ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

অস্কারে সাদাদের বাজিমাত, কালোরা দুধভাত!

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
অস্কারে সাদাদের বাজিমাত, কালোরা দুধভাত!

‘অস্কারস সো হোয়াইট’ হ্যাশট্যাগ এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অন্যতম আলোচিত বিষয়। গত বছরের মতো এবারও অস্কারে সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী, সেরা পার্শ্ব-অভিনেতা ও সেরা পার্শ্ব-অভিনেত্রী বিভাগে মনোনীত হয়েছেন শুধুই শ্বেতাঙ্গ তারকারা।

একজনও কৃষ্ণাঙ্গ তারকা জায়গা পাননি এতে। এ কারণে চলছে সমালোচনা। কৃষ্ণাঙ্গ তারকা ও নির্মাতাদের কেউ কেউ ৮৮তম অস্কার অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন।

২০১৫ সালে কৃষ্ণাঙ্গ তারকাদের অনেকে প্রশংসিত কাজ দেখিয়েছেন। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য উইল স্মিথ (কনকুশন), ইড্রিস অ্যালবা ও আব্রাহাম আট্টাহ (বিস্টস অব নো নেশন), মাইকেল বি. জর্ডান (ক্রিড), ও’শিয়া জ্যাকসন জুনিয়র (স্ট্রেইট আউটা কম্পটন), জন বয়েগা (স্টার ওয়ারস: দ্য ফোর্স অ্যাওয়েকেন্স), স্যামুয়েল এল. জ্যাকসন (দ্য হেটফুল এইট) অভিনেত্রী জাডা পিঙ্কেট স্মিথ (ম্যাজিক মাইক ডাবল এক্সএল), অড্রা ম্যাকডোনাল্ড (রিকি অ্যান্ড দ্য ফ্ল্যাশ), টিয়োনাহ প্যারিস (শি-রাক) ও টেসা থম্পসন (ক্রিড)। তাদের মধ্যে উইল স্মিথ, মাইকেল বি. জর্ডান ও অ্যালবা এবারের মনোনীত অভিনেতাদের চেয়ে ভালো অভিনয় নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।

গত বছর সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ানো ও ব্যবসাসফল হওয়া ‘স্ট্রেইট আউটা কম্পটন’ জায়গা পায়নি অস্কারে। এ কারণে ছবিটির নির্বাহী প্রযোজক উইল প্যাকার বিমর্ষ। তিনি এবারের অস্কার মনোনয়ন তালিকাকে পক্ষপাতদুষ্ট মনে করছেন। অস্কারজয়ী অভিনেতা কিউবা গুডিং জুনিয়রও আশা করেছিলেন এ ছবি গুরুত্ব পাবে। কিন্তু কোনো হিসাবই মিললো না।

অস্কারে কালো তারকারা উপেক্ষিত হওয়ায় স্বয়ং অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচাস আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস সভাপতি শেরিল বুন ইসাকস বিব্রত। মনোনয়ন তালিকায় বৈচিত্রের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে হতাশা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এবারের মনোনীত সবাই চমৎকার কাজ করেছেন নিঃসন্দেহে। তাদের অসাধারণ কাজগুলো উপভোগ করছি ঠিকই, কিন্তু বৈচিত্র না থাকায় একই সঙ্গে আমি মর্মাহত ও হতাশ। এখনই বড়সড় পরিবর্তনের সময়। ’

শেরিল জানিয়ে রেখেছেন, বৈচিত্র আনার জন্য নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিতে পরিবর্তন আনবে অ্যাকাডেমি। তার কথায়, ‘গত চার বছরে আমাদের সদস্যরা বৈচিত্রপূর্ণ পরিবর্তন এনেছেন। কিন্তু সেটা প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। আমাদের আরও দ্রুত উন্নতি করতে হবে। ’

শেরিল কৃষ্ণাঙ্গ, অথচ কৃষ্ণাঙ্গদেরই কোনো ভাত নেই এবার! এ দিকটি মনে করিয়ে অস্কার মনোনীত অভিনেতা ডেভিড ওয়েলোয়ো ক্ষোভের সুরে বলেছেন, ‘অ্যাকাডেমিতে এর সভাপতির প্রতিফলন নেই। আমিও অ্যাকাডেমি সদস্য। কিন্তু এখানে আমি নিজেকে দেখতে পাই না। এখানে জাতির প্রতিফলন নেই। ’

আরেক কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা ডন শিয়াডল অস্কার ভেন্যুতে গাড়ি পার্কিংয়ের অনুমতি চেয়ে রসিকতা করেছেন টুইটারে। গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ায় ‘অস্কারস স্টিল সো হোয়াইট’। এবারও কৃষ্ণাঙ্গরা উপেক্ষিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্মাতা স্পাইক লি ইনস্টাগ্রাম আর অভিনেত্রী জাডা পিঙ্কেট স্মিথ ফেসবুকের মাধ্যমে অস্কার বর্জনের কথা জানিয়েছেন। গত বছরের নভেম্বরে সম্মানসূচক অস্কার পাওয়া স্পাইক লি বলেছেন, ‘অভিনয়ের জন্য ২০ জন করে মনোনীত শিল্পীই শ্বেতাঙ্গ, এটা কীভাবে সম্ভব? দুই বছরে ৪০ জন শ্বেতাঙ্গ মনোনয়ন পেলেন, কৃষ্ণাঙ্গরা কি তাহলে অভিনয় পারে না?’

হলিউডের হেভিওয়েট তারকা জর্জ ক্লুনিও কৃষ্ণাঙ্গদের অবহেলা করায় হতাশ। তিনি মনে করেন, বৈচিত্রের দিক দিয়ে চলচ্চিত্র শিল্প কোথায় এগোবে তা না, উল্টো পেছনের দিকে যাচ্ছে! অতিদ্রুত এর উন্নতি প্রয়োজন। তার ভাষ্য, ‘দশ বছর আগে অ্যাকাডেমি কতো প্রশংসিত কাজই না করেছিলো। ভাবুন তো, কতো আফ্রিকান-আমেরিকান অভিনেতা মনোনীত হয়েছিলো তখন। ’

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বসবে অস্কারের জমকালো আসর। এবারের আয়োজনের অন্যতম প্রযোজক রেজিনাল্ড হাডলিন তো বলেছেনই, ‘কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতাদের দুর্দান্ত ও অসাধারণ অভিনয় দর্শক ও সমালোচকরা বরণ করে নিলেও অস্কারে তাদের অবহেলিত থাকাটা দুঃখজনক। ’

এবারের অস্কার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন কমেডিয়ান ক্রিস রক। কালোরা উপেক্ষিত থাকায় ৫০ বছর বয়সী এই কৃষ্ণাঙ্গ তারকা অস্কারকে ‘হোয়াইট বেট অ্যাওয়ার্ডস’ ডাকছেন। বেট অ্যাওয়ার্ডস প্রবের্তন করেছে ব্ল্যাক এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন নেটওয়ার্ক। প্রতি বছর আফ্রিকান-আমেরিকান শিল্পীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় এতে।

নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়ায় ক্রিস রকের কাছে অস্কার বর্জনের জন্য চাপ আসছে। তবে তাকে দমে না যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন চারবার গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা কমেডিয়ান রিকি গার্ভেইস। ক্রিসকে এই অবহেলার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য অস্কার মঞ্চকেই ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

চলচ্চিত্র সমালোচক মার্ক হ্যারিস জানান, ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ এ চিত্র দেখা গেছে। এরপর প্রতি বছরই কৃষ্ণাঙ্গরা কোনো না কোনো বিভাগের মনোনয়নে ঠিকই জায়গা পেয়েছেন। অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতা কৃষ্ণাঙ্গরা হলেন সিডনি পয়টিয়ার (১৯৬৩), ডেনজেল ওয়াশিংটন (২০০১), জেমি ফক্স (২০০৪) ও ফরেস্ট হুইটেকার (২০০৬)। অস্কারের ইতিহাসে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে একমাত্র হ্যালি বেরি (২০০১) সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন।

অস্কারে চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট ৬ হাজার ৩০০ সদস্য ভোট দিয়ে মনোনয়ন তালিকা ও বিজয়ীদের নির্বাচন করেন। এর মধ্যে ৯৪ শতাংশ ভোটার শ্বেতাঙ্গ ও পুরুষ। অস্কারজয়ীরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অ্যাকাডেমির সদস্য হন। গত ৮৭ বছরের ইতিহাসে অস্কার জিতেছেন খুব কম কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী। তাই শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যাই বেশি। এ কারণে মনোনয়ন তালিকায় কালোরা হয় উপেক্ষিত থাকেন, নয়তো থাকেন দুধভাত!

* ৮৮তম অস্কারের বিজ্ঞাপন :


* ৮৮তম অস্কার অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ক্রিস রকের বিজ্ঞাপন :

বাংলাদেশ সময় : ১৭৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ