ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

চিত্রা হরিণের খোঁজে নিঝুম দ্বীপ

মো. অহিদ উল্লাহ পাটোয়ারী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
চিত্রা হরিণের খোঁজে নিঝুম দ্বীপ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নিঝুম দ্বীপ! নামটা শুনলেই মনটা কেমন যেন ছটপট করতে থাকে। অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ‘ঘুরে বেড়াই বাংলাদেশ’ দলের বন্ধুরা রওনা দিই সেই না দেখা গন্তব্যের উদ্দেশে।



বাস,ট্রলারে ঢেউ আর জলদস্যুর ভয় ‘জয়’ করে আমরা নিঝুম দ্বীপে পৌঁছালাম আমরা।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ছোট্ট একটি ভূ-খণ্ড, যা আমাদের সবার কাছে নিঝুম দ্বীপ নামেই পরিচিতি।

দ্বীপটির প্রাচীন নাম চর ওসমান। ওসমান নামের এক ব্যক্তি মহিষের পাল নিয়ে সর্ব প্রথম এই দ্বীপে বসবাস শুরু করেন। দ্বীপটি সম্পূর্ণ নির্ঝন আর নীরব হওয়ায় এর নামকরণ করা হয় নিঝুম দ্বীপ।

দ্বীপের বুক দিয়ে চলা যাওয়া রাস্তায় আমরা হাটতে থাকি। আর প্রাণ ভরে দেখি এ দ্বীপের অপর‍ূপ সৌন্দর্য।

এই সৌন্দর্যের হাতছানি সবকিছুকে ছাপিয়ে ‘ঘুরে বেড়াই বাংলাদেশ’ দলকে এখানে নিয়ে এসেছে।
 
রাতে থাকার জন্য স্থানীয় একটি হোটেলে গিয়ে উঠলাম। এ দ্বীপে কোনো বিদ্যুতের আলো নেই। তবে সন্ধ্যে গড়িয়ে এলেই জ্বলে উঠে সৌর বিদ্যুতের আলো। আছে জেনারেটরের ব্যবস্থাও। তবে তা রাত এগারোটার পর আর থাকে না।

আঁধার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গেই চারিদেক নীরবতা নেমে এলো, আর তখনই মনে হচ্ছিল যে, সত্যিই  ‘নিঝুম দ্বীপ’ নামটি সার্থককতা খুঁজে পেয়েছে।

চিত্রা হরিণ ভর্তি দ্বীপ, কুমিল্লা থেকে এমনটা শোনা গেলেও হরিণ দেখার জন্য অনেক ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। নানা জাতের মাছ ও পাখি তো রয়েছেই। আছে মহিষের পালও।

মাছ, পাখি আর মহিষ হার-হামেশা দেখা মিললেও হরিণ দেখার উপযুক্ত সময় হলো সূর্যাস্ত বা সূর্যাদয়ের সময়।

এ সময় শত শত হরিণ বন থেকে বের হয়ে আসে পানি খাওয়ার জন্য। তবে তাদের দেখা পেতে নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে হবে।

আমরাও হরিণ দেখতে ঘর থেকে বের হলাম দিনের আলো ফোটার আগেই। গাইড হিসাবে সঙ্গে নিলাম স্থানীয় কিশোর রাসেলকে।

রাসেল আমাদের নিয়ে চললো গহীন অরণ্যের দিকে। নামারবাজারের পাশে ছোট্ট একটা খাল পেরিয়ে হাঁটতে থাকি গহীন জঙ্গলের দিকে।

পথে একটা আজব শব্দ কানে এলো, রাসেল বললো, এটাই হরিণের ডাক। এতো সুন্দর প্রাণীর আওয়াজ এমন হয়!

আমরা ছুটেছিলাম দুর্বার গতিতে। কিছুক্ষণ পর ইব্রাহীম বললো, অনেকটা ভেতরে চলে এসেছি। ফিরে যাওয়ার পথটাও হয়তো হারাতে বসছি, তাই পিছুহটা উচিৎ!

তবে এতে কারও কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সবাই প্রকৃতির সৌন্দর্য, ম্যানগ্রোভ আর কেওড়া ফলের আস্বাদন নিতে ব্যস্ত।

এরইমধ্যে সবাই ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি। কিন্তু জাহাঙ্গীরের বায়না-‘নিজের চোখে হরিণ না দেখে ফিরছি না। ’

আবারও হাঁটতে থাকি হরিণের খোঁজে। আর একটু ভেতরে যেতেই রাসেল আমাদের গতি থামিয়ে দিয়ে বললো, সবাই চুপ! হরিণ পায়ের আওয়াজ পেলেই পালিয়ে যায়। প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর দেখা মিলল, সেই হরিণের দেখা।

শত শত হরিণ দল বেঁধে চলছে, তবে মানুষের অস্তিত্ব টের পেলেই নাই হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই।

কীভাবে যাবেন:

ঢাকার মহাখালী, কমলাপুর ও সায়েদাবাদ থেকে এশিয়া লাইন, এশিয়া ক্লাসিক, একুশে এক্সপ্রেস ও হিমাচল এক্সপ্রেসের চলাচল করে নোয়াখালীর সোনাপুর রুটে। ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪৫০ টাকা।

বাসে সোনাপুর নেমে সিএনজি অটোরিকশায় করে চলে যান চেয়ারম্যান ঘাট। ভাড়া গুনতে হবে ১০০ টাকা।

এরপর ট্রলারে চড়ে যেতে হবে নলচিরা ঘাটে। জনপ্রতি ভাড়া ১৫০ টাকা। সেখান থেকে আবারও বাসে জাহাজমারা বাজার। জনপ্রতি ভাড়া দিতে হবে ৭০টাকা।

জাহাজমারা বাজার থেকে মোটর সাইকেলে মুকতারা ঘাট। ভাড়া পড়বে ৭০টাকা করে। সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় নিঝুম দ্বীপ ঘাট। ভাড়া জনপ্রতি ১০টাকা।

এরপর আবারও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে করে যেতে হবে নামার বাজারে (নিঝুম দ্বীপ)। সেজন্য আপনাকে ভাড়া দিতে হবে ৬০ টাকা।

তবে দেরি কেন? একটু সময় পেলেই দেখে আসুন নিঝুম দ্বীপের অরণ্যে হরিণ।

লেখক: মো. অহিদ উল্লাহ পাটোয়ারী, কুমিল্লার ভ্রমণ বিষয়ক ‘ঘুরে বেড়াই বাংলাদেশ’ দলের প্রতিষ্ঠাতা।

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- 
 


বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।