ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ঢাকার বাইরে গিয়ে গোধূলিলগ্ন উপভোগ

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
ঢাকার বাইরে গিয়ে গোধূলিলগ্ন উপভোগ ঢাকার বাইরে গিয়ে গোধূলিলগ্ন উপভোগ

পটুয়াখালী থেকে: অবশেষে বিকেল ৫টায় সদরঘাট ছাড়ল সুন্দরবন-২। সকলেই মুখিয়ে ছিলেন ঢাকার বাইরে গিয়ে গোধূলিলগ্ন উপভোগ করার জন্য। কিন্তু যাত্রা শুরু হতে বিলম্ব ঘটায় অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করলেন।

ঢাকার বাইরে গোধূলিলগ্ন উপভোগ করতে চাওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। একদিকে সদরঘাটে বুড়িগঙ্গার পানি দেখতে বিবর্ণ, অন্যদিকে বুকভরে শ্বাস নেওয়া তো দূরআস্ত, উৎকট গন্ধে নাক চেপে না ধরে উপায় নেই।

 

পাশ দিয়ে যখন লঞ্চ চলে যাচ্ছে তাতে গন্ধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। সে কারণে অনেকেই বুড়িগঙ্গা ছেড়ে শীতলক্ষায় গিয়ে বুক ভরে অক্সিজেন নিতে নিতে গোধূলিলগ্ন উপভোগ করতে চাইছিলেন। লঞ্চটি যতই ঢাকাকে পেছনে ফেলে এগোচ্ছিল, উৎকট গন্ধটাও ততই কমে আসছিল।

তবে একটা বিষয় নজরে এড়ালো না। আর তা হচ্ছে নদীতে যত্রতত্র ভেসে চলা ময়লা, আবর্জনা। নদীতে যেভাবে কচুরি পানা দলবেঁধে ভেসে যায় তেমনি প্লাস্টিকের বোতল ও নানাবিধ বর্জ্যেরও দলা ভেসে যেতে দেখা গেল। পাশদিয়ে যাওয়া একাধিক লঞ্চ থেকেও যাত্রীদের পানিতে ময়লা আবর্জনা ফেলতে দেখা গেল। এই দৃশ্য দেখে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করলেন। বললেন, আমরা নিজের হাতেই নদীগুলোকে গলাটিপে হত্যা করছি। এইভাবে প্লাস্টিক-বর্জ্য পানি ফেলতে থাকলে নদী বাঁচবে কী করে।

একটু পর পানি খাওয়ার পর বোতল ফেলতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম, সুন্দরবন-২ লঞ্চটিতে যাত্রীদের জন্য কোনো ডাস্টবিন বা ময়লা ফেলবার ঝুড়ি নেই। যে যেদিকে পারছে টপাটপ পানিতে ফেলছে। এমনকি লঞ্চের স্টাফরাও একই কর্মে লিপ্ত।

ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচলকারী মাঝারি সাইজের এই লঞ্চটিতে যাত্রীদের বর্জ্য ফেলার জন্য কোনো ডাস্টবিন নেই শুনে বেশ অবাক লাগলো। তালাশ করলাম সুপারভাইজারের। একজন কেবিন বয় নিয়ে গেলেন সুপারভাইজার কামাল মিয়ার কাছে।  

তিনি এই পেশায় আছেন চৌদ্দ বছর। তার কাছে প্রশ্ন ছিলো, ‘লঞ্চে ডাস্টবিন না রাখার পেছনে কারণ কি’? 
জবাবে বললেন, ‘এটা সার্ভিস লঞ্চ, এর ডেকে লোকজন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এখানে ডাস্টবিন রাখার জায়গা কই!’
আমাদের পাল্টা প্রশ্ন, ‘তাহলে ময়লা আবর্জনা কোথায় ফেলা হয়?’
জবাব তার ঠোটের আগায়, ‘যে যেদিকে পারে। ’ 
তিনি আরও জানালেন, কোনো সার্ভিস লঞ্চেই নাকি ডাস্টবিন রাখা হয় না।

একজন বয় জানালেন, লঞ্চ গন্তব্যে পৌঁছে গেলে বিস্কুটের ঠোঙ্গা, পানির খালি বোতল ও অন্যান্য আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে নদীতেই ফেলে দেন তারা।

বয়স্ক একজন কর্মী জানালেন, আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর চৌধুরী (বর্তমানে দুদকের ডিজি) যখন পরিবেশ অধিদপ্তরে ছিলেন, তখন এ বিষয়টিতে কঠোর মনোযোগ দিয়েছিলেন। তখন কোনো লঞ্চ থেকে পানিতে ময়লা ফেলা হলে প্রথমবার ১০ হাজার টাকা জরিমানা আর দ্বিতীয়বার হলে লাইসেন্স বাতিল করতেন। অনেক  অভিযান চালিয়ে সবাইকে ‘টাইট দিয়েছিলেন’। তখন সবাই লঞ্চে ডাস্টবিন রাখতো। ময়লা তীরে নিয়ে ফেলতো। মুনীর চৌধুরী চলে যাওয়ার পরও অনেকদিন পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিলো, এখন কেউই আর সেভাবে মেনে চলে না।

অনেক দেশই ছোট ছোট নদীকে সংরক্ষণ করে নদীকেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে তুলেছে। আবার যাদের নদীই নেই তারা কৃত্রিম লেক তৈরি করেছে পর্যটন বিকাশের জন্য। আর ঢাকা তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে থাকা নদীগুলোকে রক্ষা করতে পারছে না।  

নির্মল বায়ুসেবনের জন্য লোকজনের নদীর পাড়ে যাওযার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নদী পার হতে হয় নাক চেপে ধরে। দখল-দূষণে অনেক নদী হারিয়ে গেছে। নিভু নিভু করছে অনেক নদী। অথচ এগুলোকে কেন্দ্রকরে দারুণ পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারতো।

কিন্তু এদিকটায় কারো মনোযোগ আছে বলে মনে হয় না। সামান্য কয়েকটা টাকা বাঁচানো অথবা অলসতা করে ঢাকার প্রবেশদ্বার বুড়িগঙ্গাকে বর্জ্য ফেলে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। প্রশাসন রয়েছে প্রকল্প নেওয়ার ধান্দায়। একটু কঠোর হলেই যে দূষণ রোধ করা যায় সেদিকে তাদের কোনো খেয়াল বা গরজ কোনোটাই যে নেই, তার প্রমাণ নদীর এই করুণ দশা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।