ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

চোখ জুড়ানো ‘শাপলার বিল’

মুশফিক সৌরভ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৫
চোখ জুড়ানো ‘শাপলার বিল’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল: দূর থেকে দেখলে সবুজের মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র লাল লাল বৃত্ত দেখে ঠাহর করা দুরূহ জিনিসগুলো আসলে কি? দূরত্ব কমার সঙ্গে সঙ্গে একসময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব।

আগাছা আর লতা-পাতা গুল্মে ভরা বিলের পানিতে শত সহস্র লাল শাপলা।

নাম না থাকা এ বিলের হাজারো লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।

এরসঙ্গে সুর্য্যের সোনালি আভা শাপলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে পানিতে প্রতিফলিত হয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এর সৌন্দর্য।

বিলের যতো ভেতরে এগুতে যাবেন ততোই লালের আধিক্য। একসময় মনে হবে শাপলার রাজ্যে বন্দি হয়ে আছেন আপনি। আশপাশ দিয়েই একটু পরপরই শাপলা গাছ ও আগাছা ঠেলে নৌকা নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। এদের অনেকেই বিল থেকে শাপলা তুলে জমা করছেন নৌকায়। কেউবা মাছ শিকারে ব্যস্ত।

এ বিলের শাপলা দিয়ে অনেকেই সাবলম্বী হয়ে উঠছেন। এখন অনেকেই বিল থেকে শাপলা তুলে তা বিক্রি করছেন স্থানীয় বাজারে। মাছ শিকার করেও চলেন অনেকে।

অপরদিকে, মনোমুগ্ধকর এ বিল দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন। ফলে দিন-দিন এ এলাকার এক দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে ‘শাপলার বিল’।

বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম ও পাশের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে নামহীন এ বিল।

বিলের মোট আয়তন জানা নেই স্থানীয়দের কারোরই। কারো দাবি কয়েকশ হেক্টর, কারো দাবি কয়েক হাজার বিঘা নিয়ে এ বিল।

স্থানীয়দের কাছে ‘শাপলার বিল’ নামে পরিচিত এ বিলে ঠিক কতো আগে থেকে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করে সে তথ্যও দিতে পারলেন না কেউই।  

তবে আশপাশের গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কয়েক ব্যক্তি আলাপকালে জানালেন, তাদের জন্মের পর থেকেই এ বিলে এভাবে শাপলা ফুটতে দেখছেন তারা।

এ বিলে তিন ধরনের শাপলা জন্মে। লাল, সাদা ও বেগুনি রঙয়ের। তবে বিলে লাল শাপলার আধিক্য বেশি।

সাদা শাপলার কদর বেশি। লাল শাপলার কদর থাকলেও এটি রান্না করতে অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হয়। লাল শাপলা সরাসরি রান্না করার পরেও কিছু কালচে রং থাকে। তাই রান্নার আগে এটিকে সিদ্ধ করে নিতে হয়।

আগে এ বিলে প্রচুর শাপলা জন্মালেও এখন আগের মতো অবস্থা নেই। দিন-দিন পলি পড়ে বিল ভরাট হতে থাকায় পানি কমে যাচ্ছে, ফলে আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে শাপলার উৎপাদন।

এছাড়া বিলের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণে শাপলার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তবে বিলের মাছ চাষের স্থানে শাপলা জন্মালেও সে শাপলা তুলে আনতে পারছেন না সাধারণ মানুষ।

বিল সংলগ্ন গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের একটা বড় সময় তারা অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল।   এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছে এ এলাকার কয়েকশ পরিবার। এদের কেউ শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করেন, কেউ বিল থেকে মাছ শিকার করেন।

বিল সংলগ্ন পশ্চিম খাজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা রমেস ঘরামী তার ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে প্রতিদিনই বিলের পানিতে মাছ শিকার করেন। শাপলার বিল হওয়ায় এখানে খাদ্যের বেশ যোগান থাকায় দেশীয় প্রজাতির মাছও ধরা পড়ে প্রচুর।

তিনি জানান, প্রতিদিন তিনি প্রায় ৩শ বড়শি দিয়ে এ বিল থেকে মাছ শিকার করেন। তিনি ছোট-বড় কৈ, খলিসা, টাকি, শৌল, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পান। স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে প্রতিদিন ৩/৪শ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তার।

দক্ষিণ বাগদা গ্রামের বাসিন্দা ও ৫ সন্তানের জনক আ. জব্বার জানান, তিনি মূলত অন্যের জমিতে কাজ করেন। তবে বছরের বেশিরভাগ সময় এ বিলের পানি চাষাবাদের জমিতে উঠে যায়। তাই এ সময়ে বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। এভাবেই চলে তার সংসার। তার মতো শতাধিক পরিবার এভাবে টিকে আছে।

তিনি আরো জানান, ১৫ থেকে ২০টি শাপলা একত্রে আঁটি বেঁধে ৩ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি করেন। দিনভর শাপলা তুলে দিনপ্রতি ২ থেকে ৩শ টাকা আয় হয় ‍তার। এ বিলের শাপলা বরিশাল, পিরোজপুর, ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানের বাজারে সরবারহ করা হয়।

স্থানীয় কয়েক কৃষক জানান, কিছুদিন ধরে কেউ ‍লাল শাপলা তুলছে না। তাই লাল শাপলা এতো বেড়ে গেছে। ফলে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে এখানকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখছেন।

তারা আরো জানান, অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বিলের বিভিন্ন জমির মালিকরা শাপলা গাছের গোড়া কেটে দেবেন। পরে পানি শুকিয়ে গেলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাসের মধ্যে এ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৫
এসআর/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।