ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

এখনও জসিম, ওইতো...

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৫
এখনও জসিম, ওইতো... চিত্রনায়ক জসিম

টিভির সামনে বসার সাপ্তাহিক তোড়জোড়। শুক্রবারের দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেলের পথে, তখন রক্ত-গরম করা মিউজিক ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে টিভিপর্দায় জসিমের নাম ভাসলে, কী যে উত্তেজনা! সাবধানে ভ্যানটা একপাশে রেখে, চালক বসে পড়ে গালে দু’হাত রেখে।

ক্ষেত থেকে উঠে আসে চাষা। ছোট্ট ঘরটায় গাদাগাদি করে বসে। একটা গল্পে ডুবে যাওয়ার এই যে নেশা, সেটা তীব্র দেখেছি হাফপ্যান্ট পরাদের মধ্যেও। এখনও মনে ভাসে, বেড়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারা কিছু আগ্রহী চোখ।

চিত্রনায়ক জসিম যখন মারপিট করে তাড়িয়ে দেন বস্তিউচ্ছেদকারীদের, গোল হয়ে ঘিরে হাততালি দেয় বস্তিবাসী। চরিত্রের নামটি ধরে মিছিল সাজায় তারা। টিভির সামনে যারা বসে, তাদেরও ঠোঁটে হাসি ফোটে। মনভুলে কেউ কেউ হাততালি দিয়েও ফেলে। সাপ্তাহিক এই আসরই তো সব নয়, পারিবারিক আয়োজনেও, ভিসিআর প্লেয়ার ভাড়া করে আনার আনুষ্ঠানিকতায়ও জসিম যে কতোখানি মিশে ছিলেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদা তুলে জরিপ, ‘কার ছবি আনা হবে?’ জসিমই জিতে যেতেন প্রতিবার। কেউ কেউ টাকা দিতেন এই শর্তে, ‘জসিমের ছবি বেশি থাকতে হবে। ’

আর সিনেমা হল? মারামারি-হৈ-হুল্লোড় করে টিকিট ‘জিতে আনা’র সেই স্মৃতিগুলো তো এখনও ফিকে হয়ে যায়নি। এতো কষ্ট, পরিশ্রম; উদ্দেশ্য তো একটাই- জসিমকে একটু দেখা যাবে পর্দায়। তার ফাইট, ম্যাচুউরড প্রেম, শোষিত শ্রেণীর হয়ে প্রতিবাদ; সেটা পেলে আগে-পরের কষ্ট কে মনে রাখে আর!

যখনকার ঘটনা বলা হচ্ছে, তখন নব্বইয়ের মাঝামাঝি। কাট টু শটে ২০১৫। বিনোদন এখন অনেক সহজ। আঙুলের আগায়। চাঁদা তুলে ভিসিআর ভাড়া করে আনার কোনো গল্প নেই। ‘সাপ্তাহিক ছবি’র আশায়ও বসে থাকা লাগে না। ক’টা শব্দ লিখে ‘এন্টার’ চাপলেই গোটা বিনোদন দুনিয়া হাজির! রুচিবোধ পাল্টেছে, অভিনয়-গল্প-সংকট-সম্ভাবনা। যদিও এতোদিনে বাংলা ছবি অনেক দূর যাওয়ার কথা ছিলো, যায়নি। একগাদা সমস্যা ইন্ডাস্ট্রির গায়ে লেপ্টে।

চিত্রনায়ক জসিম নেই ১৭ বছর হলো। নেট ঘাঁটলে জসিম সম্পর্কে খুব একটা তথ্য মেলে না। যারা তার সহকর্মী ছিলেন ওই সময়ে, কাছের লোক; তাদের বেশিরভাগেরই সিনেমাপাড়ায় যাতায়াত এখন খুব একটা নেই। কার এতো দায় পড়েছে ইউটিউব ঘেঁটে, এখানে ওখানে খুঁজে জসিমের ‘ঘোলা প্রিন্ট’-এর ছবি বসে বসে দেখার! কিন্তু দায় পড়ে। জসিম তো একটা অধ্যায়। অনুপ্রেরণার নাম, প্রতিবাদের নাম। ক্যালেন্ডারে ৮ অক্টোবর আসতেই, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জসিমের ছবি, স্মৃতিচারণা, বন্দনা।

অথবা যদি ভার্চুয়াল থেকে বেরিয়ে রিয়েল লাইফে আসা যায়, রেললাইনের দু’পাশ জুড়ে, মাঝেমধ্যে যে জনবসতি, হাট-দোকানপাট, চায়ের স্টল; এখনও সেখানে জসিম দেখা দেন। হঠাৎ করে টিভিপর্দায় জসিমের সংলাপ থমকে দেয় অনেককে, এখনও। তার পুরু গোঁফ, ভারী শরীর, মায়া মায়া মুখ; শ্রমজীবি, খেটে খাওয়ার মানুষের স্বপ্ন এখনও। তারা এখনও জসিমের সংলাপে খুঁজে পান সান্তনা, বাঁচার অনুপ্রেরণা।

আজ ৮ অক্টোবর। জসিমের মৃত্যুদিবস। ১৯৯৮ সালের এ দিনে চলে গিয়েছিলেন দুই শতাধিক ছবির এ নায়ক। শেষ হয়েছিলো একটি অধ্যায়। কিন্তু আসলেই কি শেষ হয়! জসিমরা থেকে যান চিরকাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৫
কেবিএন/এসও

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ