ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

গো-দুগ্ধের শহর আহমেদাবাদ

সুকুমার সরকার, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৬
গো-দুগ্ধের শহর আহমেদাবাদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আহমেদাবাদ (গুজরাট) থেকে ফিরে: ভারতের বস্ত্রশিল্পসমৃদ্ধ শহর আহমেদাবাদ। পুরাতন শহরগুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম।

গুজরাট রাজ্যের সর্ববৃহৎ শহর এটি। ঐতিহাসিক এ নগরীর গোড়াপত্তন হয় সোলানকি রাজপূত নৃপতিদের হাতে।
 
রাজপূত নৃপতিরা দ্বাদশ শতক জুড়ে আহমেদাবাদ ঘিরে গুজরাটি শাসনকাজ চালান। তবে আহমেদাবাদ আধুনিক রূপ পায় সুলতান আহমেদ শাহ ১-এর  হাত ধরে। তিনি ১৪১১ সালের গোড়ার দিকে আহমেদাবাদকে রাজধানী ঘোষণা করেন। সুলতানদের শাসনামল ছিলো ১৪১১ থেকে ১৫১১ সাল পর্যন্ত।
 
আহমেদাবাদকে বলা হয় ভারতের ম্যানচেস্টার। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কাপড়ের কল-কারখানা।
 
কাপড়ের পাশাপাশি আহমেদাবাদ এখন সুনাম অর্জন করেছে গো-দুগ্ধের সমৃদ্ধির কারণে। বলা চলে দুধের নহর বয়ে চলেছে আহমেদাবাদে। আহমেদাবাদ যাচ্ছি শুনে কলকাতায় আমার এক বন্ধু বলেছিলেন আহমেদাবাদ শহরজুড়ে প্রচুর গরু দেখতে পাবেন। তার কথার প্রমাণ পেলাম ট্রেন থেকে নেমে ট্যাক্সিতে করে কৃষ্ণ এসজি হাইওয়ের পাশে হোটেলে যাওয়ার পথে।
 
যদি কোনো পর্যটক আহমেদাবাদে প্রথম যান তবে প্রথমেই তার নজর কাড়বে শহর জুড়ে থাকা হাজার হাজার দুধেল গাই।
 
শহরের দুধেল গাইগুলোর গাড়ি-ঘোড়া বা মানুষজন নিয়ে নেই কোনো হেল-দেল। রাস্তায় নির্বিঘ্নে ঘুরে-ফিরে খেয়ে-দেয়ে বেড়াচ্ছে তারা। সেইসঙ্গে সমান তালে আছে মহিষও।
 
এ কারণে আহমেদাবাদে দুধের দাম এক লিটার জলের সমান। প্রতি লিটার দুধ সেখানে মেলে মাত্র ২০ টাকায়। দুধের এ সহজপ্রাপ্তিতে দুগ্ধজাত খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ কোম্পানি আমমুলের প্রধান উৎপাদন কারখানা আহমেদাবাদ শহরে গড়ে উঠেছে।
 
হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া নিয়ে গরু মালিকদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনেই হলো না। গরুগুলোর পেছনে কোথাও কোনো রাখাল নেই। কেবল ভোর ও বিকেলে গরু দোয়ানো হয় বলে জানা যায়।

প্রহ্লাদনগরের একডজন গরুর মালিক অরুণ দেশাই বাংলানিউজকে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে জানান, তারা নির্দ্দিষ্টস্থানে নিয়ে গরুর দুধ দুইয়ে থাকেন। কিছু গাই খাটালে আর কিছু থাকে তাঁবুতে।    
 
তবে ৪০/৫০ কিলোমিটার শহর পাড়ি দিলেও কোনো রাস্তায় গোবর পড়ে থাকতে দেখা গেলো না।
 
দেশে কখনো চোখে পড়েনি গাইগরুর বড় আকারের শিং। পশ্চিমবঙ্গেও এমনটি দেখা যায়নি। আহমেদাবাদে গরুগুলোর লম্বা শিং দেখা গেলো।
শহরের মানুষের মধ্যে গরুভীতি নেই।
 
সবরমতি নদী ঘিরে গড়ে উঠেছে আহমেদাবাদ। শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে সবরমতি নদী। ভাঙন থেকে শহরটি রক্ষা করতে এর দুই তীর ইট-কংক্রিটে বাঁধাই।
 
শহরে এখন মেট্রোরেল ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। রাস্তার পাশে টিন দিয়ে ঘিরে কাজ চলছে। তবে যানবাহন চলাচলে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না।
 
কেননা ঢাকা বা কলকাতা শহরের মতো অত্যধিক গাড়ি-ঘোড়ার বালাই নেই। নেই তেমন জনসমাগম।    
 
অর্থনৈতিক অবদানের পাশাপাশি রাজনৈতিক দিক থেকেও আহমেদাবাদ বিশাল গুরুত্ব বহন করে চলেছে। আহমেদাবাদ শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরেই গুজরাট রাজ্যের রাজধানী গান্ধীনগর। বাস-ট্রেন-ট্যাক্সিতে যাওয়া যায় অতি সহজেই।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৬
এসএস/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।