ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

দৃষ্টিনন্দন ভাসমান মার্কেট

পার্থ দাশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
দৃষ্টিনন্দন ভাসমান মার্কেট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আপনারা হয়তো বিভিন্ন দেশের ভাসমান মার্কেটের কথা শুনেছেন কিংবা টেলিভশনে দেখেছেন। অনেকে হয়তো অনেক টাকা খরচ করে দেখতেও গিয়েছেন।

কিন্তু জানেন কী? আমদের দেশেও বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন ভাসমান মার্কেট আছে।

আর এসব স্পট স্বল্প খরচেই ভ্রমণ করতে পারবেন। বাংলার ভেনিস হিসেবে পরিচিত বরিশাল। আর এ অঞ্চলের স্বরূপকাঠি ও ঝালকাঠির বিভিন্ন নদীতে দেখা মেলে এসব ভাসমান মার্কেটের।

এখানে কাছাকাছি ভিমরুলি, আটঘর এবং কুড়িয়ানা নামে তিনটি হাট আছে, যেগুলো ভাসমান। প্রথম দু’টিতে বসে মৌসুমি ফল আর সবজির পসরা। অন্যটি নৌকার বাজার। সুযোগ বের করে ঘুরে আসতে পারেন এসব ভাসমান মার্কেট।

ভিমরুলি হাট

ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের আঁকাবাঁকা ছোট্ট খাল জুড়ে সারা বছরই বসে এই ভাসমান হাট। তবে পেয়ারার মৌসুমে হয় জমজমাট বাজার। সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি।

পেয়ারা বোঝাই শত শত নৌকা। বিক্রেতারা এখানকার খালে খুঁজে বেড়ায় ক্রেতা। আর এখানকার ক্রেতাদের বেশির ভাগই হলেন পাইকারী ব্যবসায়ী। বড় ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে তারা বাজারে আসেন। ছোট ছোট নৌকা থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বড় শহরে চালান করে দেন।

ভিমরুলি হাট খালের একটি মোহনায় বসে। তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এই মোহনায়। অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত এ মোহনায় ফলচাষিরা নৌকা বোঝাই ফল নিয়ে ক্রেতা খুঁজে বেড়ান। ভিমরুলির আশপাশের সব গ্রামেই ভরপুর পেয়ারা বাগান। এসব বাগান থেকে চাষিরা নৌকায় করে সরাসরি এই বাজারে পেয়ারা নিয়ে আসেন।

পেয়ারার মৌসুম শেষ হলে আসে আমড়ার মৌসুম। এ অঞ্চলে আমড়ার খ্যাতি দেশব্যাপী ও ফলনও বেশ ভালো। আর সবশেষে আসে সুপারি। একটু কম হলেও বছরের অন্যান্য সময়ও ব্যস্ত থাকে এই হাট। ফল ছাড়াও এখানকার প্রধান পণ্য বিভিন্ন রকম সবজি।

ভাসমান বাজারের উত্তর প্রান্তে খালের ওপরের ছোট একটি সেতু আছে। সেখান থেকে বাজারটি খুব ভালো করে দেখা যায়। আকর্ষণীয় দিক হলো এখানে আসা সব নৌকার আকার আর ডিজাইন প্রায় একইরকম। মনে হয় যেন একই কারিগরের তৈরি সব নৌকা।

ভিমরুলির বাজারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হচ্ছে দুপর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এ সময়ে নৌকার সংখ্যা কয়েকশ ছাড়িয়ে যায়।

কুড়িয়ানা নৌকাহাট

এই হাটটি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে। ভিমরুলির থেকে ইঞ্জিন নৌকায় এ হাটে আসতে সময় লাগবে ঘণ্টা খানেকের মতো। এ হাটে বিক্রি হয় নৌকা। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কারিগররা এখানে তাদের তৈরি করা নৌকা বিক্রি করতে আসেন। বিশাল এলাকা জুড়ে শত শত নৌকায় পরিপূর্ণ হয় এ হাট। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন বসলেও শুক্রবারে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম বেশি ঘটে।

বিক্রেতারা বড় একটি নৌকার ওপরে ছোট ছোট অনেক নৌকা এনে খালে ভাসিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকেন। ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় পাওয়া যায় বিভিন্ন আকারের নৌকা। সারা বছর হাট বসলেও জুন থেকে সেপ্টেম্বর হাটের পরিসর বাড়ে। কারণ বর্ষায় এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পানি বেড়ে যাওয়ায় চলাচলের জন্য নৌকার প্রয়োজন পড়ে।

আটঘরের হাট

কুড়িয়ানা থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে আটঘর পেয়ারার হাট। এটিও ভাসমান বাজার। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট নৌকায় পেয়ারা নিয়ে চাষিরা এখানে হাজির হন। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নৌকা বোঝাই পেয়ারা বিক্রি হয়ে যায়। কারণ পাইকাররা এখানে চাষিদের জন্য অপেক্ষায় থাকেন।

এ বাজারটিও আকারে বেশ বড়। আশপাশেই দেখা যাবে বড় বড় পেয়ারার বাগান, মাঝে ছোট ছোট নালা। চাষিরা ছোট নৌকা নিয়ে নালার মধ্যে ঢুকে গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করেন। এছাড়া, এ বাজারের পান চাষিরাও আসেন পান বিক্রি করতে।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে নদী বা সড়ক যে কোনোভাবেই যেতে পারবেন ভাসমান এই মার্কেটগুলোতে। তবে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে নদীপথ। যারা কখনও নৌপথ ভ্রমণ করেননি, তাদের জন্য এটি হতে পারে বাড়তি অভিজ্ঞতা।
•    এক. ঢাকা থেকে আপনি লঞ্চ বা বাসে বরিশাল এসে বাসযোগে বানারীপাড়া চলে যান। বানারীপাড়া থেকে সারা দিনের জন্য একটা ট্রলার (ইঞ্জিনচালিত নৌকা)
ভাড়া নিয়ে ঘুরে বেড়ান এই সব ভাসমান মার্কেটে। ও আরেকটা কথা-পেয়ারা বাগানে গিয়ে পেয়ারা খেতে ভুলবেন না কিন্তু?
•    দুই. ঢাকা থেকে সরাসরি লঞ্চ বা বাসে স্বরূপকাঠি গিয়েও আপনি ঘুরে বেড়াতে পারেন কুড়িয়ানা নৌকাহাটে।
•    তিন. ঢাকা থেকে লঞ্চ বা বাসে ঝালকাঠিতে আসবেন। ঝালকাঠী লঞ্চঘাট কিংবা কাঠপট্টি থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। আপনি ঝালকাঠি থেকে মোটরবাইক নিয়েও যেতে পারেন আটঘর হাটে। আটঘর থেকে নৌকা নিয়ে ঘুরতে পারেন। তবে এ পথে মোটরবাইকের চেয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়াই ভালো।   

ঢাকা এবং বরিশাল থেকে লঞ্চগুলো সাধারণত সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টার মধ্যেই ছেড়ে যায়। এই শিডিউল সামন্য কষ্ট করে মাথায় রাখা ভালো বৈ মন্দ হবে না।

কীভাবে ঘুরবেন
নদীবাহিত এলাকা হওয়ায় এসব এলাকায় ট্রলার কিংবা ইঞ্জিনচালিত নৌকাতেই ঘোরাঘুরি করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সারাদিন ঘুরতে নৌকায় বা ট্রলার ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা লাগবে। একটি ট্রলারে ১০-২০ যাত্রী হয়ে ঘুরতে পারবেন। একা ভ্রমণ করলে খরচ বেশি লাগবে। দল নিয়ে ঘুরলে তুলনামূলক খরচ অনেক কম হবে।

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক।

আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে। আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।



বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
টিআই/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।