ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

বাংলাদেশের ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম’ মুনলাই পাড়ায় একদিন

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
বাংলাদেশের ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম’ মুনলাই পাড়ায় একদিন মুনলাই পাড়া, ছবি: বাংলানিউজ

বান্দরবানের রুমা থেকে ফিরে: মেঘালয়ের মাওলিননংকে বলা হয় এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন গ্রাম। কোনো বিলাসিতা নেই সেখানে।

প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত উপকরণ দিয়ে সাজানো গ্রামটি। বাংলাদেশের মুনলাই পাড়াও অনেকটা মাওলিননং এর মতোই। এরই মধ্যে দেশের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে।

বান্দরবানের রুমা উপজেলার মুনলাই পাড়া। এখানেও কোনো বিলাসিতা নেই। সহজভাবে প্রাপ্ত জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে পাড়া। একদম গোছালো। প্রতিটি বাড়িই নান্দনিক, ছিমছাম। কাঠের বাড়িগুলোতে অর্কিডসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো। বাড়ির সামনে কোনোটা ঝোলানো, কোনোটা আবার সামনের মাটিতে।

রাস্তাগুলোতেও দু’একটা গাছের পাতা ছাড়া বিশেষ কোনো ময়লা-আবর্জনার দেখা নেই। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।

দুটো গ্রামের মধ্যে যে জিনিসটি খুব বেশি মিল রয়েছে সেটি হচ্ছে সম্মিলিত উদ্যোগ। আর সম্মিলিত উদ্যোগে যদি সবাই একমত হতে পারে তাহলে যেকোনো কাজ যে সুন্দরভাবে করা সম্ভব সেটা আরেকবার প্রমাণিত। মুনলাই পাড়ায় চমৎকার সামাজিকতা আছে। অনেকটা ইংরেজি এম আকৃতির গ্রামটা যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

আর এরকম উদ্যোগ থাকলে যে কেউ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সেখানে একটি মুনলাই সেন্টার করে দিয়েছে।  

মুনলাই পাড়া কমিটির সভাপতি থুয়াম লিয়ান বম বলেন, একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন গ্রাম করতে আমরা একমত। বাড়ির অভ্যন্তরে কিংবা উঠোন- সবখানে পরিচ্ছন্নতার ছাপ। ছোট-বড় সব আয়োজন আমরা সম্মিলিতভাবে করি। আমাদের ঐক্য গ্রামের মূল হাতিয়ার।

১৯৮৩ সালে স্থানীয় ৩০টি বম পরিবার সুনসংপাড়া থেকে এসে জনপ্রতি পাঁচ একর করে জায়গা নিয়ে মুনলাইপাড়ায় বসবাস শুরু করি। এখন ৫৮টি পরিবার পাড়ায় বসবাস করছে।

‘বেসক্যাম্প বাংলাদেশ’ গত তিন বছর ধরে মুনলাই পাড়ায় কাজ করছে। তারা মুনলাই পাড়ায় পর্যটনের মূল উদ্যোক্তা।

মুনলাই পাড়ার ট্যুরিজমের সমন্বয়ক ও স্থপতি শাহরিয়াজ আলম বলেন, আমরা একটা স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছি। স্বপ্নটি হচ্ছে একদিন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ সুন্দর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে মুনলাই পাড়াকে ঘোষণা করা হবে।

বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে তিন কিলোমিটারের ছোট-বড় পাহাড়িপথ পেরিয়ে দেখা মিলবে মুনলাই পাড়ার। মূলত বগালেকে যাওয়া পথে দেখা মিলবে। রাস্তার দুই ধার ঘেঁষা পাড়াটি। অন্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের বসতি বা পাড়ার তুলনায় মুনলাই পাড়া অনেকটা আলাদা।
 
পুরো পাড়ার এদিক-ওদিক কোথাও কোন ময়লা অবর্জনা নেই। সেখানকার ডাস্টবিনগুলোও দেখার মতো। নিজেদের গ্রামকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে অনন্য সব উদ্যোগ নিয়েছে মুনলাইপাড়া কমিউনিটি ট্যুরিজম কো-ম্যানেজম্যান্ট কমিটি।  

দেশের প্রথম কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম গড়ে উঠেছে এই মুনলাইতে। মাচাং করে বানানো ঘরগুলো বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি দিয়ে সাজানো। বাড়ির উঠান, বারান্দাগুলো কিংবা ঘরের ভেতরে সবখানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন আকারের গাছ লাগানোর টপ। তাতে লাগানো বিভিন্ন জাতের অর্কিড। ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলোতে বিলাসিতার ছাপ না থাকলেও আছে ছিমছাম পরিপাটি এবং গোছানো।

মেঘালয়ের মাওলিননং গ্রাম যেভাবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে, ঠিক তেমনি পরিচিতি বয়ে আনতে পারে মুনলাই পাড়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতা বাড়লেও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় আমরা এখনো পিছিয়ে। দেশের ভেতর এমন একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন গ্রাম অনুকরণীয় হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
এডি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।