ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

খোলেনি শুধু খুলনার পার্কের তালা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
খোলেনি শুধু খুলনার পার্কের তালা খুলনার পার্ক

খুলনা: টানা ১৭ মাস ধরে তালা ঝুলছে খুলনা মহানগরীর পার্কগুলোতে। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় পার্কের অভ্যন্তরের রাইডগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে আসায় ২০২০ সালের অনেক জায়গার পার্ক খোলা হলেও খুলনার ৭টি পার্ক সে সময় খোলা হয়নি। এমনকি বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুসারে সারা দেশের সব বিনোদনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হলেও খোলা হয়নি খুলনার পার্কগুলো।

এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, খুলনায় কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই বললেই চলে। একমাত্র পার্কগুলোই নির্মল বিনোদনের স্থান। সব জায়গার পার্ক খুলে দেওয়া হলেও কি কারণে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রিত পার্কগুলো খোলা হয়নি তা জনগণের কাছে পরিষ্কার করা উচিত কর্তৃপক্ষের। তারা দ্রুত খুলনার সব পার্কগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার সকালে নাগরিক নেতা জনউদ্যোগ খুলনার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে সরকার নির্দেশ দিয়েছে বিনোদন কেন্দ্র খুলে দিতে। এমনিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যেখানে সরকার বলছে পার্ক খুলে দাও, সেখানে পার্ক না খোলার কোনো কারণ থাকতে পারে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুদের বিনোদনের সুযোগ দেওয়া উচিত। অনন্ত পক্ষে তারা অসুস্থতা থেকে বাঁচুক।  
জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত খুলনার ৭টি পার্ক। পার্কগুলো হলো- হাদিস পার্ক, জাতিসংঘ শিশু পার্ক, সোলার পার্ক, গোলকমনি পার্ক ,নিরালা পার্ক, লিনিয়ার পার্ক ও খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক। ২০২০ সালের ১৯ মার্চ থেকে নগরীর সাতটি পার্কে জনসমাগম নিষিদ্ধ করে নগর সংস্থা । সেই থেকে পার্কগুলো বন্ধ রয়েছে। ঘরবন্দি শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। এছাড়া এসব পার্কে প্রতিদিন প্রাতঃভ্রমণ ও শরীরচর্চা করতেন যারা তারাও রয়েছেন মহাবিপাকে।  

এসব পার্কে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান, গত বছর পার্ক বন্ধের পর আর খোলেনি। কিন্তু প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা অভিভাবক ও শিশুরা পার্কে এসে বন্ধ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেরত যাচ্ছেন। এছাড়া কেউ কেউ পার্কের ভেতরে প্রবেশের জন্য চেষ্টা চালায়। অনেকে প্রবেশ করতে না পেরে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হন।

সোনাডাঙ্গা এলাকার সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ। সন্তানদের নিয়ে মহা বিপদে আছি। পার্কে নিয়ে একটু ঘুরে আসবো তারও উপায় নেই। সব পার্ক বন্ধ। বাচ্চারা দীর্ঘ দিন বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারে না। তার প্রশ্ন সব জায়গার পার্ক খোলা হলেও খুলনার পার্ক খুলতে সমস্যা কোথায়? 

এদিকে পার্কগুলো বন্ধ থাকায় খুলনার মানুষ বিনোদনের জন্য খোলা জায়গাকে বেছে নিয়েছেন। বিশেষ করে ৭ নং ঘাট ও রূপসা সেতুতে যেত এখন তাদের ভরসা। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় করছেন বিভিন্ন রাস্তার পাশেও ।

তবে বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বটিয়াঘাটার রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (ওয়ান্ডারফুল কিংডম) ও গিলাতলা চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক খুলেছে।

আগুয়ান-৭১ এর প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় করোনা লাগামহীন থাকায় একটি দীর্ঘ-সময় লকডাউন পালন করতে হয়েছে। নানান বিধিনিষেধে দীর্ঘ দিন চার দেওয়ালে আটকে থেকে আমাদের শিশুরা নানান মানসিক সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুদের জন্য বিনোদনকেন্দ্রগুলো এবং একইসঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকদের হাঁটাচলার সুযোগ করে দিতে খুলনার পার্কগুলো খুলে দিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পার্কের দায়িত্বে থাকা অ্যাস্টেট অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র আজ অফিসে আসবেন। তারপর পার্ক খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে যেহেতু পার্ক শব্দটা উল্লেখ নাই। এখানে রয়েছে পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র। তারপরও পার্ক বিনোদন কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, তাই আজকে সব হাই অফিসারের সঙ্গে পার্ক খোলা নিয়ে কথা বলবো।  

ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ মেয়র অফিস করবেন। পার্ক খোলার বিষয়টি মেয়রের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তবে যেহেতু সরকারি নির্দেশনা রয়েছে, সেই দিক বিবেচনা করে আমরা আলোচনা করবো।  

বাংলাদেশ সময় ঘণ্টা: ১০২৬, আগস্ট ১৯, ২০২১
এমআরএম/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।