ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

প্রাচীন স্থাপত্যের টানে লালবাগ কেল্লায় পর্যটকরা

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০১ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৯
প্রাচীন স্থাপত্যের টানে লালবাগ কেল্লায় পর্যটকরা

ঢাকাপ: প্রাচীন ইতিহাস, সভ্যতা ও স্থাপত্যের টানে এখনও লালবাগ কেল্লায় ছুটে যান পর্যটকরা। ঢাকা শহরের ৪০০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে মুঘল আমলের প্রাচীন এ স্থাপত্য।

ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত এ দুর্গে নেমেছে পর্যটকদের ঢল। পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকেই ছুটে আসছেন পুরোনো এ স্থাপনায়।

 

শনিবার (০৮ জুন) পর্যটকদের পদচারণায় অন্যরকম রুপ ধারণ করে লালবাগ কেল্লা।

যান্ত্রিক নগরে সবুজায়ন আর কোমল বাতাস ছাড়াই জীবন পার করছে শহরবাসী। এখানে ইচ্ছে হলেই প্রকৃতিকে ছুঁয়ে দেখা যায় না। ইট, পাথর আর কংক্রিটের ঢাকা শহরে কোলাহলমুক্ত পরিবেশ নেই বললেই চলে। ফলে কোথাও একটুখানি সবুজের সমারোহ পেলেই সেখানে ছুটে যায় এ শহরের মানুষ। এছাড়া প্রাচীন স্থাপনার টান তো আছেই।  

লালবাগ কেল্লা এ ভূখণ্ডের ঐতিহাসিক একটি স্থাপনা। এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে ঐতিহাসিক এ নিদর্শন। সবুজ ঘাস আর ফুলে ফুলে সাজানো এ স্থাপনা এখানে ঘুরতে আসা মানুষকে বিমোহিত করে। মুঘল আমলের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য লালবাগ কেল্লার মসজিদ, দরবার হল (দেওয়ান-ই-আম) ও পরি বিবির মাজার (শায়েস্তা খার মেয়ে) বাঙালি সভ্যতারই বাহন।

ঈদের ছুটিতে লালবাগ কেল্লার সবুজ ঘাস, ফুল আর দুর্গের অপরুপ দৃশ্য দেখতে আসছেন হাজারো পর্যটক। শুধু এ শহরের বাসিন্দাই নয়, প্রাচীন সভ্যতার এ স্থাপনা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকেও ছুটে আসছেন অনেকে।  

শনিবার বিকেল ৩টায় পলাশী পাড়ি দিয়ে লালবাগে ঢুকতেই সেই চিরচেনা যানজট। পুরান ঢাকার সরু রাস্তা ধরে লালবাগ কেল্লায় পৌঁছাতেই যেনো ক্লান্ত পর্যটকরা। টিকিট কেটে কেল্লায় প্রবেশ করতে দীর্ঘ লাইন। সারি সারি লাইন ধরেই সুশৃঙ্খল ভাবে প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। তবে কেল্লার ভেতরে ঢুকে প্রাচীন স্থাপনা আর রঙ বেরঙের ফুল দেখে সেই ক্লান্তি যেনো মুহূর্তেই বিলীন। সবুজ ঘাসে কেউ কেউ প্রিয়জনকে নিয়ে হারিয়ে গেছেন সবুজের মধ্যে। আবার কেউ কেউ ব্যস্ত কালের সাক্ষী স্থাপনার ছবি আর সেলফি তুলতে।

স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রাচীন স্থাপত্য ও নিদর্শন দেখতে কার না ভালো লাগে। এ স্থাপনা আমাদের গর্ব। এতো বছর আগেও আমাদের আর্কিটেক্ট কতো আধুনিক ছিলো, এ দুর্গ সেটাই প্রমাণ করে। নিজের সন্তানকে প্রাচীন স্থাপনা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই ঈদের ছুটিতে এখানে এসেছি।

লালবাগ কেল্লায় দর্শনার্থীদের ভিড়।

ঢাকার ধামরাই থেকে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে লালবাগ কেল্লায় এসেছেন নুজহাত সিপি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার স্থাপনা ও সুন্দর দৃশ্য দেখে আমি অভিভূত। এটি আমাদের গৌরবের স্থাপনা। আমি এখানে বারবার ফিরে আসবো।  

ঢাকা হোম ইকোনমিক্স কলেজের ছাত্রী তাবাসসুম নদী বাংলানিউজকে বলেন, এ স্থাপনার কারুকাজ খুব নিখুঁত ও সুন্দর। আর এখানকার ফুলে ভরা সবুজ দৃশ্য মনকে রাঙিয়ে তুলে।  

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, মুগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মুহাম্মদ আজম ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে এ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি পাঠায়। ফলে দুর্গের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৬৮০ সালে বাংলার সুবেদার নবাব শায়েস্তা খাঁ ঢাকায় এসে আবার এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার মেয়ে বিবি পরীর মৃত্যু হওয়ায় দুর্গটিকে অপয়া মনে করে ১৬৮৪ সালে তিনিও দুর্গের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।

১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যাবার সময় দুর্গের মালিকানা উত্তরাধিকারীদের দান করে যান। তিনি ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা কারণে এ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে। পরবর্তীতে ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। এ সময়েই দুর্গটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরে ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩০০ বছর পর সংস্কার করে লালবাগ দুর্গকে আগের রূপে ফিরিয়ে এনে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৯
টিএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।