ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০) সিরাজগঞ্জের সকাল।

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ২০

কড্ডার মোড় (সিরাজগঞ্জ)-ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল)= ৪৭.৬১ কি.মি.

সকালের হাঁটা শুরু করতেই কড্ডার মোড় থেকে বাঁ পাশে সঙ্গী হলো রেললাইন। সয়দাবাদ ছাড়িয়ে এগোচ্ছি যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু পানে।

আরিফ ভাই আর ফরহান ভাই দুজনেই এটা-সেটা নিয়ে খুনসুটি করেই যাচ্ছে। যমুনা সেতুতে হাঁটা যায় না, এ ব্যাপারে আগেই ওয়াকিবহাল ছিলাম। শুধু হাঁটা নয়, এ সেতুতে সাইকেলও চালাতে দেয় না। আগের দু’বার ক্রস কান্ট্রি রাইডের সময়ও সাইকেল বাসের ছাদে করে পার করতে হয়েছিল। টোল প্লাজার কাছেই দাঁড়িয়ে পড়লাম কোনো একটা বাহনে করে সেতু পার হবো বলে।  গোবিন্দাসীর রাস্তাবেশ খানিক অপেক্ষার পর মন গললো এক ট্রাক ড্রাইভারের। ট্রাকের সামনের সিটেই গাদাগাদি করে বসে পড়লাম আমরা তিনজন। ড্রাইভারের সঙ্গে আরেকজন সহকারী যিনি বসে আছেন, তার হাতে দেখলাম দুইশ টাকা। ট্রাক শ খানেক মিটার না যেতেই পুলিশ সিগন্যাল দিয়ে ট্রাক থামাতেই সহকারী তাড়াতাড়ি নেমে গিয়ে হাতে ওই দুইশ টাকা গুঁজে দিলেন। আবার উঠে এসে জানালেন, কাল সন্ধ্যায় পঞ্চগড় থেকে রওয়ানা হওয়ার পর যমুনা সেতু পর্যন্ত পুলিশ বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৬শ টাকা।

কীসের জন্য এতগুলো টাকা দিতে হলো ওনার নিজেরও ধারণা নেই। না দিলে অনেক হয়রানি করে এ ব্যাপারটাই ওনাদের মাথায় থাকে। সেতুর মাঝামাঝি একটা ছোট চিহ্ন দেখিয়ে ট্রাকের সহকারী জানালেন চিহ্নের এ পাশে সিরাজগঞ্জ আর ওপাশ থেকে টাঙ্গাইল।

ট্রাক ড্রাইভার ফরহান ভাইকে জিজ্ঞেস করলো উনি ব্রিজের কাজ করেন কিনা৷ অনার্স পাস করে দেশ ভ্রমণে বেরিয়েছি কিনা এমন প্রশ্ন শুধালেন আরিফ ভাই আর আমাকে। এ নিয়ে আরেক দফা পচানি খেলো ফরহান ভাই। ওপাশের টোল প্লাজা পার হতেই আমরা ট্রাক ড্রাইভারকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার রাস্তায়৷ এখান থেকে আরিফ ভাই টাঙ্গাইলের দিকে চলে গেলেন। উদ্দেশ্য মহেড়া জমিদারবাড়ি দেখা। দিনশেষে আবার আমাদের সঙ্গী হবেন।

ওনাকে বিদায় দিয়ে টোল প্লাজা থেকে হাতের বামে এগোনো ভুঞাপুরের রাস্তা ধরলাম আমরা। মোড় ঘুরতেই বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস। এখান থেকেই শুরু হয়ে গেছে ভুঞাপুর উপজেলার সীমানা। পাথাইল কান্দি বাজারে জীবনের প্রথম পেঁয়াজ ছাড়াই আস্ত একটা ডিম ভাজি খেলাম। পেঁয়াজের জায়গা নিয়েছে প্রচুর কাঁচা মরিচ। ভুঞাপুর-গোবিন্দাসীর রাস্তা ধরে চলছি। একে একে পার হলাম সিরাজকান্দি বাজার, ন্যাংরাবাজার। এদিকের অধিকাংশ বাড়িই আগাগোড়া টিনের নির্মিত। মাটিকাটা মোড় হয়ে গোবিন্দাসী বাজার পৌঁছে গেলাম খানিক বাদেই। যাত্রাপথের খাল। যাত্রাপথেই ফরহান ভাই আকিকা ছাড়াই আমার নতুন নামকরণ করলেন প্লাস্টিক বাবর। রাউৎবাড়ি, জিগাতলা, বাগবাড়ি, ছাব্বিশা পার হয়ে দুপুরের কিছু আগে ভুঞাপুর উপজেলা সদর। ইবরাহীমখা কলেজ তোরণ থেকে বামে মোড় নিয়ে এগোলাম মূল বাজারের পানে। এই কলেজটা দেখে মন ভালো হয়ে গেলো। অনেকদিন পর ছাত্র-ছাত্রীতে ভরপুর একটি কলেজ দেখলাম। গোল হয়ে বসা একদল ছাত্র-ছাত্রীর গাওয়া প্রিয় ব্যান্ড জলের গানের বকুল ফুল গানটা শুনতে শুনতে মূল বাজার।

নাচ শেখার প্রতিষ্ঠান 'স্টেপ ড্যান্স ক্রো-২ ' এর ভয়াবহ বানান সংবলিত সাইনবোর্ড দেখলাম এক টিনের বাড়ির গায়ে। ভুঞাপুর বাজার শেষে ঘাটাইল উপজেলার কিছু অংশের উপর দিয়ে হাঁটলাম। পরের গন্তব্য গোপালপুর। পাঁচটিকড়ি বাজার হয়ে এগোনো এই রাস্তাটা খুব একটা ব্যস্ত নয়। রাস্তার দু’পাশে ধান ছাড়াও নানান বৈচিত্র্যের মৌসুমি ফসল। টিনের বাড়ির সংখ্যা এই দিকেও বেশি।

নলছোপা বাজার ছাড়িয়ে একটা সরু খাল পেরোতেই শুরু গোপালপুর উপজেলা। বড়শিলাবাজারের কাছেই পিঠে ব্যাকপ্যাক দেখে ফরহান ভাইকে এক লোক জিজ্ঞেস করলো উনি কোনো ট্রেনিংয়ে এসেছেন কিনা। এদিকের সব মিষ্টির দোকানেই প্রচুর দই। দইয়ের পাত্রগুলো ঠিক যেন ফুলের টবের মতো দেখতে। একবার দই কিনে খাওয়ার পরে ওইসব পাত্র আরামসেই টব হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। গোপালপুর অভিমুখী রাস্তাদক্ষিণ খান পাড়া, দিঘল আটা মোড় ছাড়িয়ে মির্জাপুর বাজার। সরু বেশ কিছু খাল পড়লো পথে। বিশাল সব জাল ফেলে মাছধরার আয়োজন সেসবে। এই এলাকার এমপি সাহেবের নাম বেশ নজরকাড়া৷ ওনার নামই ছোটমনির। সূতীবকালীবাড়ী বাজার ফেলে খানিক এগোতেই গোপালপুর উপজেলা সদর। নন্দনপুর পার হতেই বাড়ির চাতালে চাতালে ধান শুকানোর মচ্ছব দেখছিলাম।

খানিক এগিয়ে মধুপুরের রাস্তা ছেড়ে বামে মোড় নিয়ে ধনবাড়ীর রাস্তায়৷ নিমগাছে ঘেরা দারুণ একটা মাদ্রাসার পরেই সাহাপুর। ধোপাকান্দির কাছেই এক ছেলে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো- আপনি কি চাকরি করেন? কাঁধে ব্যাকপ্যাক নিয়ে হাঁটাটা কেন যে ওই ছেলের চাকরি মনে হলো কে জানে! গোলাবাড়ী ছাড়াতেই গোপালপুর উপজেলার সীমানা শেষ। খানিক সময়ের জন্য ঢুকে পড়লাম মধুপুরে। ততক্ষণে দিনের আলোর জায়গা নিয়েছে সন্ধ্যার আঁধার। তবে থালার মতো এক চাঁদ দেখা দিতেই এই আঁধারে হাঁটতেও তেমন কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। চলছে মাছ ধরা। বেলুটিয়া, পাইটকা বাজারের পরে নরিলা চৌরাস্তা। ধনবাড়ী উপজেলার সীমানা এখান থেকেই শুরু। এই আধো আলো, আধো অন্ধকারে পথ চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড। রাস্তার পাশেই অপেক্ষা করছিলেন রকি ভাই। ওনার বাড়িতেই আশ্রয় আজ। বাসস্ট্যান্ডের কাছেই আরেক রেস্টুরেন্টে আমাদের অপেক্ষায় বসে ছিলেন আরিফ ভাই। আরো দু-একদিন একসঙ্গে হাঁটার প্ল্যান থাকলেও জরুরি কাজে আজই ঢাকা ফিরবেন উনি৷ ওনার টিকেট করার ফাঁকেই সাভার থেকে হাজির খোকন দা। ভদ্রলোক আগামী ক'টা দিন সঙ্গী হবেন আমার৷ রকি ভাইয়ের বাসায় এসে রাতের খাবারটা সারা হলো এই অঞ্চলের ইউনিক মেন্যু মেন্দা দিয়ে। আতপ চাল আর মাংস দিয়ে তৈরি হয় হালিমের মতো দেখতে এবং কাছাকাছি স্বাদযুক্ত এই খাবার।

চলবে…

আরও পড়ুন>>

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)

পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)

পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।