ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

জালালের তিন নম্বর পিতা!

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৫
জালালের তিন নম্বর পিতা!

যে হাত দিয়ে ‘পিতা’ জালালের মাথাটা কাছে ঝুঁকিয়ে আনে। চুমু খায়।

আদর করে। সেই হাতে রামদা উঠে আসে। সিগারেটে একটা টান, একটু ধোঁয়া ছাড়ে, পরপর আরও দু’টো টান, পায়ের নিচে পিষে মারে সিগারেট। তারপর যার সঙ্গে শত্রুতা, হয়তো জমিটা দেয়নি, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, নয়তো কথা শোনেনি। তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে, অবলীলায় কুপিয়ে, লাশ গুঁজে দেয় ইটভাটার তলায়। রক্ত-মাংস-হাড়-মজ্জা ধোঁয়া হয়ে উড়ে যায় চিমনি বেয়ে। জালালের চোখের সামনে সে তরুণীর ঘরের দোর এঁটে দেয়। কানে আসে তরুণীর আর্তনাদ, চিৎকার, আপত্তি, ঘৃণা।

সিনেমা হলে বসে এমন মোশাররফ করিমকে দেখে হকচকিয়ে যাবে দর্শক। কপালে পরপর কয়েকটা ঘন ভাঁজ পড়তে বাধ্য। মনে হবে, এ তিনি কেমন তিনি! আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত ‘জালালের গল্প’ ছবির চরিত্রকে মোশাররফ বলছেন, ‘এটি চরিত্রহীন চরিত্র!’ কিন্তু একেবারেই কি চরিত্রহীন? একটুখানি মানবিকতার মিশেলও কি নেই তাতে? মোশাররফ তো নিজেই স্বীকার করছেন, ‘শুধু একটা জায়গায় গিয়ে চরিত্রটি একটু ভাবে। ’ যখন এক কান দু’কান হয়ে ভাইরাল হচ্ছে, একটি যাত্রার মেয়েকে ধরে এনে তিনি পোষ্য বানিয়ে বাড়িতে রেখেছেন। মেয়েটা সন্তান প্রসব করেছে। সামনে নির্বাচন। এ খবর চাউর হয়ে গেলে, নির্বাচনে তার জেতা ভন্ডুল হয়ে যাবে। ফলে বাচ্চাটাকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই।

এখানে এসে চরিত্রটি ভাবে। ইটভাটা। দিনের আলো কমছে। বিরাট চিমনি বেয়ে ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে। একটু একটু করে উড়ে যাচ্ছে তার ভেতরের হিংস্রতাও। ওখানে ধরা পড়ে নিষ্ঠুর মোশাররফের মানবিকতা। খুঁজে পাওয়া যাবে আরও একটা দৃশ্য। রাতের বেলা, অনেকটা ধমকে, মৌসুমী হামিদকে সামনে বসিয়ে, যখন শোনায় তার আগের স্ত্রী স্বর্ণার গল্প; তখন মোশাররফের ভেতর-বাহির দু’টো দিক আলাদা হয়ে ধরা দেয় মুহূর্তেই। একটা দিক ভালোবাসে। আরেকটা দিক, ভালোবাসাকে ভয় পায় বলে ঘৃণা করে।

প্রিমিয়ারের দিন পুরো ছবি জুড়ে গুণে গুণে কয়েকবার দর্শকদের দু’টো হাত এক হয়েছে। বেজেছে করতালি। প্রতিটি করতালির কারণ মোশাররফ। প্রতিবারের মুগ্ধতার নাম মোশাররফ। আগেই তো বলেছিলেন, ‘এ ধরণের চরিত্র করতে ভালোই লাগে’, এ ভালোলাগাকে ভালোভাবেই উপস্থাপন করতে পারলেন তিনি। উতরে গেলেন। কিন্তু গতানুগতিক ‘মোশারফীয়’ ঢং থেকে একেবারেই যে বাইরে বেরুতে পারলেন, তা কিন্তু নয়। একটুখানি থেকেই গেলো। প্রশ্ন আসতে পারে, তাতে কি খুব ক্ষতি হলো? খুব নয়। কিন্তু মুহূর্ত যখন বেদনাদায়ক, তখন আক্রান্ত হওয়ার বদলে দর্শকের যদি হাসি পায়; সেটা খুশি হওয়ার মতো ঘটনা নয়।

সে যাই হোক, এক ‘জালালের গল্প’ মোশাররফ করিমকে আরও যে অনেকখানি এগিয়ে দিলো, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার দক্ষতা, মেধা শুধু সীমানার কাঁটাতারের সঙ্গেই আটকে-লেপ্টে সীমাবদ্ধ হয়ে রইলো না। তিনি হয়ে উঠলেন আন্তর্জাতিক। পর্তুগালের আভাস্কা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারকদের মুগ্ধ করতে পারলেন। পেলেন উৎসবের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার। মোশাররফের ক্যারিয়ারে তাই ‘জালালের গল্প’ নিঃসন্দেহে মুদ্রার ওপর সোনার প্রলেপের মতোই!

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ