ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বান্দরবানের পাহাড়জুড়ে ‘রাংগুয়ে’ আম বিপ্লব 

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮
বান্দরবানের পাহাড়জুড়ে ‘রাংগুয়ে’ আম বিপ্লব  পাহাড়ি আম বাগান। ছবি: আসিফ আজিজ

বান্দরবান থেকে ফিরে: ছয় বছর আগে বান্দরবানের প্রত্যন্ত রেমাক্রির আদাপাড়ায় প্রথম দেখা মিলেছিল আমটির। তখন নাম জানা ছিল না। তবে ছোট গাছে লম্বা বোটায় ঝুলে থাকা থোকা থোকা আম নজর কেড়েছিল বেশ। তখন বাগান বলতে তেমন কিছু ছিল না। শুধু থানচি সদরে ছিল একটি বাগান। সেই একটি বাগানের সফলতায় পুরো বান্দরবানের পাহাড় এখন মিয়ানমারের আমের দখলে।

এবার গিয়ে জানা গেলো আমটির নাম রেংগুয়ে। পাহাড়ের ১শ থেকে আড়াই হাজার ফুট উচ্চতায় দেখা মেলে প্রচুর সংখ্যক আমের বাগান।

আমের বাগানের বিস্তৃতি দেখে আগ্রহ বাড়লো। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো প্রথম বাগানটি করেছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো। ২০০৬ সালের দিকে তিনি প্রথম বাগান করেন। এখন শুধু থানচি উপজেলায় সাড়ে ৪শ হেক্টর এবং পুরো বান্দরবান ধরলে ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জায়গাজুড়ে চাষ হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল এ আমটি।
পাহাড়ি আম বাগান।  ছবি: আসিফ আজিজ

বাগানে ব্যাপক পরিমাণ মুকুলই বলে দেয় ফলন কেমন হবে। আমটি পাহাড়ের জন্য বিশেষ উপযোগী। মিয়ানমার থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে দু’একটি চারা প্রথম আনা হয়। আলী কদম, রোয়ংছড়ির দিকে প্রথমে স্বল্পসংখ্যক বাণিজ্যিক চাষ করলেও থানচিতে প্রথম শুরু করেন খামলাই ম্রো।  

কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আমার ছয় একরের একটি বাগান রয়েছে। শুরু করি ২০০৬ সালের দিকে। এবার বাগান আগে থেকে বিক্রি করে দিয়েছে সাড়ে ৫ লাখ টাকায়। গতবার একটু কম হলেও তার আগের বার বিক্রি করেছিলাম ৬ লাখ টাকা। ফলন বেশি বলে এ আম চাষ বেশ লাভজনক। তাছাড়া পরিচর্যা খরচও বেশি না।

প্রথম দিকে পাকা আম কেজিপ্রতি ১০-১২ টাকা বিক্রি হলেও এখন ২৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কথা হয় থানচি উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, এর জাতটি এসেছে মিয়ানমার থেকে। আমাদের দেশীয় আমের চেয়ে এ আমের ফলন অনেক বেশি। তাই আমরা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছি। আরও একটি সুবিধা হলো এ আমের মুকুল আসে একটু দেরিতে। আর পাকা আম পাওয়া যায় আষাঢ় পর্যন্ত। একেকটি আম ৫শ থেকে ৭শ গ্রামের হয়।

এই আমের একটি বিশেষ গুণের কথা জানান তিনি। বলেন, সাধারণত কলম করা হয় না। চারা হয় আঁটি থেকে একটি বীজ থেকে চারটি পর্যন্ত চারা হয়। আর একটি চারা লাগানোর তিন চার বছরের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। নিজেরাই চারা উৎপাদন করা যায় সহজে। থানচিতে বর্তমানে সাড়ে ৪শ একর জমিতে এই আম চাষ হচ্ছে।  
আমের মুকুল।  ছবি: আসিফ আজিজ

আমটি চাষের সম্ভাবনা নিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, পাহাড়ের মাটির জন্য আমটি খুব ভালো। রোগ-বালাই অনেক কম। বেশি পরিচর্যা করা লাগে না। দেখতে বেশ সুন্দর। পোকা লাগে কম। এর মধ্যে আবার দু’টি জাত আছে। কাঁচায় ব্যাপক টক হলেও পাকলে সবই মিষ্টি। আঁশ থাকে না। আর থানচির সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হওয়ায় চাষিরা আম বিক্রি করতে পারছেন ঢাকা, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে।  

তবে কিছু জুম চাষি নয়, আম চাষ করছেন মূলত একটু সচেতন চাষিরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কয়েকটি ব্লকে ভাগ করে এসব এলাকায় উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াচ্ছে। এতে চাষিরাও যে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে তার প্রমাণ মিলছে পাহাড়ে কলা কিংবা অন্য ফসলের পরিবর্তে আম বাগান বাড়ায়।
পাহাড়ি আম বাগান।  ছবি: আসিফ আজিজ

হুমায়ন কবির বলেন, এই আমের হেক্টরপ্রতি ফলন ২০-২৫ মেট্রিকটন। এখন এই আমের পাশাপাশি আম্রপালি, গোপালভোগ প্রভৃতির চাষও হচ্ছে। ফলন মোটামুটি। তবে রেংগুয়া সমতলে ভালো ফলছে না।  

বিপণনের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা এখনও রয়ে গেছে জানিয়ে এই কৃষিকর্মর্তা বলেন, রেমাক্রি, মোদক প্রভৃতি এলাকায় প্রচুর বাগান হয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেখানকার চাষিরা দাম পান না। বিক্রি করেন মাত্র ১০ টাকা করে কেজি। পরিবহন খরচ অনেক হওয়ায় থানচি আসে কম। এছাড়া কাঁচা ফল নষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।  

সামনে এই আম চাষ বাড়লে পাহাড়ে সংগ্রাম করে টিকে থাকা মানুষগুলো আরও সাবলম্বী হবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।