ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বিপাকে এশিয়া ট্যুরিজম প্রকল্প

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
বিপাকে এশিয়া ট্যুরিজম প্রকল্প ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জমি অধিগ্রহণ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থছাড় ও পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতায় শুরুতেই বিপাকে পড়ে সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প। সেই বিপাক এখনও কাটেনি।



বেধে দেওয়া সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু না হয়ে দু’বছর দেরিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে প্রকল্পটির সময় ও ব্যয় উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ধিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য এলাকার উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) একটি আঞ্চলিক প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটির শুরুতে যে জটিলতা দেখা দিয়েছিলো। সেটি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সূত্র জানায়, পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়নকে সামনে রেখে পর্যটন অবকাঠামোর অংশ হিসেবে সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও এখনও অবকাঠামোর কাজ অনেক বাকি।
 
প্রকল্পের আওতায় পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার, মহাস্থানগড়, কান্তজিউ (কান্তজির) মন্দির, ষাটগম্বুজ মসজিদ এ চারটি স্থানের বাইরে আরও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনযুক্ত এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ তেমন অগ্রগতি হয়নি।

সাধারণত বিদেশি পর্যটকরা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে এমন এলাকা ভ্রমণে এসে যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা চান। উন্নত মানের ফুড কোড, হাইজেনিক ফুড, রেস্ট হাউজ, সমৃদ্ধ জাদুঘর, পার্কিং সুবিধা ও স্বাভাবিকভাবে নিরাপত্তা প্রত্যাশা করেন। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় এখনও এসব কাজ বাস্তবায়ন করা হয়নি। নাম মাত্র শুরু হয়েছে প্রকল্পের কাজ।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রকল্পটি প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৫৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিলো জানুয়ারি ২০১০ সাল থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত। প্রকল্পের কাজ এখনও অনেক বাকি রয়েছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে সময় বাড়ানো হয়েছে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্প এলাকায় জমি অধিগ্রহণে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছিলো। সঠিক সময়ে এডিবি’র অর্থছাড় হয়নি। যে কারণে প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারিনি। এছাড়া বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রেও আমাদের বেগ পেতে হয়েছে।
 
প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পটি শুরু হওয়ার কথা ছিলো ২০১০ সালে। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে ২০১২ সালে প্রকল্পটি শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শুরুতে যে সমস্যায় পড়েছিলাম, তা এখনও কেটে উঠেনি।

সার্কভুক্ত আটটি দেশের মধ্যে সাতটি দেশ-বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মালদ্বীপের আঞ্চলিক ধারণার ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত ভৌগোলিক সীমারেখার ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর সংস্কৃতিভিত্তিক পর্যটন এলাকায় অবকাঠামো ও সেবামূলক কার্যক্রমের লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।

প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল-বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন সম্ভাবনাকে বিস্তৃত করা, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বিদ্যমান প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পর্ক আরও বাড়িয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়ন করা, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।

এছাড়া, প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নত করে পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধি ও তাদের অবস্থানকে দীর্ঘায়িত করা। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের উত্তর-দক্ষিণ ‘হেরিটেজ হাইওয়ে’ ধারণার অধীনে পর্যটকদের উন্নত সেবা দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের ভ্রমণ নিশ্চিত করা।

এর একটিও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ প্রকল্পটির নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়েছে ২০১৪ সালেই।

জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটক সংস্থার হিসেবে দেখা গেছে, ২০০৬ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটক বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছে, এর মধ্যে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন পর্যটক (মোট পর্যটকের ২০ শতাংশ) এশিয়াতে ভ্রমণ করেছে। এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যটন শিল্পের প্রসার খুব বেশি নয়। তবে প্রতি বছরই দক্ষিণ এশিয়ায় ১০ শতাংশ পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ১৫ মিলিয়ন অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক পর্যটক ভ্রমণ করার সম্ভাবনা আছে।

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে আড়াই লাখ আন্তর্জাতিক পর্যটক বাংলাদেশে ভ্রমণ করে। যা ২০০৬ সালে আগত পর্যটকের তুলনায় মাত্র ২৫ শতাংশ বেশি। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে যোগাযোগ সমস্যার কারণে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
 
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় ৩৯১টি জাতীয় হেরিটেজ রয়েছে। প্রতি বছরই কিছু নতুন এলাকা প্রত্নতত্ত্বের আওতায় আসছে। এগুলোর উন্নয়ন করলে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
 
এ বিষয়ে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও পর্যটন উইং) মো. রফিকুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। কারণ প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়িত হলে দেশে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সার্কভ‍ুক্ত দেশের সঙ্গে আমাদের একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠার পাশাপাশি দেশের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।

২০১৬ সালে দেশে পর্যটক সপ্তাহ পালন করা হবে, তার আগেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
এমআইএস/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।