ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পাবনার হাটগ্রাম ‘সোনালি সৈকতে’ ভ্রমণপিপাসুদের ভিড়

মুস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
পাবনার হাটগ্রাম ‘সোনালি সৈকতে’ ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় ...

পাবনা: পাবনা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হাটগ্রাম সোনাগাদোর বিল। ভাঙ্গুড়া ও ফরিদুপর উপজেলার শেষ প্রান্তে এই বিলের অবস্থান।

মাছ আর কৃষি ফসলের বিশাল এই বিল অঞ্চলে বছরের ৫ থেকে ৬ মাস পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। বর্ষায় এই বিলে পানি প্রবেশ করে থৈ-থৈ করে চারপাশ। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিনোদন প্রিয় মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন এ বিলে। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের আনন্দ যেন উপভোগ করেন তারা এই  বিলে এসে।  

মুক্ত বাতাসে বিলের পানিতে নৌকায় ভ্রমণ করেন অনেকেই। বিশাল এই জলরাশি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে স্থানীয়রা স্থানটির নাম দিয়েছেন হাটগ্রাম ‘সোনালি সৈকত’।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই বিল পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এই অঞ্চলের মানুষের কৃষি জমির জন্য বিলের পানি ব্যাপক উপকার করে থাকে। বিলের স্থির পানি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বিনোদন প্রিয় মানুষ ছুটে আসেন সেখানে। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বিশাল আকাশ আর মুক্ত বাতাসে বিলের পানিতে আনন্দ ভ্রমণ করেন অনেকেই। বর্ষার সময়ে এ অঞ্চলের কর্মহীন কৃষকের অর্থ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয় এই ‘সোনালি সৌকত’। ২০১১ সালে স্থানীয় যুবসমাজ বিশাল নয়নাভিরাম এই কৃষি ফসলের পাশের জলরাশির নামকরণ করেন ‘সোনালি সৈকত’। বিলের মাঝ দিয়ে ছুটে চলা সড়কের দুই পাশে অথৈ পানি। শহর থেকে ছুটে আসা বিনোদন প্রিয় মানুষগুলোকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

করোনাকালীন একটু প্রশান্তি আর মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াতে প্রতিদিন শতশত মানুষ ভিড় করছেন এই সোনালি সৈকতে। ঈদের পর থেকে এই স্থানটিতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সমাগম একটু বেড়েছে। বিশেষ করে ছুটির দিনে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে বিলটি।  

বর্ষায় বিল এলাকাতে পানি থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ে স্থানীয় কৃষকেরা। সেসময় তারা নিজেদের ছোট বড় নৌকাগুলো নামিয়ে নেন বিলে। বেড়াতে আসা মানুষদের নৌকায় ভ্রমণ করিয়ে অর্থ উপার্জন করেন তারা।

কথা হয় স্থানীয় নৌকার সরদার আব্দুল লতিফ মোল্লার সঙ্গে। তিনি জানান, আগে বর্ষার সময় অলস সময় পার করতে হতো তাদের। বিলে মাছ ধরা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিলো না। এখন বর্ষার সময় বিলে সরকারি ও বে-সরকারিভাবে মাছ ছাড়া হয়। নির্দিষ্ট সময় পরে মাছ শিকার করতে পারেন তারা। কিন্তু বর্ষায় কৃষিকাজ বন্ধ থাকে। এ সময়টা তারা এই সোনালি সৈকতে নৌকা চালিয়ে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই স্থানে মানুষ বেড়াতে আসেন। নিরাপত্তার কোনো সমস্যা নেই এখানে। সবাই খুব শান্তিপূর্ণভাবে এখানে ঘুরে বেড়াতে পারেন।

স্থানীয় বেশ কিছু যুবকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, একটা সময় ছিলো যখন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভয়ে এই অঞ্চলে সন্ধ্যার পরে মানুষ যাতায়াত করতো না। রাস্তা ছিলো না। বর্ষার সময় মানুষের একমাত্র যানবহন ছিলো নৌকা। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালীন নকশাল আর বাহিনী নামে দুটি দলের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিলো এই বিল অঞ্চল। কি নাই আমাদের এই সোনালি সৈকত এলাকাতে। এই বিলে প্রচুর পরিমাণ সোনালি পাট, ধান আর মাছ হয়ে থাকে। এক সময়ের পরিত্যক্ত অবহেলিত স্থানটি এখন মানুষের আগমনে মুখরিত থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে এখানে মানুষ ভ্রমণ করতে আসে। এই বিশাল নয়নাভিরাম দৃশ্যের স্থানটিকে পর্যটন স্থান হিসেবে ঘোষণার দাবি স্থানীয়দের। সৈকতের স্থানটিতে যে সব সমস্যা রয়েছে তার সমাধান করে পর্যটনের উপযুক্ত করা দাবি তাদের।

বিলে ঘুরতে আসা একাধিক দর্শনার্থীরা জানান, জায়গাটি অনেক সুন্দর। আরো সুন্দর করা সম্ভব যদি প্রশাসন চায়। এই স্থানটির কিছু সমস্যাও রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের জন্য পাবলিক টয়লেটসহ জায়গাটিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন রাখার কথা বলেন তারা।

স্থানীয়দের দাবির বিষয়ে কথা হয় পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহামুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চাটমোহরে একটি বিল অঞ্চলকে বিনোদন এলাকা হিসেবে উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। হাটগ্রামের সোনালি সৈকত নিয়েও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটন শিল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যে এই স্থানটিরও উন্নয়ন কাজ করা হবে এবং নিরাপত্তাসহ ওই স্থানটিকে ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হবে।

জেলার ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার অংশে বিশাল এই জলরাশির বিল অঞ্চল কৃষির জন্য বেশ সমৃদ্ধ। কয়েক হাজার একর কৃষি ফসলের মাঠ নিয়ে এই সোনালি সৈকতের অবস্থান। যাতায়াতের রাস্তার অবস্থা বেশ নাজুক। সৈকতের স্থানটি কচুরিপানাতে ছেয়ে গেছে। রয়েছে টয়লেটসহ বসার স্থানের সমস্যা। স্থানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে ২০০৮ সালে এটির নামকরণ সোনালি সৈকত করা হয়। জেলা পরিষদ ওই স্থানটিতে একটি যাত্রী ছাউনি করে দিয়েছে। ২০১২ সালে এই স্থানটির নামকরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মকবুল হোসন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।