ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

রূপসীর মোহে ছুটে যাচ্ছে পর্যটক

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
রূপসীর মোহে ছুটে যাচ্ছে পর্যটক

মিরসরাই (চট্টগ্রাম): কাটেনি দাহকাল, এখনও চোখ রাঙ্গাচ্ছে মহামারি করোনা ভাইরাস। প্রতিদিন ঝরছে প্রাণ।

এমন পরিস্থিতিতেও থেমে নেই প্রকৃতিপ্রেমীরা। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার পরই ছুটছেন পাহাড়, সমুদ্র, আর ঝরনায়। স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছে আবার অনেকেই তোয়াক্কা করছেন না। সে প্রসঙ্গে না এসে রূপসী ঝরনার গল্পটাই বলি।

কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ি ঝিরিপথ পাড়ি দেওয়ার পর ঠাণ্ডা জল জুড়িয়ে দেয় প্রাণ। প্রকৃতির রুক্ষতাকে কাঁটিয়ে ঝুম বর্ষায় পাহাড়ের রূপে অন্য রকম আবহ। চারপাশ জুড়ে সবুজে সাজানো। ঝিরিপথ ধরে হাটতে হাটতে কানে ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির, রংবাহারি প্রজাপতির আনাগোনা। পথে পথে যেতে যেতে দেখা মিলবে পাহাড় আর ঝিরিপথের নান্দনিক সৌন্দর্য। মাইল চারেক হাটার পর কানে ভেসে আসবে ঝরনার কলতান, চোখ জুড়ানো রূপ রূপসীর। মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বড়কমলদহ পাহাড়ের রূপসী ঝরনার রূপে মোহাবিষ্ট প্রকৃতিপ্রেমীরা। প্রতিদিন শতশত পর্যটকে মুখর থাকে এ ঝরনাটি।

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে পর্যটকদের কাছে টানছে রূপসী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিস্ময় রূপসী ঝরনা। প্রতিদিন এই ঝরনা দেখতে ঢল নামছে পর্যটকদের। এবারের ঈদুল আজহার সময়টায় এ ঝরনায় পর্যটকদের আগমন ছিল চোখে পড়ার মত।

আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশের এই ঝরনায় রয়েছে অন্য রকম সৌন্দর্য। ঝরনাটি দেখতে যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন জলের ছড়া, পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, তিন ধাপের ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ রূপসীর সৌন্দর্যকে অন্য ঝরনা থেকে আলাদা করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঝরনার মায়াবী রূপ দেখে দর্শনার্থীরাই এর নাম দিয়েছে রূপসী ঝরনা।
 
এ ঝরনার তিনটি ধাপ। বড় কমলদহ ঝরনা, ছাগলকান্দা ও পাথরভাঙা ঝরনা। প্রথম ধাপটা বড় একটি ঝরনার মতো। অনেকটা খাড়া তবে ঢালু। বর্ষায় পুরো ঝরনা বেয়ে পানি পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে শুধু দক্ষিণ দিকটায়। ভেতরের রূপ আরো বেশি সুন্দর। উপরে উঠলে খোলা একটা জায়গা। তারপর একটা বড় পাথর। এই পাথরের মাঝ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। দশ ফুটের খাড়া পাথরটি বেয়ে উঠতে পারলেই এবার অন্যরকম এক সৌন্দর্য। বিশাল ছড়া, তবে বেশ আঁকাবাঁকা। ঠিক বয়ে চলা কোন নদীর মতো।

দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। শাঁ শাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। আবার মূল ঝরনায় যাওয়ার পথে দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও রং বেরংয়ের কীট পতঙ্গ। শোনা যাবে ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন, অচেনা পাখিদের ডাক। সবকিছু মিলে এ এক অন্যরকম অনুভূতি।  

ইতোমধ্যে রূপসী ঝরনার রূপের খবর ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে পৌঁছে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। যে কারণে বর্তমানে প্রতিদিনই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন এখানে। এবারের ঈদুল আজহার ছুটির দিনগুলোতে এ ঝরনায় ছিল উপচে পড়া ভিড়।

যেভাবে যাবেন রূপসীতে
বাস যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের বড়দারোগাহাট বাজারে নামতে হবে প্রথমে। মিরসরাইয়ের বড় দারোগারহাট বাজারের সামান্য উত্তরে ব্রিকফিল্ড সড়ক ধরে পূর্ব দিকে আধা কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই রেললাইন। রেললাইন পেরুলেই পথ, দুপাশে সবুজ ফসলের মাঠ পেরিয়ে সামনে গেলে পাহাড়ের বিশালতা। সেই পথ ধরে একটু এগিয়ে গেলে পাহাড়ের পাদদেশ। বাঁ দিকে ৫০ গজ হাঁটলেই বিশাল ছড়া। যেটি রূপসীর প্রবেশপথ। তা ধরে মাইল খানেক হাটার পর রূপসীর প্রথম ধাপটা বড় একটি ঝরনার মত। অনেকটা খাড়া তবে ঢালু।
 
বর্ষায় পুরো ঝরনা বেয়ে পানি পড়ে। অনেকেই মনে করে রূপসী শুধু এটাই। কিন্তু এটি রূপসীর বাইরের রূপ। এরপর আরো হাঁটলে পাওয়া যাবে রূপসীর আরো দুটো ধাপ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
এসএইচডি/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।