নারায়ণগঞ্জ: ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সবাই একটু কোলাহলমুক্ত পরিবেশে ঘুরতে চায়। সেই কথা মাথায় রেখে দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়ের জাদুঘর, পানাম সিটি ও তাজমহলকে।
আর ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ও ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য সোনারগাঁয়ে এ তিনটি স্থান খুবই জনপ্রিয়। ঈদকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাও। প্রতি ঈদেই এ স্থানগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় হয়।
এদিকে এবার ঈদে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে এসব পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। স্পট টিম, টহল টিমের পাশাপাশি সাদা পোশাকে সদস্যদের নিয়োজিত করা হয়েছে এসব স্থানে আগত দর্শনার্থীদের জন্য।
ট্যুরিস্ট পুলিশের নারায়ণগঞ্জ জোনের ইনচার্জ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন জানান, ইতোমধ্যে সোনারগাঁও জাদুঘর, পানাম সিটি, তাজমহলসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঈদকে ঘিরে প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ। আমরা এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তায় দর্শনার্থীদের জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
তিনি আরো জানান, আমাদের দুটি টিম সোনারগাঁও জাদুঘর ও পানাম সিটিতে থাকবে। একাধিক মোবাইল পেট্রোল টিম বাকি কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া সাদা পোশাকে সিভিল টিম বিশেষ নজরদারির দায়িত্ব পালন করবে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
ঈদকে কেন্দ্র করে সবাই একটু প্রকৃতির কাছে যেতে চায়। একটু ঘুরে বেড়াতে চায় এদিক-সেদিক। শহরের মানুষগুলো সাধারণত যান্ত্রিক জীবন ও জীবকার বিরামহীন দৌড় থেকে ঈদের ছুটিতে কিছুটা বিশ্রাম পায়। সেই বিশ্রামের সময়ে ঘুরে আসতে অনেকেই বেছে নেন এ তিনটি স্থানকে।
সোনারগাঁ জাদুঘর
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সোনারগাঁ জাদুঘর হিসেবেই পরিচিত। রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোনারগাঁ জাদুঘর।
ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক রবিউল জানান, করোনার দুই বছর পর এবার ফাউন্ডেশনকে সাজানো হয়েছে। আশা করছি, এবার এখানে হাজারো দর্শনার্থী আসবে। আর তাদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে আমরা ধোয়া-মোছার কাজ শেষ করেছি। জাদুঘরে আসার প্রবেশ পথে যানজট নিরসনে পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
সোনারগাঁ এক সময় মসলিনের জন্য বিখ্যাত ছিল। মসলিনের বিকল্প জামদানি শাড়ি সরাসরি তৈরি করতে দেখা যাবে কারুপল্লির ভেতরে। এখানে দেখার মতো রয়েছে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর ও ফাউন্ডেশন চত্বর। লেকঘেরা ফাউন্ডেশন চত্বরে রয়েছে কারুপল্লি, নৌকা ভ্রমণ ও টিকিট কেটে মাছ ধরার সুযোগ।
বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈসা খাঁ দীর্ঘদিন সোনারগাঁ শাসন করেছেন। সোনারগাঁয়ের চারদিকে নদী দিয়ে ঘেরা ছিল বলে সহজে সোনারগাঁকে কোনো শত্রু আক্রমণ করতে পারতো না। ১৯৭৫ সালে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। আর বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১শ টাকা।
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গোয়ালদী গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক পানামনগর। পানামনগরের পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক পানাম পুল। যারা জাদুঘর দেখতে আসেন তারা সাধারণত একটি বারের জন্য ঢুঁ মেরে যান পানাম নগরীতে।
বাংলার তাজমহল
২০০৮ সালে সোনারগাঁয়ের মতো অজপাড়া গায়ে ভারতের আগ্রার তাজমহলের আদলে নির্মিত ‘বাংলার তাজমহল’র ফটক সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে বসানো টাইলস, বিদেশি ডায়মন্ড ও পাথর, গম্বুজের ওপরে ব্রোঞ্জের তৈরি চাঁদ-তারায় আরও দৃষ্টিনন্দন বাংলার তাজমহল। প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ৫০ টাকা।
চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক আহসানউল্লা মনি নিজস্ব অর্থে পেরাব গ্রামে নিজ বাড়িতে ১২ বিঘা জমির ওপর তাজমহলটি নির্মাণ করেন। তাজমহলে ব্যবহৃত টাইলস আনা হয়েছে ইতালি থেকে। বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ১৭২টি বিদেশি ডায়মন্ড ও পাথর। গম্বুজের ওপরে চাঁদ-তারা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে চার মণ ওজনের ব্রোঞ্জ।
সম্রাট শাহাজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রীর সমাধির ওপর ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ তাজমহল নির্মাণ করেন। যা বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সময়ের আবর্তে তাজমহলটি এখন বিশ্ববাসীর ভালোবাসার মহান স্মৃতির চিহ্ন বহন করছে। এ কারণেই দেশের সাধারণ মানুষ যারা তাজমহল দেখতে ভারতের আগ্রায় যেতে পারবেন না তারা অনায়াসেই বাংলার তাজমহলটি দেখতে পারবেন।
পানাম নগরী
বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ের পানাম নগরীর ঈসা খাঁর সময়কালে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। সোনারগাঁয়ের রাজকার্য পরিচালিত হতো পানাম নগরী থেকে। বর্তমানে যে পানাম দাঁড়িয়ে আছে তার অবকাঠামো ব্রিটিশ আমলের। প্রাচীন পানাম চাপা পড়ে আছে আধুনিক পানামের নিচে।
এখানে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য অট্টালিকা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, ঠাকুরঘর, গোসলখানা, নাচ ঘর, খাজাঞ্চিখানা, টাকশাল, দরবার কক্ষ, প্রশস্ত দেয়াল, ভোজনালয়, বিচারালয় ও প্রমোদ কুঞ্জ ইত্যাদি।
পানাম নগরীতে দেখা যায় চারশ’ বছরের পুরনো মঠ-বাড়ি। এর পশ্চিমে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য কুঠি ‘নীলকুঠি’ রয়েছে। আছে পোদ্দার বাড়ি, কাশিনাথের বাড়ি, সোনারগাঁয়ের একমাত্র আর্ট গ্যালারিসহ নানা প্রাচীন ভবন। পানামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পঙ্খিরাজ খাল। শেরশাহ আমলে নির্মিত সোনারগাঁ থেকে সিন্ধু পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মাইলের ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড-ট্রাংক রোডের কিছু অস্তিত্ব পানামে আজো দৃষ্ট হয় বলে হাল আমলে তা পাকা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৫
এমআরপি/এএটি