ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে তুলোর মতো মেঘরাশি

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৬
পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে তুলোর মতো মেঘরাশি ছবি: অনিক খান-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নেত্রকোণার দুর্গাপুর, বিরিশিরি ঘুরে এসে: গারো পাহাড়ের সবুজ উপত্যকা। শুরু যেখানে সেখানেই কাঁটাতারের বেড়া।

অথচ কন্টক সেই প্রাচীরে আটকায় না পাহাড়ি সৌন্দর্যের ছায়া। গারো পাহাড়ের পাদদেশের নৈসর্গিক এ উপজেলার নাম দুর্গাপুর।  

ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেষা নেত্রকোণার এ উপজেলায় দূর থেকে ঢেউ খেলানো অপরূপ সবুজঘেরা পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘ।

দূর দিগন্তে পাহাড়ের শরীরজুড়ে চোখের সামনেই মেঘরাশির বিচরণ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। পাহাড় আর মেঘের এ গভীর মিতালী মন কাড়ে পর্যটকদের।  

নেত্রকোণা জেলা শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে আদিবাসী অধ্যুষিত নৈসর্গের লীলা নিকেতন দুর্গাপুর উপজেলা। দুর্গাপুর থেকে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে শিবগঞ্জের উত্তর দিকে বিরিশিরি এলাকা।

সবুজ প্রকৃতির পাশাপাশি সোমেশ্বরীর বুকে মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা নুড়ি পাথরের সাম্রাজ্য। কোথাও কোথাও আবার নদীর বুকজুড়ে সিলিকা বালু।

উন্নতমানের কাঁচ তৈরিতে ব্যবহৃত এ বালুর চাহিদাও ব্যাপক। বিজয়পুর সাদামাটির পাহাড়ের নিচে জমে থাকা পানি যেন সেন্টমার্টিনসের সৌন্দর্যকেও ছাপিয়ে যায়।  

সোমেশ্বরীর পাড়ঘেষে এখানে গড়ে উঠেছে দেশের সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি ক্যাম্প। এখানে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে আসা পাহাড়ি সৌন্দর্য যেন গলিয়ে পড়ে।  

বৃষ্টিভেজার অপার আনন্দে এখানে দাঁড়িয়েই পাহাড় আর শুভ্র মেঘের মিতালী মন কাড়ে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের।  

সবুজ পাহাড় ছাড়াও পর্যটকদের ঘুরে দেখার মতো রয়েছে রাণীখং এলাকায় নির্মিত সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী। এখানকার নীরব, ছিমছাম আর পরিপাটি সাধ্বী মারিয়া গোরেট্রির ছাত্রীনিবাস দৃষ্টি কাড়ে।  

সোমেশ্বরী নদী নির্ভর বিরিশিরির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বর্ষায় এ নদী থাকে পানিতে টইটুম্বর। এ সময় অনেকগুনে বেড়ে যায় সোমেশ্বরীর রূপ-যৌবন আর লাবণ্য। এ নদীর স্বচ্ছ তোয়া জলে দুর্নিবার আকর্ষণ রয়েছে দর্শনার্থীদের।  

দুর্গাপুরের সুসং জমিদারের জামানায় হাতিখেদা আন্দোলন ছিল। ওই সময় হাতি ধরার কৌশল ছিল বাঁশের বেড়া। এখানে হাতি ঢুকানো হতো বলেই একে বলা হয় হাতিখেদা। সাধারণ মানুষকে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে এ কাজে ব্যবহার করা হতো।  

পাহাড় আর প্রকৃতির কোলে স্বর্গীয় পর্যটনস্থান দুর্গাপুর-বিরিশিরি মানেই অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি। সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য, গারো আদিবাসীদের জীবনাচার, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির টানে বছরের পুরোটা সময় এখানে আসেন পর্যটকরা।  

কিন্তু ভঙ্গুর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার অভাবে এখানকার পর্যটন আকর্ষণকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।  

পর্যটন শিল্পের কাঙ্খিত বিকাশ ঘটাতে মহাপরিকল্পনার গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আজগর মনে করেন, সরকার উদ্যোগ নিলেই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের হাতছানি দেয়া দুর্গাপুর-বিরিশিরি দেশের সম্ভাবনাময়ী আকর্ষণীয় পর্যটন শিল্পে রূপ নিতে পারে।  

শুধু তাই নয়, এখানকার পর্যটন সম্পদের বিপুলতা দেশের অর্থনীতির অনন্য এক শক্তি হতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৬ 
এমএএএম/এসএইচ

**
বেহাল সড়কে মার খাচ্ছে দুর্গাপুরের পর্যটন
** বিপর্যস্ত সড়ক, দ্বিগুণ পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে দুর্গাপুরে!
** ময়মনসিংহ-পূর্বধলা-বিরিশিরি সড়কে চলে না বাস, শ্রমজীবীদের হাহাকার!
** নরকযাত্রার অপর নাম ময়মনসিংহ-পূর্বধলা-বিরিশিরি সড়ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।