মেলার শুরুর দিন থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে মেলায় সবচেয়ে বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে প্রসাধনী, ফুডস ও ক্রোকারিজ পণ্যের স্টলগুলো।
বুধবার (২৭ মার্চ) সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ের গ্র্যান্ড বলরুমে চার দিনব্যাপী থাই ট্রেড ফেরারের উদ্বোধন করেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। মেলা উদ্বোধনের পর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত হন ব্যবসায়ীরা।
বাংলানিউজকে ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশের বাজারে তাদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অতীতেও মেলা শুরুর দিন থেকেই তারা ভালো সাড়া পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে ইন্টারন্যাশনাল হোমওয়্যারের সহকারী অপারেশন ম্যানেজার মো. সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, থাইল্যান্ডের ক্রোকারিজ পণ্য নিয়ে আমরা প্রতিবছরই মেলায় অংশ নেই। পণ্যের প্রচুর চাহিদা থাকায় মেলার শেষ দিনে গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী সাপ্লাই দিতে পারি না। এবারের মেলায়ও এর ব্যতিক্রম হবে না।
মেলায় থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলের বিরাট সমাহার দেখা গেছে। থাই বিমস্টেক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেডের স্টলে প্রায় শতাধিক সুস্বাদু ফলের সমারোহ দেখা গেছে। এর মধ্যে রাম্বুটান, চেরি ম্যাঙ্গো, ড্রাগন, ম্যাঙ্গো স্টিন, থাই ডুরিয়ান, থাই আম, থাই পেপে, রকমিলন, সুইট ম্যাংগো, হানি মিলন, কমলা ও মিষ্টি তেঁতুল রয়েছে।
তেঁতুল ছাড়া সব ফলের দামই কেজি প্রতি ৫০০ টাকার উপরে। তেঁতুল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা করে। দাম বেশি হলেও তাদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের সেলস এক্সকিউটিভ। তিনি বলেন, আমদানিতে খরচ বেশি হওয়ায় পণ্যের দাম একটু বেশি।
ফল কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, আজ কয়েক বছর যাবৎ এই মেলায় আসছি। প্রতিবারই এখান থেকে ফল কিনি। মানের দিক থেকে ভালো তবে বাজার থেকে দাম একটু বেশিই।
আল-আরাফাহ্ ইসলামি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সামসুল হুদা বাবর বাংলানিউজকে বলেন, ইউরোপের কোনো পণ্য কিনতে গেলে দাম বেশি। থাই পণ্যের কোয়ালিটি ভালো এবং দাম একটু কম হওয়ায় মানুষ এখান থেকে পণ্য কিনবে।
মেলায় তরুণীদের ভিড় ছিলো প্রসাধনী সামগ্রীর স্টলে। থাইল্যান্ডের আসল পণ্য কিনে সন্তুষ্ট নার্গিস বেগম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখানে এসে থাইল্যান্ডের আসল পণ্যটা পাই। শুধু তাই নয় বাজার থেকে দামটাও তুলনামূলক কম বলে তিনি জানান।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডের উদ্যোক্তাদের অনেকেই এরইমধ্যে এ দেশে ডিলারের মাধ্যমে তাদের পণ্য বাজারে বিপণন করছেন। কোনো কোনো উদ্যোক্তা অংশ নিয়েছেন ডিলার সংগ্রহের জন্য।
অন্যদিকে ১৮ বছর যাবৎ এই মেলায় অংশ নিচ্ছে ব্যাংকক হসপিটাল। থাইল্যান্ডে ডাক্তারদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, ভালো চিকিৎসা সেবা ও ভিসা সহায়তা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ ব্যাপারে ব্যাংকক হসপিটাল বাংলাদেশ অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নীলাঞ্জন সেন বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৮ বছর যাবৎ আমরা এই মেলায় অংশ নিচ্ছি। ব্যাংকক হসপিটাল পৃথিবীতে তাদের ৫০টি ব্রাঞ্চ রয়েছে। আমরা বিশ্ব মানের স্বাস্থ্য সেবায় একধাপ এগিয়ে রয়েছে। আমরা প্রতিটি রোগীকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যয়, পরিবহন সুবিধা এবং ভিসা সহজীকরণে সহায়তা করে থাকি।
অপরদিকে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের সমাহারও দেখা গেছে মেলায়। অত্যাধুনিক পানির ফিল্টার, বিভিন্ন রকম লাইট, ক্রোকারিজ পণ্য, ইলেক্ট্রিক সুইচসহ হরেক রকমের পণ্যও এ মেলায় স্থান পেয়েছে। যার সবই থাই প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের থাই দূতাবাস ও থাইল্যান্ডের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথ আয়োজনে মেলায় প্রদর্শিত প্রধান পণ্য সমূহ ও সেবার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা, প্রসাধনী, গার্মেন্টস ও ফ্যাশনসামগ্রী, ইলেকট্রনিক পণ্য, জুয়েলারি, স্পা, ফলমূল, খাবার-পানীয়, কনফেকশনারি, সাজ-সজ্জার উপকরণ, জুতা-মোজা, চামড়াজাত পণ্য ও গৃহস্থালি বিভিন্ন পণ্য। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ ও উদ্যোক্তারা আসল থাই পণ্য ও সেবার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন।
মেলায় মোট ৭৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। মেলায় থাই শিল্পীদের পরিবেশনায় থাই ক্ল্যাসিকাল ডান্স শো প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৯
এসএমএকে/এমজেএফ