ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

শত দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মালিহা কী ভাবছেন? 

ফারিয়ার রহমান শোভন, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
শত দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মালিহা কী ভাবছেন? 

পুরো বিশ্ব ঘুরে দেখার স্বপ্নের পিছু ছুঁটেচলা মালিহা ফাইরুজ ১০০ দেশের গণ্ডি পেরিয়েছেন। শত ব্যস্ততার মধ্যে তিনি এসেছিলেন বাংলানিউজের অফিসে।

ভাগাভাগি করেছেন তার ভ্রমণ নিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুড়ি।

চলুন জানি কেমন ছিল তার শত দেশ ঘুরে দেখার পথচলা...

ভ্রমণগল্পের শুরুটা কীভাবে?
মালিহা: মাত্র ৪ বছর বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরে প্রথমবার দেশের বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। শুরুটা ছিল মূলত মায়ের মাধ্যমে। তিনি আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন দেশে যেতে হয়েছে।

প্রথমবার বিমানে উঠে আমি অনেক অবাক হয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যে আমি পাখির মতো মেঘের মধ্যে ভাসছি। সেই অনুভূতি এখনও আমার মনে আছে।

সেই সময়টায় আমি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করি। তখন আমি বিভিন্ন ধরনের মানুষ ও তাদের সংস্কৃতি দেখে অবাক হয়েছিলাম। আর বিভিন্ন দেশের এতো সংস্কৃতি এবং তাদের নানান ধরনের খাবারের স্বাদ আমাকে আকর্ষণ করেছিল। তখন থেকেই স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল বিশ্ব ঘুরে দেখার।

ঘোরাফেরা নিয়ে পরিকল্পনা কী ছিল?
মালিহা: বুঝতে শেখার পরে নিজের লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম ৩০ বছরের মধ্যে ১০০টি দেশ ভ্রমণ করার। সেভাবেই আগাচ্ছিল সব। কিন্তু মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছুটা পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। তবে ৩১ বছরে গিয়ে ১০০তম দেশ হিসেবে ঘানা ঘুরেছি।

স্বপ্ন পূরণে কে উৎসাহ দিয়েছেন?
মলিহা: আমার স্বপ্নপূরণে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন আমার বাবা। তিনি নিজেও একজন ট্রাভেলার ছিলেন। আর সেই গুণটিই হয়তো আমি পেয়েছি। এছাড়া আমার মাও আমাকে সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন।

কিন্তু আমাদের দেশে অনেক মেয়েদের বড় করে তোলা হয় নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে। এজন্য অনেকেই সাহস পান না নিজের মতো করে কিছু করতে। আমি মনে করি প্রতিটি বাবা-মায়েরই উচিত সন্তানকে ভয় না দেখিয়ে বরং তাকে তার মতো করে চলতে দেওয়া। আমি আমার বাবা-মায়ের কাছে সেটা পেয়েছি জন্যই হয়তো স্বপ্নপূরণের পথ ধরে এগুতে পেরেছি।

এত দেশ ভ্রমণের খরচের বিষয়টি কীভাবে ম্যানেজ করেন?
মালিহা: অনেকেই মনে করেন যে আমার বাবার অনেক টাকা আর আমি বাবার টাকা উড়িয়ে ঘোরাফেরা করি। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আমি আমার নিজের টাকায় স্বপ্ন পূরণ করি। বিভিন্ন দেশের এনজিওতে ফুল টাইম কাজ করে টাকা জমিয়ে আমি নানা দেশে যাই। তবে আমাকে অনেক হিসাব করে খরচ করতে হয়। আমার কাছে মনে হয় যে কোথাও বেশি খরচ হয়ে গেলে হয়তো একটা স্বপ্ন থেকে একটু সরে যাব।

এখন কোথায় থাকছেন, কী করছেন?
মালিহা: গত ১৭ বছর ধরেই আমি দেশের বাইরে থাকছি। বর্তমানে জার্মানির বার্লিনের একটি এনজিওতে কাজ করছি। গত ৮ বছর ধরেই বিভিন্ন দেশের এনজিওতে কাজ করে আসছি।

এতো দেশ ঘুরেছেন, তার মধ্যে কোনটি বেশি ভালো লেগেছে?
মালিহা: আমার কাছে সবগুলো দেশই ভালো লেগেছে। একেকটি একেক রকম অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু আমি যদি সেরা পাঁচটি বলি তাহলে সেগুলো হবে, তুরস্ক, সাউথ আফ্রিকার কেপ টাউন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মেক্সিকো এবং পশ্চিম আফ্রিকার ঘানা।

সর্বশেষ আমি ঘানায় ঘুরেছি। দেশটি ইতিহাসে সমৃদ্ধ। সেখানের মানুষরা অতিথি পরায়ন, অনেকটা আমাদের মতোই। এছাড়া তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।

কোন দেশের খাবার সবচেয়ে ভালো লেগেছে?
মালিহা: পাকিস্তানের খাবার আমার কাছে সেরা। তাদের বিরিয়ানি অনেক মজার হয়। আর মেক্সিকো, থাইল্যান্ড ও তুর্কি খাবারও আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।

এছাড়া আমি পুরান ঢাকার মেয়ে। এতো দেশের খাবার খেয়েছি কিন্তু কাচ্চির জন্য আমার কাছে পুরান ঢাকারটা হচ্ছে সেরা। এখানকার মতো কাচ্চি আর কোথাও হয় না।

বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ভ্রমণ করেন, এটা কেন?
মালিহা: বাইরে থাকলেও আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, মিস করি। এছাড়া বাংলাদেশের পাসপোর্টে এতো দেশ ঘুরেছি তাই বিষয়টা উপস্থাপন করতে কয়েকটা দেশে আমি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ছবি তুলেছি।

ভ্রমণ নিয়ে আপনার পরামর্শ ও নিজস্ব অভিজ্ঞতা যদি বলতেন-
মালিহা: আমি অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করি। ভ্রমণ বিষয়ক অনেক কিছু লিখিও নিয়মিত। ভ্রমণ অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করার পাশাপশি দর্শকদের আমি বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেই আমার ব্লগ সাইটের মাধ্যমে।

আমার ব্লগ সাইটের নাম ‘মালিহা অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহাসিক স্থান, খাবার ইত্যাদি বিষয়ে লেখা আমি নিয়মিত সেখানে দেই।  

তো বিয়ে করছেন কবে? 

মালিহা: হা হা হা (হাসি) এখানেও এই প্রশ্ন! আমি এখনই বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছি না। সেটা আমার কাছে অতোটা গুরুত্বপূর্ণ না।  আমি ভালো থাকতে চাই, খুশি থাকতে চাই। তবে আমার মনের মতো কখনও কাউকে পেলে পরে সেটা নিয়ে ভাববো।

অপরিচিতি একটা দেশে একা ভ্রমণে কেমন লাগে? 
মালিহা: আসলে একা ভ্রমণ করতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ইমিগ্রেশন থেকে শুরু করে অনেক দেশের পুলিশ কর্মকর্তারাও খারাপ ব্যবহার করেছেন। মেয়ে বলে শুনতে হয়েছে নানা ধরনের বাজে মন্তব্যও। তবুও আমার স্বপ্নের হাত না ছেড়ে একটির পর একটি নতুন নতুন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছি।

নারীদের ভ্রমণ নিয়ে কিছু বলতে চান কিনা?
মালিহা: নারীদের ভ্রমণের আগ্রহ থাকলে আমি মনে করি নিজের উন্নয়নের জন্য এটি অনেক ভালো সুযোগ। ভ্রমণে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও নতুন কাজ করার আগ্রহ ও উৎসাহ তৈরি হয়। হতাশা-ক্লান্তি দূর হয়।

মালিহা ফাইরুজ বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা নিয়মিত তুলে ধরেন তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মালিহার ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট দেখতে ঘুরে আসতে পারেন তার ইনস্টাগ্রামফেসবুক পেজে

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।