ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

ট্রাভেলার্স নোটবুক

অন্ধকার আলুটিলার শীতল জলধারায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:২৭, নভেম্বর ১০, ২০১৭
অন্ধকার আলুটিলার শীতল জলধারায় আলুটিলা গুহা

খাগড়াছড়ি থেকে: বিকেলের শেষ আলোটুকু তখন পুরো খাগড়াছড়িকে আলো-ছায়ার খেলায় ভাগ করে ফেলেছে। চান্দের গাড়িটা পাহাড়ি উঁচু পথ অতিক্রম করে এসে থামলো আলুটিলা গুহার কাছে। ভিড় সেখানেও। খাগড়াছড়িতে আগত অধিকাংশ পর্যটকের কাছেই এ গুহা বিশেষ আকর্ষণের।

চিকন বাঁশের সঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে বানানো আগুন জ্বালাবার মশাল বিক্রি হচ্ছে গেটেই। সে মশাল কিনে গুহার দিকে সিঁড়ি ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে সবাই।

গন্তব্য একটিই, আলুটিলা গুহা।

খাগড়াছড়ি জেলার মূল শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত এ গুহা। আলুটিলা বা আরবারি পাহাড়ে আলুটিলা গুহার অবস্থান। স্থানীয়রা একে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা নামে ডাকে বলেও জানালেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর হোসেন।

গুহার প্রবেশমুখপাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ির নিচে আলুটিলা পাহাড়ের পাদদেশে পাথর আর শিলা মাটির ভাঁজে গড়া এ রহস্যময় সুড়ঙ্গ। নামতে হয় বেশ সাবধানে। একদমে এতোগুলো সিঁড়ি ভাঙা নিতান্ত সহজ কাজ নয়। গেট থেকে সিঁড়ির মুখ পর্যন্ত চারপাশের পাহাড় ও প্রকৃতি বেশ উপভোগ্য। এখানকার আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো এখান থেকে দাঁড়িয়ে দেখা যায় গোটা খাগড়াছড়ি শহর।

গুহামুখের ব্যাস প্রায় ১৮ ফুট আর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০ ফুট। প্রবেশমুখ ও শেষের অংশ আলো-আঁধারিতে আচ্ছন্ন। মাঝখানে নিকষ কালো গাঢ় অন্ধকার এ গুহার তলদেশ দিয়ে প্রবাহমান শীতল জলের ধারা। গুহার ভিতরে ভয়ের কিছু নেই। তবে ভীতু স্বভাবের কেউ গেলে অন্যদের অ্যাডভেঞ্চার বা আনন্দ মাটি হতে পারে!

গুহার ভিতরেখাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে এ গুহা অন্যতম। খুবই অন্ধকার ও শীতল এ গুহায় কোনো প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না বলে ভিতরে প্রবেশ করতে হয় মশাল নিয়ে। প্রবেশমুখেও কিছু মশাল বিক্রি হয় ৫-১০ টাকায়।

পাহাড়ের ভেতরে এই গুহা যেকোনো ভ্রমণপ্রেমীকে দিতে পারে লোমহর্ষক আনন্দ। গা ছম ছম করা এ গুহার চারপাশে রয়েছে ঘন সবুজ অরণ্য। গুহাটি ভেতরে ১০০ মিটার দীর্ঘ, ১ দশমিক ৮ মিটার উঁচু ও শূন্য দশমিক ৯ মিটার প্রশস্ত। গুহার একপাশ দিয়ে প্রবেশ করে অন্যপাশে দিয়ে বের হতে সময় লাগতে পারে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

আলুটিলা গুহা থেকে বের হওয়ার পর কথা হয় ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নিপুন আহমেদের সঙ্গে। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বার্ষিক শিক্ষাসফরে এসেছেন তিনি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অন্ধকার গুহায় আলোক মশাল নিয়ে আলোর যাত্রী হয়ে গুহার মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া অপূর্ব। পা ছুঁয়ে বয়ে যাচ্ছিলো শীতল পানির প্রবাহ। কখনো মাথা উঁচু করে, কখনো বা মাথা নিচু করে হেঁটে চলা। সে এক অদ্ভুত ভালো লাগা।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।