ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

বনবিভাগ-ইজারাদারের টানাপোড়েন

রাতারগুলে দ্বিগুণ নৌকাভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন পর্যটকরা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২২
রাতারগুলে দ্বিগুণ নৌকাভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন পর্যটকরা

সিলেট: সংরক্ষিত রাতারগুল বনে ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে বাঁধ। সেজন্য বনের শ্রেণির রকম পরিবর্তন করছে বন বিভাগ।

তাদের সৃষ্ট লেকে নৌকা রেখে পর্যটকদের কাছ থেকে বাড়তি সাড়ে ৭শ’ টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অথচ নৌকায় চড়ে বনের ধারে নেমে পর্যটকদের প্রথমেই গুনতে হয় ৮৫০ টাকা। ফলে রাতারগুল ঘুরতে আসা পর্যটকদের দুই দফা ভাড়া দিতে হচ্ছে।

গত আগস্ট মাস থেকে এমন ঘটনা ঘটছে সিলেটের সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুলে। এ নিয়ে পর্যটকরাও ত্যাক্ত বিরক্ত। অনেকে ক্ষোভ থেকে সিলেট বিদ্বেষী মনোভাবও পোষন করছেন। আর ভাড়া আদায়ে টানাটানি নিয়ে পর্যটক ও ইজারাদারদের মধ্যে বিরাজ করছে।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, বনের ভেতরের নৌকায় টাকা আদায় বৈধ, বরং ইজারাদার টাকা নিতে পারেন না। আর ইজারাদার বলছেন, জেলা পরিষদের ইজারা শর্তে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত তাদের আওতাধীন। বরং বনের ভেতর ও ইজারা বহিঃর্ভূত অন্য দু’টি ঘাটে টাকা আদায় হচ্ছে বন বিভাগের যোগসাজসে। আর বনবিভাগ বলছে, জেলা পরিষদ নদীর খেয়াঘাট ইজারা দিয়েছে। সেটি রাতারগুলের আওতায় পড়ে না।     

সরেজমিন দেখা গেছে, রাতারগুল জলারবনে ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন স্থানে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করেছে বন বিভাগ। ভূমির রকম পরিবর্তন করে তৈরিকৃত লেকে অন্তত ৩০টি নৌকা রেখে পর্যটকদের কাছ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী পথে নৌকায় গিয়ে বনের পাশে নেমে প্রথমেই পর্যটকদের গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৮শ’ টাকা। বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের ইজারাদার ও বন বিভাগ একে অপরকে দোষারোপ করছে।  

সংরক্ষিত এই বনে ঢোকার জন্য ৩টি ঘাট রয়েছে। এরমধ্যে চৌরঙ্গী ঘাট, ফিরিঙ্গিঘাট ও মটরঘাট। সম্প্রতি মটরঘাটটি (খেয়াঘাট) ইজারা দিয়েছে সিলেট জেলা পরিষদ। কিন্তু ওই ঘাটের ২ কিলোমিটার এলাকা ইজারার আওতায় এনে সাইনবোর্ডে টানিয়ে দিয়েছেন ইজারাদার। মোটরঘাট দিয়ে নদীপথে যাতায়াতকারী পর্যটকদের বনের পাশে নেমেই ৮শ’ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। এরপর পায়ে হেঁটে বনের ভেতরে ঢুকে জলাশয়ে রাখা নৌকা দিয়ে ঘুরতে আরও সাড়ে ৭শ’ টাকা দিতে হয়।

রাতারগুল মটরঘাটের ইজারাদার আনসার আলী বলেন, বন বিভাগের লোকজন জলারবনের ভেতরে প্রভাবশালীদের সহায়তায় পানি আটকিয়ে লেক সৃষ্টির জন্য বাঁধ দিয়েছেন। সেখানে ৩০টি নৌকা ঢুকিয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে আলাদাভাবে সাড়ে ৭শ’ টাকা করে নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে পর্যটকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ভ্যাট-ট্যাক্স  আরো ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা আদায় করছেন। আ র বর্ষায় বনে নৌকা প্রবেশ করাতে গেলে আরও ১১৫ টাকা করে দিতে হয় বন বিভাগকে।

তিনি বলেন, গত জুলাইয়ে মটরঘাট ইজারা নিয়েছি ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ৯ লাখ টাকায়। ইজারায় উল্লেখ আছে, পর্যটকবাহি সব নৌকা ইজারাদারের আওতায় থাকবে। কিন্তু বন বিভাগের যোগসাজসে বনের ভেতরে বাঁধ দিয়ে সৃষ্ট লেকে ইজারা বহিঃভূত ঘাটগুলোয় অন্তত ৩০টি নৌকা রেখে পর্যটকদের কাছ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা ও ভ্যাট-ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। যে কারণে দুই দফা টাকা দিয়ে পর্যটকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

তবে বন বিভাগের দাবি, বাঁধটি আগে থেকেই ছিল। কে বা কারা মাছ মারতে বাঁধ কেটে দেয়। এখন তারা সেই বাঁধ মেরামত করেছেন।

বন বিভাগ রাতারগুলের বিট অফিসার মো. আব্দুল ওদুদ বলেন, বনের ভেতরের লেকটি আগে মাছ ধরার জন্য ইজারা দেওয়া হতো। এখন কেউ মাছ ধরতে পারেন না। ভেতরে পানি আটকে রাখায় লেকে পর্যটকরা ঘুরতে পারেন। এ জন্য উপজেলা প্রশাসন নির্ধারিত নৌকা প্রতি ৭৫০ টাকা আদায় করা হয়। এই টাকা থেকে ১১৫ টাকা ছাড়াও পর্যটক প্রতি আদায়কৃত ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা বাংলাদেশ ব্যাংকে রাজস্বখাতে জমা হয়। তারা সিএমসির কমিটির মাধ্যমে এই টাকা আদায় করে থাকেন।

তবে ভেতরে নৌকাগুলো চৌরঙ্গী ও ফিরিঙ্গি ঘাটের স্বীকার করে তিনি বলেন, নিরীহ লোকজন ভেতরে নৌকা চালিয়ে উপকৃত হয়। কিন্তু মোটরঘাট কেবল খেয়ার জন্য ইজারা দেওয়া। অথচ তারা নদীপথে নৌকায় পর্যটকদের বনের ধারে নামিয়ে দিয়ে ৮৫০ টাকা আদায় করে থাকে। ইজারাদার ২ কিলোমিটার সংরক্ষিত ঘোষণা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। এ নিয়ে জেলা পরিষদের সঙ্গে চিঠি চালাচালিও করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, ৩দিক থেকে রাতারগুলে ঢোকারা যায়। মটরঘাট ইজারা হলো খেয়াঘাটের জন্য সেটি সদর উপজেলায়। কিন্তু জলারবনের অবস্থান গোয়াইনঘাট উপজেলায়। পর্যটকরা বেশি মটরঘাটে নেমে নদী পথে নৌকায় চড়ে বনের ধারে নামেন। তাদের কাছ থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকা আদায় করা হয়। তবে ভেতরে রাখা নৌকার ভাড়া উপজেলা প্রশাসন নির্ধারিত। মূলত, অন্য দু’টি ঘাট থাকলেও সেটি ইজারার মধ্যে নয়। কেবল সাড়ে ৭শ’ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।

তিনি বলেন, বনে ইঞ্জিন নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু ইজারাদার বাইরে নদীপথে পর্যটকদের বনের কাছে নামিয়ে দিয়ে সাড়ে ৮শ’ টাকা করে আদায় করছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদ ও বন বিভাগের সঙ্গে জেলা প্রশাসনে বৈঠকও হয়। জেলা পরিষদ ইজারার আওতায় ২ কিলোমিটার দাবি করছে। সাইনবোর্ডও টাঙিয়েছেন। আর বন বিভাগ দাবি করছে, এটি তাদের এলাকা। এ নিয়ে ডিডি এলজিইডিকে প্রধান করে কমিটি হলেও তা এখনো অমিমাংসিত থেকে গেছে।  

তিনি আরও বলেন, পর্যটকবাহি গাড়িগুলোকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ইজারাদারের লোকজন মটরঘাটে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। অথচ অন্য দু’টি ঘাটে গেলে পর্যটকদের বাড়তি টাকা গুনতে হতো না।

এদিকে, বনের ভেতরে অপচনশীল বর্জ্য ফেলার বিষয়ে বিট কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওদুদ আরও বলেন, আমরা সপ্তাহে দু’দিন পরিষ্কার করে থাকি। তাছাড়া পর্যটকদের সচেতন করতে বনের ভেতর সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২২
এনইউ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।