ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

‘গারো পাহাড় বাহিনী’ সোমেশ্বরীর বুকে!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৬
‘গারো পাহাড় বাহিনী’ সোমেশ্বরীর বুকে!  ছবি: অনিক খান-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নেত্রকোনার দুর্গাপুর, বিরিশিরি থেকে ফিরে: ‘গারো পাহাড় বাহিনী’ নদী সোমেশ্বরী। ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের ঝর্ণাধারা থেকে এ নদীর উৎপত্তি।

নদীর খানিকটা দূরেই সবুজে ঘেরা গারো পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। নীল আকাশের ছায়ায় কলকলিয়ে বয়ে চলা এ নদীর বুকে দশনার্থীদের টানে অজানা আকর্ষণে।

বর্ষায় খরস্রোতা এ নদীর পানি স্বচ্ছ, ঝকঝকে এবং সুনির্মল। তখন মোহনীয় রূপে ধরা দেয় সোমেশ্বরী। সোমেশ্বরীর রূপ-যৌবন-লাবণ্যে তখন যেন নিমিষেই ক্লান্তি মুছে যায়।

আবার বর্ষা শেষে পাহাড়ি ঢল থামলে সোমেশ্বরীর পানি তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এ সময়টাতে অপার সৌন্দর্য হারিয়ে এ নদী যেন মরুভূমিতে পরিণত হয়।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে সোমেশ্বরী। এ উপজেলার রাণীখং এবং বিজয়পুরের পূর্ব দিক দিয়ে এ নদী মেঘালয়ের গারো পাহাড় থেকে নেমে এসেছে। মিলেছে জাঞ্জাইলে কংশ নদে গিয়ে।

কংশ নদ পর্যন্ত সোমেশ্বরীর ব্যপ্তি প্রায় ২৫ মাইল। শুধুমাত্র ঢল নামলেই এ নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়। আগে সোমেশ্বরী দুর্গাপুর ও বিরিশিরি এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ছিল। এ দুই এলাকাকে বিভক্ত করেছিল এ নদী।

পরে ছোট হয়ে আসে সোমেশ্বরীর আকার। বিরিশিরি এলাকার কমলা রানীর দিঘিও অনেকটাই বিলীন হয়েছে এ নদীতে। ধীর লয়ে বয়ে চলা শান্ত-সুনিবিড় সোমেশ্বরীতে কালেভদ্রে মেলে মহাশৈল মাছ।

সোমেশ্বরীর নামকরণ নিয়ে রয়েছে কিংবদন্তি। কারো কারো মতে, এ নদীর আদি নাম ‘সমসাঙ্গ। ’ আবার গারো উপকথায় সোমেশ্বরীর আগের নাম ‘সিমসাং’। তবে সোমেশ্বর পাঠক নামের একজনের নামানুসারে এ নদীর নাম হয়েছে সোমেশ্বরী।

সুদর্শন ব্রাহ্মণ সোমেশ্বর পাঠক একবার কামাখ্যা তীর্থ দর্শন শেষে গারো পাহাড়ের পাদদেশে এক জলধারার তীরকে বেছে নেন। এভাবেই নদীটির নামকরণের লোকশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে।  

শুষ্ক মৌসুমে সোমেশ্বরীর দু’পাশে জেগে ওঠে বিস্তীর্ণ চর। নদীপথে আসে প্রচুর বালু-মাটি। প্রবল স্রোতের কারণেই দুর্গাপুরের সঙ্গে শিবগঞ্জের ব্রিজ করা সম্ভব হয় না বলে জানান স্থানীয়রা।

নৌকাচেপে সোমেশ্বরী ঘাট থেকে শিবগঞ্জ ঘাটের দিকে যাওয়া কুলাগড়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা রোকন উদ্দিন (৪৫) বাংলানিউজকে জানান, সোমেশ্বরী থেকে শিবগঞ্জ পর্যন্ত ব্রিজ দরকার। এ ব্রিজ নির্মিত হলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর থেকে শিবগঞ্জ বাজার ও বিজয়পুর পর্যন্ত যোগাযোগ সহজ হবে।

তখন সোমেশ্বরী পাড়ের মনোমুগ্ধকর ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে বছরের পুরোটা সময় এখানে ভিড় বাড়বে দশনার্থী ও পর্যটকদের।

সোমেশ্বরীতে রয়েছে ‘কালো সোনা’। মাটি তুলতে তুলতে সেটার ভেতরে মুক্তার দানার মতো কালো রঙের খনিজ পদার্থ মেলে বলে এর নাম কালো সোনা। এটির খনিজ মূল্য আছে। শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয়রা বালু-মাটি সরিয়ে এ ‘কালো সোনা’ উৎপাদন করেন।

মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য ইউরেনিয়ামের প্রাচুর্যও রয়েছে সোমেশ্বরীতে। কিন্তু এগুলো আহরণের কোনো উদ্যোগ নেই। মৃত্তিকা বিজ্ঞানী, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের জরিপে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের কোনো কোনো স্থানে এবং নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরীতে এ ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

** পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে তুলোর মতো মেঘরাশি
** বেহাল সড়কে মার খাচ্ছে দুর্গাপুরের পর্যটন
** বিপর্যস্ত সড়ক, দ্বিগুণ পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে দুর্গাপুরে!
** ময়মনসিংহ-পূর্বধলা-বিরিশিরি সড়কে চলে না বাস, শ্রমজীবীদের হাহাকার!
** নরকযাত্রার অপর নাম ময়মনসিংহ-পূর্বধলা-বিরিশিরি সড়ক

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৬
এমএএএম/এএটি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।