ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

বিপদজনক মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলো, ঘটছে প্রাণহানি

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০
বিপদজনক মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলো, ঘটছে প্রাণহানি খৈয়াছড়া ঝরনায় ভিজছেন পর্যটকরা। ডানপাশে মৃত ব্যবসায়ী ফয়েজ আহমেদ প্রকাশ খাজু।

ফেনী: চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত পাহাড়ি বিভিন্ন ঝরনা ও ট্রেইলগুলো দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা। ঘটছে প্রাণহানি।

 

পাহাড়ি দূর্গম পথ হওয়ায় ঝিরিপথ পেরিয়ে উদ্ধার কাজ করতেও বেগ পেতে হয় সংশ্লিষ্টদের।  

গত কয়েক বছরে ডজনখানেক পর্যটক নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে এসব ঝরনায় গিয়ে।  

শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলেও ঘটেছে এমন একটি প্রাণহানির ঘটনা। উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ১০ স্তর বিশিষ্ট খইয়াছড়া ঝরনার ওপর থেকে নিচে পড়ে যান ফয়েজ আহমেদ প্রকাশ খাজু (৩৯)। তিনি ফেনী পৌরসভার বড়াইপুর গ্রামের ইদ্রিসের ছেলে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তার মরদেহ পাহাড়ের গভীর থেকে উদ্ধার করা হয়।

মিরসরাই থানার পরিদর্শক (অপারেশন) দীনেশ দাশ বলেন, শুক্রবার সকালে ফেনী জেলা থেকে ফয়েজ আহমেদসহ তার ৯ বন্ধু মিলে খৈয়াছড়া ঝরনায় যায়। ঝরনার একদম শেষ ধাপে ওঠার পর ফয়েজ আহমেদ পা পিছলে নিচে পড়ে যান। পরবর্তীতে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য মিরসরাই থানা পুলিশ, মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের যৌথ অভিযান শুরু হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নজরকাড়া পাহাড়ি ঝরনার কারণে পর্যটন স্পট হিসেবে মিরসরাইয়ের নাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝরনা দেখার জন্য মিরসরাইয়ে আসছেন পর্যটকরা। উপজেলার ৯ স্তর বিশিষ্ট খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছরা, সহস্রধারা, মহামায়া, বাওয়াছরা, রূপসী ঝরনা, বোয়ালিয়া ঝরনা, হরিণাকুণ্ড ঝরনা, সোনাইছড়ি ঝরনা নজর কেড়েছে ভ্রমণপিপাসুদের। তবে ঝরনাগুলোতে প্রশাসনের কোন নজরদারি না থাকায় এগুলোতে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু তারপরও প্রতিদিন শত শত মানুষ ঝরনার পানিতে শরীর ভিজিয়ে নিতে ছুটে আসছেন এখানে।

২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট উপজেলার বড়কমলদহ রূপসী ঝরনায় কূপে ডুবে মারা যান মেহেদী হাসান প্রান্ত (২১)। তিনি নাটোর জেলার জালালাবাদ গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম শহরের কর্নেলহাট প্রশান্তি আবাসিক এলাকায় থাকতেন। প্রান্ত চট্টগ্রাম শহরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট টেকনোলজির সিভিল ডিপার্টমেন্টের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন।  

সে বছরের ২৬ জুলাই খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে এসে পা পিছলে পড়ে যান মারা যান আবু আল হোসাইন মেমোরী (২৯) নামে এক পর্যটক।  তার বাড়ি বগুড়ার সদর উপজেলায়। তিনি ঢাকার টিকাটুলি এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।  

একই বছরের ২৮ জুন খৈয়াছড়া ঝরনায় আনোয়ার হোসেন নামে এক পর্যটক ওপর থেকে পড়ে মারা যান। তিনি ফেনী সদরের আব্দুল মজিদের ছেলে।

একই বছরের ২ এপ্রিল খৈয়াছড়া পাহাড়ি এলাকায় ঝরনার ওপর থেকে পা পিছলে পড়ে আশরাফ হোসেন (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে। চলতি বছরের ১২ জুলাই উপজেলার বোয়ালিয়া ঝরনা দেখতে এসে আটকা পড়েন ১৫ পর্যটক। ৪ ঘণ্টা চেষ্টার পর তাদের উদ্ধার করে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের একটি দল।  

একই বছরের ১৭ জুলাই মহামায়া লেকে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হন শাহাদাত হোসেন (২২) নামে এক যুবক। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১৯ জুলাই তার মরদেহ উদ্ধার করে। তার বাড়ি মিরসরাই উপজেলার সদর ইউনিয়নে।

২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট নয়দুয়ারিয়ার নাপিত্তাছড়া নিরঞ্জন দের ছেলে। একই বছরের ২৪ আগস্ট বড়কমলদহ রূপসী ঝরনায় ওপর থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবক। তার বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া এলাকায়।

ওই বছরের ১৫ জুলাই খৈয়াছড়া ঝরনার সাতটি স্তরের পঞ্চম স্তরে ওঠার পর স্থানীয় এক পর্যটক পা পিছলে পড়ে যান। এ সময় তাকে ধরতে যায় ওয়াসিম আসগর নামে এক যুবক । ওই পর্যটক সামান্য আঘাত পেলেও ওয়াসিম পাহাড়ের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন।  

২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর উপজেলার নাপিত্তাছড়া ঝরনায় সাঁতার কাটার সময় চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন মামুন (২২) মৃত্যু হয়। তিনি ফেনী জেলার শৈর্শদী এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে।

জানা গেছে, পর্যটকদের অসতর্কতার কারণে অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। তাই তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বেশকিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে মিরসরাই উপজেলা ও থানা প্রশাসন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া খেয়ালখুশি মতো গহীন জঙ্গলসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এলোমেলোভাবে বেড়াতে গিয়ে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ছেন অনেক পর্যটক। এর জন্য অনেকেই দর্শনার্থীদের দায়িত্বহীনতা ও অসংযত আচরণকে দায়ী করছেন। তবে পর্যটকদের নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতে সম্প্রতি ইকো গাইড ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ে ওঠার জন্য জুমারিং ও নামার জন্য র‌্যাপিং ভাড়া দিয়ে পর্যটকদের নজর কেড়েছেন বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।