ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পর্যটকে মুখরিত সুন্দরবন

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
পর্যটকে মুখরিত সুন্দরবন সুন্দরবনের একাংশ।

খুলনা: পৃথিবী খ্যাত সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসছেন সুন্দরবনে। সবুজের স্বর্গ উপভোগ করতে সাপ্তাহিক ও বড়দিন মিলে টানা তিন দিনের ছুটিকে কাজে লাগিয়েছেন অনেকেই।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় অনেকেই ঢাকা থেকে সহজেই মোংলা এসে চলে যাচ্ছেন সুন্দরবনে।

দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা পরিবার–পরিজন নিয়ে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন সুন্দরবনের নদীতে। হরিণ ও বানরের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আকর্ষণ করছে পর্যটকদের।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা এ কে এম রাশেদ শাহরিয়ার বাংলানিউজকে জানান, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সুন্দরবনের সান্নিধ্য পেতে তিন দিন ভ্রমণ করেছেন সুন্দরবনে। ভীষণ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে শিশুরা খুব মজা করেছে। শীতের সময়ে সুন্দরবনে ঘুরার চেয়ে আদর্শ স্থান আর হতে পারে না।

সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা খুলনা সাইক্লিস্টসের অ্যাডমিন সমন্বয়ক মো. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, ৫০ জন ভ্রমণ পিপাসু ব্যক্তি ও সাইক্লিস্টস নিয়ে ২৩ ডিসেম্বরে শুক্রবার খুলনা থেকে সুন্দরবনে ভ্রমণে যাই ২৪ ডিসেম্বর রাতে খুলনায় ফিরে আসি। মূলত খুলনা সাইক্লিস্টস্ গ্রুপের ৯ম বর্ষপূর্তি উৎযাপনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণ করি। আমাদের ট্যুরে ঢাকা থেকে অনেক সাইক্লিস্ট অংশ নিই।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র ও পর্যটন স্পটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বাংলানিউজকে বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিনের ছুটির সুযোগটির পূর্ণ সদ্ব্যাবহার করতে পিছুপা হননি ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দলবেঁধে ঘুরছেন সুন্দরবনে। গত কয়েকদিন ধরে ভীষণ ভিড় বাড়ছে করমজলে। ইংরেজি নতুন বছরকে সামনে রেখে আরও ভিড় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এ বন কর্মকর্তা।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সুন্দরবন ঘুরে গেছেন। শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সুন্দরবন পূর্ব বনভিাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে প্রবেশ করেন তিনি। সেখানে ঘণ্টাখানেক থেকে দুপুর ১টার দিকে করমজল ত্যাগ করেন। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুন্দরবন ভ্রমণে আসছেন। সব মিলে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত এখন সুন্দরবন।

বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, অনিন্দসুন্দর হরিণ, কুমির, বানরসহ বন্য প্রাণীর পদচারণা রয়েছে বনাঞ্চলজুড়ে। বনের দক্ষিণ কোল ঘেঁষে বঙ্গোপসাগর। নিকটবর্তী সাগরে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্যও নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের অবতারণা করে। এসব সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পৌষের এই শীত উপেক্ষা করে পর্যটকরা সুন্দরবনে আসছেন বলে জানান ট্যুর অপারেটররা।

সুন্দরবনে ঘুরে দেখার মতো স্পটগুলো:

বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসস্থল সুন্দরবনজুড়েই পর্যটকদের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার অপার সুযোগ রয়েছে। তবে সুন্দরবনে ঘুরে দেখার মতো স্পটগুলো হলো শরণখোলার টাইগার পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত কটকা, কচিখালীর অভয়ারণ্যকেন্দ্র, করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজননকেন্দ্র, কলাগাছিয়ায় ইকোট্যুরিজম সেন্টার, হিরণপয়েন্ট খ্যাত নীলকমল অভয়ারণ্য, দুবলারচর, মানিকখালী, আন্দারমানিক ও দোবেকী এলাকায় পর্যাটকদের আনাগোনা বেশি থাকে।

যেভাবে আসবেন সুন্দরবনে:

বিভিন্ন উপায়ে সুন্দরবনে ভ্রমণ করে আসতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার খরচ আর ঝক্কিঝামেলা হবে বেশি। সহজ ও কম খরচে এই সুন্দর জায়গাটি ভ্রমণ করতে কোনো ট্যুর অপারেটরকে বেছে নিন। এর নির্দিষ্ট প্যাকেজে আপনি পেয়ে যাবেন থাকা, খাওয়া, ঘোরা, নিরাপত্তারক্ষী, গাইডসহ যাবতীয় সব সুবিধা। খুলনা ও মোংলায় রয়েছে এমন শতাধিক ট্যুর অপারেটর। ঢাকাতেও আছে। সুযোগ আছে খুলনার কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে সুন্দরবন দেখার।

একদিনেই সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চাইলে করমজল পর্যটনকেন্দ্রে যেতে পারেন। ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসি/ননএসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া সায়দাবাদ থেকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, ফাল্গুনী পরিবহন, সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুলসহ বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এসব বাসে পদ্মা সেতু পাড় হয়ে আগের তুলনায় খুব কম সময় খুলনায় আসা যায়। খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত বিমানে যাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। খুলনায় নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মোংলা যাওয়া যাবে। এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি মোংলায় অনেক বিলাসবহুল বাসে আসা যায়।

মোংলা থেকে করমজল লঞ্চ বা ট্রলারে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ হওয়ায় দিনে যেয়ে দিনে ফিরে আসার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া ভ্রমণে তুলনামূলক খরচও কম। খুলনার বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চ ঘাট থেকেও সুন্দরবন যাওয়া যায়।

যে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে:

সুন্দরবনে ঘুরতে যাওয়ার আগে যে জিনিসগুলো ভুলে গেলে একদম চলবে না তা হলো সুন্দরবনের পানি লবণাক্ত। তাই ঘুরতে বের হওয়ার আগে অবশ্যই পানির বোতল সাথে রাখুন। বনে প্রবেশের সময় সবাই একসঙ্গে থাকুন এবং গাইডের কথা মেনে চলুন। ভ্রমণ প্যাকেজের খরচ কমাতে চাইলে বিশেষ ছুটির দিনে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিন। কিছু স্থানে টেলিটক নেটওয়ার্ক ছাড়া সব জায়গাতেই মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখা দেয়। এই শীতে ভ্রমণ করতে গেলে অবশ্যই শীতের পোশাক সঙ্গে নিন।

বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।