ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

হাত বাড়ালেই বানর-কবুতর

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭
হাত বাড়ালেই বানর-কবুতর বাতু কেভে ওঠার সিঁড়ির দেওয়ালে বাচ্চা কোলে এক বানর। ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

কুয়ালালামপুর ঘুরে: ডাবেল খোলের মধ্যে সরু হাত সেঁধিয়ে টেনে টেনে শ্বাঁস খাচ্ছিলো বানরটা। আর একটা ধাড়ি বানর তেড়ে আসতেই ডাবের খোল ফেলে সরে গেলো সে। একটু পরই মিলমিশ হলো দু’জনের। ডাবের শ্বাঁস খেতে থাকলো মিলেমিশে। পাশ ঘেঁষে পর্যটকদের চলাচলে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের।

ইতিহাস খ্যাত বাতু আর রামায়ণ গুহার মাঝের বাঁধানো চত্বরটায় আরো কটা বানর এভাবে খাবার খুঁটছে। সদ্য ফেলে যাওয়া আইসক্রিমের বাটিতে মুখ ডুবিয়েছে একটা।

আর একটা গভীর মনোযোগে কফির কাপ শুঁকছে। পেছনে পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মন্দিরের কার্নিশে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে আরো কয়েকটা।  

আশপাশের পাহাড় আর জঙ্গলের জঙ্গলি বাসিন্দা হলেও বুনো ভাবটা একদমই নেই ওদের মধ্যে। আচরণে ওরা ঠিক যেনো বাংলাদেশের কোনো পিকনিক স্পটের টোকাই। যেনো ফেলে যাওয়া খাবারের অপেক্ষাতেই আছে।

বাতু কেভ পাহাড়ের ঠিক সামনের চত্বরটায় অবশ্য বানরের টিকিটিও নেই। এ এলাকাটা দখলে রেখেছে কবুতর বাহিনী। পর্যটক আর পূজারিদের ফেলে যাওয়া খাবার খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে এরাও। মানুষে ভীড়ে কবুতরের এমন সাবলীল বিচরণ অবাক করার মতোই ব্যাপার বটে।

মানুষের পাশে পাশে চটুল পায়ে হাঁটছে কবুতরের দল। কোনো কারণে হুট করে একটা উড়াল দিলে ডানা ঝাপটে উঠছে সব ক’টা। কংক্রিটের ওপরে যেনো তৈরি হচ্ছে কবুতরের ঢেউ। জমিন থেকে বড়জোর ৪ কি ৫ ফুট উচ্চতায় ক’সেকেন্ড ঢেউ তুলে ফের নিচে নামছে কবুতরের দল। বাতু কেভের সামনে কবুতরের মেলা।  ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

সিলেটে শাহজালালের (র.) মাজারের বাসিন্দা জালালী কবুবর বা বঙ্গোপসাগরের বদর কবুতরের মতো এখানকার কবুতরগুলোর কোনো নাম আছে কি না জানা গেলো না। তবে অনেক তীর্থের মতো এখানকার কবুতরগুলোও যে মানুষের মনমর্জি বেশ বোঝে, তা ভালোই বোঝা গেলো।

নিচের জমিন থেকে বাতু কেভের গুহামুখে উঠতে যে ২৭২টি সিঁড়ি টকপাতে হয় তাতে ১৭ কি ১৮ সিঁড়ি পরপর ল্যান্ডিং। টানা ওপরে ওঠার কষ্ট সামলে নিতে ল্যান্ডিংগুলোতে জিরিয়ে যেমন নেওয়া যায়, তেমনি এক পলকে উপর থেকে দেখে নেওয়া যায় শহরের রূপ। বাতু কেভের সামনে খাবারের খোঁজে বানর।  ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

আর ঠিক এসময়টার অপেক্ষাতেই থাকে বানরের দল। ছোঁ মেরে নিয়ে যায় চিপসের প্যাকেট, ক্যামেরা, মোবাইল। অসতর্ক মুহূর্তের মোক্ষম থাবায় জিনিস বাগিয়ে চোখের পলকে কয়েক লাফে এতো দূরে চলে যাবে যে, হা হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকবে না।

বিশেষ করে শিশুরাই বেশী টার্গেট তাদের। ছোঁ মারার সময় ওদের নখের আঁচড়ে আহত হওয়াও বিচিত্র্য নয়। আবার মুড ভালো থাকলে এই বানরবাহিনীই ছবির জন্য পোঁজ দিয়ে দেবে শান্ত হয়ে বসে। মন্দিরের কার্নিশে বানরের অলস সময়।  ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

সিঁড়ির মাঝামাঝিতে বাচ্চা কোলে একটা বানরকে বসে থাকতে দেখা গেলো। কখনো পিঠ চুলকে দিচ্ছে মা বানরটা। কখনো মাথায় আলতো চাপড় দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে চাইছে বাচ্চাটাকে। ভাব জমানোর জন্য ওর কাছে যেতেই দেওয়াল বেয়ে চলে গেলো মা বানরটা। কি অদ্ভূত কায়দায় তার বুকের মধ্যে বাচ্চাটা সেঁটে আছে পরম নির্ভরতায়!

গুহার ভেতরে বানর না থাকলেও হেঁটে হেঁটে খাবার খুঁটছে কবুতরের দল। সঙ্গে কয়েকটা মুরগিও দেখা গেলো। বহুক্ষণ ধরেও কোনো কবুতরকে উড়তে দেখা গেলো না এখানে। যেনো ওরা উড়তে শেখেইনি কখনো। বাতু কেভের নিচের চত্বরে কবুতরের মেলা।  ছবি: জাক‍ারিয়া মন্ডল

৪০ কোটি বছরের পুরনো বাতু কেভে এই কবুতর আর বানরের দল হয়ে আছে বাড়তি আকর্ষণ। পর্যটকরা তাই অনেকটা শখ করেই একটু খাবার ছড়িয়ে দেয় ওদের জন্য। তাতেই খুশী বানর আর কবুতরের দল।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।