পূর্ব প্রকাশের পর
বান্দরবান থেকে ফিরে: পথের আশেপাশে সব ঝিরিতেই উপচে পড়ছে পানি। তার এমন গর্জন মনে হয় একেকটা বিশাল ঝরনা।
তিড়িং বিড়িং করে একেকটা বিশাল চড়াই ভিঙোচ্ছে সে। প্রায় তিন ঘণ্টা হেঁটে আমরা পৌঁছালাম শৈরতন পাড়া, এগারো মাইল নামে জায়গাটি পারিচিত। সেখানে একটা বড় বিরতি। গরম ডিম আর পাহাড়ি কলা দিয়ে আমাদের আপ্যায়িত করলেন পাড়ার এক দিদি। সেখানে বগালেকের দিক থেকে আসা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে দেখা। একজন বললেন, দাদা আর বলবেন না, প্যাক হাবড়ে খুবই খারাপ অবস্থা। আমাদের তেমন পাত্তা নেই। এ পর্যন্ত তো ভালোই এসেছি।
বাকি পথটুকও ভালো যাবে। কিন্তু সকালের সূর্য যে সারাদিন কেমন যাবে তার সাক্ষ্য সব সময় দেয় না তা বুঝলাম কিছু দূর গিয়েই। শৈরতন পাড়া থেকে কিছুদূর গিয়েই দেখলাম পাহাড় ভেঙে আটকে আছে পুরো রাস্তা। আমরা সতর্ক হইনি। যেই পা পাড়ালাম ওমনি পা আটকে গেলো থিকথিকে মাটিতে। ওমা এ যে নীচে চলে যাচ্ছি ক্রমশ। ফিরে এলো ঠিক আগেরদিনের বান্দরবান থেকে রুমার আসার স্মৃতি। কোনোমতে নিজেকে টেনে তুলে এবার সতর্ক হয়ে বাকিটুকু পেরিয়েও এলাম।
তৌহিদ বলল, ভয় নেই সামনে আর কোনো ভাঙা নেই। তা যে অরণ্যে রোদন বুঝলাম আরেকটু সামনে গিয়ে। এবার সামনে পড়লো আরেকটি পাহাড় ভাঙা। আগেরটির অভিজ্ঞতা বলছে এটি ভালো মতোই ভোগাবে। কিছুটা অভিজ্ঞতা হওয়ায় এবার সাবধানে পেরোতে শুরু করলাম। কীসের অভিজ্ঞতা কীসের কি!!
একবার চিন্তা করুন, আপনাকে চড়াই ভাঙতে হচ্ছে যেটি নিজেই একটা চোরাবালি। লেখায় আর কতটুকুই বোঝানো যায়। জান হাতে নিয়ে যখন সেখান থেকে বের হলাম প্রত্যেকেই কাদায় মাখামাখি একেকটা ভূত। এরপর আর এমন ভয়ংকর প্যাক পড়েনি। বৃষ্টিতে সেদিন রাস্তার যা অবস্থা হয়েছিলো তাতে এ পথে চলতে বোধহয় ভয় পেতেন স্বয়ং তেনজিং নোরগেও। কাদাপানি আর পাহাড় ধসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে এসে পৌঁছালাম কমলবাজার। তার আগে নতুন পাড়ায় থামতে হয়েছিলো।
ইতোমধ্যেই ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে তিনটার বেশি বাজে। আজকের প্ল্যান কেওক্রাডংয়ে রাত কাটানো। কিন্তু তার আগে তো বগালেক উঠতে হবে। দেরি না করে শুরু করলাম বগালেক ওঠা। এ রাস্তায় যারা গিয়েছেন তারা সবাই জানেন পথের চড়াই সম্পর্কে। তার উপর দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। সহজেই অনুমান করতে পারছেন অবস্থা। আমাদের সামনে কিছুই করার নেই। ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। অন্তত বগালেকে তো রাত কাটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পথে বেশ খাঁড়া একটা বাঁক পুরোটাই ভেঙে পড়েছে।
এর আগে যে ভাঙাটি পার হয়ে এসেছি এটি তার চেয়েও ভয়ংকর। পা পিছলে গেলে একেবারে নীচে পড়তে হবে। উপর থেকে আসছিলো এক বম বুড়ো। তিনি তৌহিদকে ভয় দেখালেন বগালেক থেকেই যেন ফিরে যাই। আমরা বললাম আগে সে পর্যন্ত যাই তো। শেষ পর্যন্ত এভারেস্টের হিলারি স্টেপ পার হওয়ার মতো টলতে টলতে যখন রাস্তার মাথায় এসে দাঁড়ালাম চোখের সামনে তখন যেন জীবন দেখতে পাচ্ছি।
টলমলে জল বুকে আগলে বগালেক বলছে অনেক ক্লান্ত এবার একটু গা জুড়িয়ে নাও। কিন্তু মাথায় চেপেছে দুষ্টু বুদ্ধি। বগালেক পর্যন্ত যেহেতু এসেছি কেওক্রাডংয়েও রাতের মধ্যে পৌঁছাতে পারবো। কথাটা পারলাম, যদিও ভয় ধরিয়েছে জয়েল ভাইয়ের অবস্থা। পায়ে টান পড়েছে, তিনি জানালেন শ্বাসকষ্টও নাকি হচ্ছে। আচ্ছা ঠিক আছে নীচে যাই তো চলেন,আগে খাই দাই। শিউলি বমের বাড়িতে খাওয়ার ব্যবস্থা। গরুর মাংস, ভাত, ডাল। তার আগে সবাই পাঁচ-ছটা করে কলা সাবাড় করেছি। খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম করার ফাকে ঠিক হলো আজই কেওক্রাডং যাবো বগালেকে তাই বেশি দেরি করা যাবে না।
চলবে...
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক।
আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে। আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন-
বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৫
এএ
** ভরাযৌবনা শঙ্খ নদী হয়ে বগা লেকের পথে
** ২১ কিমি হেঁটে অবশেষে রুমায়!
** পাহাড়ের আড়ে বিধ্বস্ত বান্দরবানের অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যে