অমৃতা আমাদের আশেপাশে দেখা একটি চরিত্র। শান্ত, নম্র, অভিজাত৷ তিনি বিবাহিতা।
এর আগে কলকাতায় অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’ ছবিতে অভিনয় করেন জয়া। তার হাতে আছে সৃজিত মুখার্জির ‘রাজকাহিনি’ এবং নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কণ্ঠ’ এবং এপারের ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি টু’। নতুন নতুন ছবি আর ভূত নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জয়া।
বাংলানিউজ : ভূতে বিশ্বাস করেন?
জয়া : না। তবে আলোতে যেমন আমরা গাড়ি, রাস্তাঘাট, মানুষ দেখতে পাই। আলোতে যদি এতো কিছু থাকে অন্ধকারেরও নিশ্চয়ই অনেক কিছু আছে! জীবন আছে, আকার আছে। আমাদের আশেপাশেই হয়তো তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে! এটা যদি হয়ও তাতে আমার আপত্তি নেই। মিলেমিশে থাকবো। ওরা যেমন বিরক্ত করে না আমাদের, আমরাও যেন বিরক্ত না করি ওদেরকে। ওঝা দিয়ে যেন না তাড়াই (হাসি)!
বাংলানিউজ : ভূত দেখলে কি করবেন?
জয়া : খুব ভালো লাগবে! একটা অভিজ্ঞতা হবে। আমার ভয়-টয় কম আছে। আমার একটু ভয় পাওয়া উচিত!
বাংলানিউজ : ছোটবেলায় ভূতের গল্প পড়তেন?
জয়া : হ্যাঁ, শৈশবে ভূতের গল্প প্রচুর পড়তাম। কাজিনদের ডেকে ডেকে ভয়ঙ্কর সব ভূতের গল্প ফাঁদতাম। তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। তখন থেকেই আমার এই চালবাজি ছিলো। এখন যদি আমার ছোট বোন (কান্তা) বা কাজিনকে বলি ওগুলো মিথ্যে গল্প ছিলো, ওরা তো অাকাশ থেকে পড়ে! বলে, ‘জয়া আপু এসব তুমি মিথ্যে বলতে? কি বলো! আমরা ভাবতাম তো সত্যি। আমরা তো এখনও বিশ্বাস করি ভূত আর জিনের গল্প সত্যি!’ আমি আসলে খুব সুন্দর আর বিশ্বাসযোগ্য গল্পগুলো বলতাম তো, বোঝার উপায় থাকতো না। এখন বোনদেরকে জানাই ওসব কিন্তু আমার চাপাবাজি ছিলো। ওদের চেয়ে বয়সে বড় ছিলাম তো, তাই ওরা অনায়াসে আমার কথা বিশ্বাস করতো। ভয়ের গল্প বলে ওদেরকে ভয় দেখাতাম। মজাও লাগতো। কিছু নিজের বানানো, কিছু সংগ্রহ করা; সব মিলিয়ে সেসব গল্প সাজাতাম।
বাংলানিউজ : ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’ ছবির উৎপত্তি কীভাবে?
জয়া : বাঙালির সঙ্গে ভূত বা ভয়ের বিষয়ের পুরনো একটা সম্পর্ক আছে। ওখান থেকেই সম্ভবত গল্পটা ভাবা। ভূতের গল্প হলেও বাঙালিয়ানায় ভরপুর থ্রিলার আছে এতে । বাঙালির সঙ্গে আধুনিক বাঙালির দ্বন্দ্বের বিষয় নিয়েই ছবিটা৷ ঘটনাগুলো এমনভাবে ঘটে, তাতে আরও জটিল হয়ে ওঠে সবকিছু। এটা পরাবাস্তব একটা কাজ। অদ্ভূত একটা গল্প বাস্তবিকভাবে ধারণ করা হয়েছে। এখানে ভূতটাকে ভয়ের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলানিউজ : ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’ ছবিতে অমৃতা চরিত্রে অভিনয়ের আগে কেমন প্রস্তুতি নিতে হয়েছিলো?
জয়া : একেবারেই না। পরিচালক ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, প্রাসঙ্গিক কোনো ছবি দেখবো কি-না। কিন্তু তিনি বললেন, ‘না, দরকার নেই। তুমি শুধু চরিত্রটার মধ্যে থাকো, নিজের মতো করে করো। আর কিছু চাই না। ’ তাই আলাদাভাবে কোনো প্রস্তুতি নেইনি। পরিচালকের ওপরই পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিলাম সব। তবে একটা রুটিনওয়ার্ক তো থাকেই আমার। যেমন বারবার পান্ডুলিপি পড়া। কাজের মধ্যে থাকা, আন্তরিকভাবে তা করা। আলাদা কোনো প্রস্তুতি ছিলো না।
বাংলানিউজ : ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী এর আগে ‘ফড়িং’ নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছিলেন। তার পরিচালনা কেমন লাগলো?
জয়া : খুব ভালো। আমার এ কাজটি করার আগ্রহের আরেকটি কারণ হলো ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর সঙ্গে কাজের সুযোগ পাওয়া। তার ‘ফড়িং’ দেখে অনেকের মতো আমিও মুগ্ধ ছিলাম। তাই তিনি যখন ডাকলেন সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না। মজার বিষয় হলো, সেটে আমি পরিচালকের উপস্থিতি টের পাইনি খুব একটা! তিনি সব চরিত্রের ভেতর ঢুকে সবাইকে ছোট ছোট করে গাইড করতেন। তার কৌশলটা হলো, যার যার ভেতরে যা আছে তা বাইরে বের করে এনে তার মতো উপস্থাপন করা। এটাই তার বিশেষত্ব।
বাংলানিউজ : ছোট পর্দায় ছবিটি মুক্তি পেলো। বড় পর্দায় মুক্তি পাবে না?
জয়া : জি বাংলা অরিজিনালস-এর একটা অংশ এটা। ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’ বড় পর্দায়ও মুক্তি পাবে। তবে এখনই নয়। আরও কিছু ছবি জড়ো করে হয়তো বড় পর্দায় প্রদর্শন করা পাবে, আমি এটুকুই জানি। তার আগে টিভিতে প্রিমিয়ার হয়ে গেলো। তবে বিজ্ঞাপন বিরতিতে ছবি দেখার সমস্যা তো থাকেই টিভিতে। কারণ এটা বিজ্ঞাপনের মাঝে দেখার মতো ছবি নয়। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখতে হয় এটা। কাজ করার সময়ই মনে হয়েছিলো, এ ছবির সঙ্গে সবাই নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে। প্রথম থেকে দেখা শুরু করলে দর্শকরা একাত্ম হবে। সঙ্গে ধাঁধার মধ্যে পড়বে এবং একটা অঙ্ক কষতে কষতে যাবে। তবে শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে যা হওয়ার কথা ছিলো বা দর্শক যা ভাবছে সেটা কোনোভাবেই হচ্ছে না! মজার বিষয় হলো, শেষটা একেবারেই ধারণা করা যাবে না।
বাংলানিউজ : দৃশ্যধারণ চলাকালীন কোনো ঘটনা আলাদাভাবে মনে পড়ে?
জয়া : চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে কান্নাকাটি করতে করতে চোখ-মুখ ফুলে গিয়েছিলো। তখন স্বাভাবিক দৃশ্যের কাজ করতে গেলেও সেটা ঠিক হতো না! আরেকটা মনে রাখার মতো ব্যাপার হলো, মধ্যরাতের একটা দৃশ্যের কাজ হযেছে মধ্যদুপুরে। আমাদের চিত্রগ্রাহক ইন্দ্রনীল মুখার্জি যে কীভাবে এটা করলেন ভেবে পাই না! দৃশ্যটা দেখে মনে হবে চাঁদের আলোয় কাজ করেছি। কিন্তু তখন ঘড়িতে দুপুর ১২টা এবং ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো গরম। আমরা কাজ করেছি উত্তর কলকাতার আলিপুরে।
বাংলানিউজ : ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’তে কাজ করে আপনার প্রাপ্তি কী?
জয়া : বড়মাপের একজন পরিচালক ও ভালো ভালো অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছি। ভালো একটা টিম ছিলো। নিঃসন্দেহে একটি ভালো ছবি এটা। ভালো কাজে অনুপ্রেরণা বেড়ে যায়, আমিও অনুপ্রাণিত হই। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, কাজটা আমার জন্য অবশ্যই ভালো হয়েছে।
বাংলানিউজ : ‘রাজকাহিনি’ আসবে কবে?
জয়া : কথা ছিলো ‘রাজকাহিনী’ ১৫ আগস্ট আসবে। কিন্তু সৃজিত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় তা পিছিয়ে যেতে পারে। তবে ওর ইচ্ছাশক্তি এমন দৃঢ় যে, কোনো বাধাই মানে না। আমার ধারণা, সময়মতো বের করে ফেলতে পারবে ও। এ ছাড়া ‘কণ্ঠ’র কাজ এখনও শুরু হয়নি। একটু দেরি হবে।
বাংলানিউজ : এখন দুই বাংলার শিল্পী এপার-ওপারে কাজ করছেন। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
জয়া : আমাদের এখান থেকে মিম ও মাহি যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করছে। আমি এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখি। এমন করতে করতেই আসলে ব্লেন্ডিংটা হয়ে যাবে। এটা বাংলা ভাষাভাষী দর্শকদের জন্য দরকার। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো হবে। তবে ভাগাভাগি বা আদান-প্রদান হতে সমানভাবে। শুধু ওদের বানানো জিনিস আমরা দেখে যাবো আর আমাদের ভালো ভালো কাজ ওরা কিছুই দেখবে না, আমি কোনোভাবেই সেটার পক্ষে নই। আমি এখনও যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করিনি। ওরা আমাকে একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবেই ডেকেছে। ওরা না ডেকে যদি লন্ডন বা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ডাকতো ছবির জন্য আর সেটা যদি আমার চরিত্র ও অবয়বের সঙ্গে যায় তাহলেও কিন্তু আমি কাজ করতে যেতাম। কলকাতা বলেও না, ভারতবর্ষ বলেও না; পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে যখনই ডাকুক, আমি কাজ করবো। শিল্পীর কোনো ভৌগলিক সীমা নেই। শিল্পীরা সব জায়গায় সবসময় কাজ করতে পারে।
বাংলানিউজ : সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি টু’ ছবির খবর কী?
জয়া : কিছু কাজ বাকি আছে। আগস্টে শেষ ধাপের দৃশ্যায়ন হবে। শুনেছি ঈদুল আজহায় এটা মুক্তি পাবে। এখানে আমার সহশিল্পী শাকিব খান ও ইমন। এর চিত্রনাট্য লিখেছেন রুম্মান রশীদ খান। ছেলেটা সম্ভাবনাময়।
বাংলাদেশ সময় : ২০০৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৫
জেএইচ