তার জন্যই মূলত উপস্থাপক হতে পেরেছি। এখনও তার পরামর্শ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সবসময় বলেন, নিজের ওপর আস্থা রাখো, মেধার পুরস্কার মিলবেই। ’

‘লাইফস্টাইল২৪’ ছাড়া ‘লাইভ মিউজিক ইন চ্যানেল২৪’, ‘উইনি ক্রিকেট টুর্নমেন্ট’ (চ্যানেল২৪) এবং ‘মিউজিক ইউফোনি’ (এনটিভি), ওয়েডিং স্টোরি (এসএটিভি), মিউজিক স্টেশন আরটিভি লাইভ (আরটিভি) অনুষ্ঠানগুলো উপস্থাপনা করেছেন শ্রাবণ্য। ধীরে ধীরে তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ‘সবসময় যে কাজটাই করেছি চেষ্টার সর্বোচ্চটুকু ঢেলে দিয়েছি। আমার চরিত্রের বড় বৈশিষ্ট্য হলো হাল ছেড়ে না দেওয়া এবং শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়া। ’

 

উপস্থাপনার কাজটা দারুণ উপভোগ করছেন শ্রাবণ। তাকে বেশি দেখা যায় সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে। এগুলোতে উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হয়। ‘কথার পিঠে কথা বলে একের পর এক প্রশ্ন করতে পারাই অনেক আনন্দের। এখন তো লাইভে এতো অভ্যস্ত হয়েছি যে, ধারণকৃত অনুষ্ঠানগুলোও লাইভ করে ফেলি! রিটেক নিতে হয় না। ’

শ্রাবণ্য দেখতে সুন্দরী। এজন্য দর্শকরা ফোন করে অতিথির চেয়ে তার সাথেই কথা বলতে আগ্রহ দেখায় বেশি। ‘এটা আমাকে কিছুটা হলেও বিব্রত করে। বিশেষ করে অতিথির সামনে এমন মুহূর্ত বিপদে ফেলে দেয়!’ কাজ করতে গিয়ে এমন আরও মজার স্মৃতি আছে। এমনও হয়েছে লাইভে টক-ব্যাক (যে যন্ত্রের সহায়তায় উপস্থাপক প্রযোজকের কথা শোনে) খুলে গেছে! এ কারণে বিরতির সময় পেরিয়ে গেলেও হুশ হয়নি তার! পরে চিত্রগ্রাহকের হাতের ইশারায় বিরতিতে গেছেন। ‘ট্রাভেলার্স স্টোরি’র কাজ করতে গিয়ে নেপালের ফিওয়া লেকের স্ট্যান্ডআপ প্যাডেল করতে গিয়ে প্যাডেল চালিয়ে ফিওয়া লেকের বহুদূর চলে গিয়েছিলেন। তখন প্রকৃতির মাঝে এমনভাবে হারিয়েছিলেন যে, পেছনে কারও ডাক শুনতে পাইনি। সূর্যাস্ত হওয়ার পর তার টনক নড়ে!

উপস্থাপনার চেয়েও নাটক আর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব বেশি পেয়েছেন তৌহিদা শ্রাবণ্য। কিন্তু তার খুব একটা ইচ্ছা নেই। তবে একটা কথা আছে! শুনুন তার মুখে, ‘মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অনিমেষ আইচ, অমিতাভ রেজা, মেজবাউর রহমান সুমন ও রেদওয়ান রনির মতো পরিচালকদের ডাক পেলে এবং গল্প পছন্দ হলে ভেবে দেখবো। এরই মধ্যে এক গুণী পরিচালকের ডাক পেয়েছি। গল্পটাও অসাধারণ। কথা মোটমুটি চূড়ান্ত। এই ছবিটি করতে পারি। ’

 

ডানা মেলে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ওড়ার ইচ্ছা ছিলো বলে ছোটবেলায় বৈমানিক হতে চেয়েছিলেন শ্রাবণ্য। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় মেডিকেলে সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ঢাকা ইউনিভার্সিটির বায়োক্যামেস্ট্রিতেও সুযোগ পেয়েছিলেন। মঞ্চনাটক করার ইচ্ছা থেকে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতেই। কিন্তু মা-বাবার ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হন তিনি।

অবশ্য এখন চিকিৎসকের চেয়ে উপস্থাপক হিসেবে শ্রাবণ্যর পরিচিতি বেশি। তিনি এখনকার জনপ্রিয় মডেল ও উপস্থাপিকাদের মধ্যে অন্যতম। অবশ্য বিনোদন অঙ্গনে চিকিৎসা জ্ঞান কাজে এসেছে শ্রাবণ্যর। দেশের এক ফ্যাশন আলোকচিত্রী ফুসফুসজনিত রোগে ভুগছিলেন। বহু চিকিৎসা করিয়েও ঠিক হয়নি। শ্রাবণ্য ও তার স্যারের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই আলোকচিত্রী। এরপর তিনি কিছু ছবি তোলেন শ্রাবণ্যর। সেগুলোই ফ্যাশন আঙিনায় তাকে পরিচিতি এনে দেয়। এরপর অনেক ফ্যাশন হাউস, ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ ও বিলবোর্ডে দেখা গেছে তার ছবি।  

শ্রাবণ্য কাজগুলোর বড় সমালোচক তার কাছের মানুষেরা। যারা নিয়মিত তার অনুষ্ঠান দেখেন। ‘তাদেরকে বলে দেওয়াই আছে অনুষ্ঠান দেখলে কাগজ-কলম নিয়ে বসে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে হবে। আমাকে অনেক সুন্দর লেগেছে কিংবা অনুষ্ঠানটি ভালো হয়েছে- এমন সৌজন্য শুনতে চাই না। নিজের ভুল না ধরতে পারলে শিখব কীভাবে? শেখার কোনো শেষ নেই। ’ 

শ্রাবণ্যর ডাক্তারি পড়াশোনারও শেষ নেই! এফপিএস-এর প্রথম ভাগ শেষ। এখন পড়ছেন দ্বিতীয় ভাগ। চিকিৎসা নাকি উপস্থাপনা, কোনটাকে প্রাধান্য দেন তিনি? ‘চিকিৎসা আমার পেশা আর উপস্থাপনা আমার নেশা। যে কাজে থাকি সেটাতেই ডুবে যাই এবং শতভাগ মনোযোগ দেই। তবে হ্যাঁ, মানের সাথে কখনও আপোস করি না। চিকিৎসা মহান পেশা, অনেক পড়শোনা করতে হয়। দুটার মধ্যে কখনও তুলনা চলে না। চিকিৎসা সেবা আমার দেহ আর উপস্থাপনা আমার অক্সিজেন। হা হা হা...। ’ 

 

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ