ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬০)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬০)

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ৬০
রাউজান (চট্টগ্রাম) - কাপ্তাই (রাঙামাটি)= ৩৮.১৭ কিমি

গুগল ম্যাপের চেয়েও শর্টকাটে বোরহান নিয়ে এলো মূল রাস্তায়। ছোটবেলায় নানাবাড়িতে বেশ কিছু সময় থাকার সুবাদে এ এলাকা ওর হাতের তালুর মতোই চেনা।

কাশখালীর কূল ধরে এগিয়ে জলিল নগর। সকালের নাস্তা সারা হলো এখানেই। রাউজান উপজেলা সদরের আশপাশের এলাকার বেশিরভাগ রাস্তাই আরসিসি ঢালাই করা।  

এমন সুন্দর সব বিহার পেয়েছি পথের পাশেইজলিল নগর থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে পড়লো বোরহান। আর আমি পা চালালাম আজকের গন্তব্যের পানে। ঢেউয়া হাজিপাড়া হয়ে মোহাম্মদপুর চলে এলাম কিছুক্ষণের মধ্যেই। রমজান আলী হাট, মাঝিপাড়া হয়ে বড়পাড়ায় দেখলাম বেশ সুন্দর একটা বিহার। খানিক পরেই ধর্মদূত বিহার। অনেকগুলো বিহার এ রাস্তায়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরা বেশি এদিকের পাড়ায়। প্রত্যেকটা বিহারই বেশ সাজানো-গোছানো।

নাতোয়ান বাগিচা হয়ে মীর বাগিচার কাছে এক পাগল আমাকে দেখে প্রথমেই পায়ের জুতা খুলে ফেললো। তারপর তিন-তিনটা স্যালুট ঠুকে দিলো আমাকে উদ্দেশ্য করে। আমি কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। পরে আমি কি মনে করে একটা স্যালুট ঠুকে দিতেই সে প্রস্থান করলো জুতোজোড়া পায়ে গলিয়ে। পরের বাজারটার নাম আশরাফ আলী চৌধুরী হাট। তবে এর আরেকটা নাম আছে৷ সোম্বাইজ্জ্যা হাট (সোমবারের হাট) নামেই এই বাজার বেশি পরিচিত।  

পথসব দোকানেই আশরাফ আলী চৌধুরী হাট নামের পাশে ব্র্যাকেটে লেখা প্রকাশ সোম্বাইজ্জ্যা হাট। বেশ পুরনো স্থাপনা ফতেহ আলী শাহ মসজিদ। নতুন মসজিদ নির্মাণাধীন হলেও আগের স্থাপনাটা ভেঙে না ফেলে করা হয়েছে সংরক্ষণ।

ঈশান ভট্টের হাট পৌঁছেই মনে পড়লো বোরহানের কথা। ওদের বাড়ি মূলত এখানেই। পরির দিঘির পাড় হয়ে খানিক বাদেই ঊনসত্তর পাড়ায়। আমাদের দেবুদার গ্রামের বাড়ি এখানেই। ইংরেজি 'সিক্সটি নাইন পাড়া' বলে একসময় বেশ খ্যাপানো হতো ওকে। গৌরীশংকর হাট হয়ে পৌনে দশটা নাগাদ পাহাড়তলী বাজারে। এখান থেকে আজকের বাকিটুকু পথ আমার বহুদিনের চেনা। নানান প্রয়োজনে অসংখ্যবার যাতায়াত করা হয়েছে এ রাস্তায়। কয়েক কদম সামনেই চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। রাউজান উপজেলার সীমানা তাপবিদ্যুৎ তথা চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্তই।

শাহ ফতেহ আলী মসজিদএর পরপরই শুরু রাঙ্গুনিয়া উপজেলা। কাপ্তাইগামী এই রাস্তাটা বছর দুই-তিনেক আগে ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বেহাল দশা ছিল এ রাস্তার। এই রাস্তা দিয়ে যেতে হবে শুনলেই এককালে আমার শরীর ব্যথা হয়ে যেত! সেই রাস্তা একদম মসৃণ এখন।

বুড়ির দোকান, শান্তিরহাট, গোচরা চৌমুহনী। চেনা সব জায়গা। খুব বেশি নতুনত্ব নেই আমার চোখে। ইছাখালী, ঘাটচেক হয়ে রোয়াজারহাটের ঠিক আগেই ইছামতি নদী। এই নামে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি নদী আছে। কর্ণফুলীরই শাখা নদী এটি। আজকের আকাশের জন্যই নদীটাকে দেখতে আরো ভালো লাগছিল। রাঙ্গুনিয়া থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ডাক এলো স্যার সম্বোধন করে। খেয়াল করে দেখি বাদশা। রাঙ্গুনিয়াতে যে হাসপাতালে আমি একসময় কর্মরত ছিলাম, তার নিচেই ওষুধের দোকানের মালিক ওর বাবার।  

অনেকদিন ধরেই চিনি ওকে। সঙ্গে ওর বন্ধু ইমন। আমি খানিক আগেই নাস্তা করলেও ওদের পীড়াপীড়িতে নাস্তা করতে হলো আবার। রাঙ্গুনিয়া কলেজ পেরিয়েই মরিয়মনগর। এখানেরই এক হাসপাতালে অনেকদিন কাজ করেছি আমি। বেশ স্মৃতি এই অঞ্চলে। এদিকের অনেক লোকজনকেও বেশ ভালোভাবেই চিনি।
কাপ্তাই কায়াক ক্লাবমরিয়মনগরের পর রাস্তায় আর তেমন একটা বাজার নেই। দু'পাশে ছায়াদান করছে কড়ই আর আকাশমণি গাছ। পথ চলছি গুমাই বিলের একেবারে পাশ ঘেঁষেই। দিগন্তে মাথা উঁচু করা পাহাড়ের সারি। এই পথে গত মাস দুয়েক আগেও হেঁটেছি আমি আর সতীশ। এই পদযাত্রায় বেরোবার আগে সেটা ছিল প্রস্তুতিমূলক হাঁটা। আরো এগোতেই মাথার উপর সবুজের চাঁদোয়া। এর ফাঁক গলেই দেখা যাচ্ছে আকাশ। অদ্ভুত সাজে সেজেছে আজকের আকাশটা। চারা বটতল ছাড়িয়ে চলে এলাম লিচুবাগান। এখান থেকে কাপ্তাই অবধি রাস্তাটা আরো মনোহর।

কিছুদূর এগোতেই বিপরীত দিক থেকে আসা একটা সিএনজি অকোরিকশা ব্রেক কষে থেমে গেলো। বেরিয়ে এলো আমার মেডিক্যালের দুই জুনিয়র - রিফা আর তুশিন। এই দম্পতির পোস্টিং হয়েছে কাপ্তাইতে। সেখান থেকেই ফেরার পথে আমাকে দেখে থেমেছে ওরা। চলতি পথে এসব হঠাৎ দেখা বেশ সুখানুভূতি দেয়।

রাঙ্গুনিয়ার শেষ সীমায় শেখ রাসেল এভিয়ারী অ্যান্ড ইকো পার্ক। কাপ্তাই উপজেলা শুরু এর ঠিক পরেই। এই রাস্তায় বেশ অনেকগুলো বাঁক। একটা বাঁক ঘুরতেই কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড। পার্বত্য জেলাগুলোতে নামের শেষে 'ছড়ি'র ছড়াছড়ি। কর্ণফুলীকে হাতের ডানদিকে পেলাম একটু বাদেই। ধীরলয়ে বয়ে চলেছে। দেশের অনেক নদীর তুলনায় কাপ্তাইয়ের দিকের কর্ণফুলীর পানি বেশ স্বচ্ছ। একটু বাদেই বড়ইছড়ি। এই বড়ইছড়িতেই কাপ্তাই উপজেলার সরকারি সব অফিস। থানা থেকে শুরু করে হাসপাতালসহ সব গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা এখানেই।

বিজিবি ক্যাম্প পেরিয়ে কাপ্তাই কায়াক ক্লাব। সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলাম নিচে। আমাদের স্টাফদের সঙ্গে দেখা হলো অনেকদিন পরে। পদযাত্রায় থাকলেও কায়াক ক্লাবের বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করতে হলো এখানে এসেই। আজ থাকার কথা আমাদের ম্যানেজার শাহীন ভাইয়ের বাসাতেই। উনি ওইখানে আমার অসুবিধা হবে ভেবে আমাদেরই আরেক স্টাফ আসিফের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন আমাকে। আসিফ কাপ্তাইয়েরই স্থানীয় ছেলে। কায়াক ক্লাবের কাছেই বাড়ী ওর। আসিফদের বর্তমান বাড়িতে আগে ভাড়া থাকতেন আমাদের আগের ম্যানেজার মাহবুব ভাই। সেই সূত্রে এই বাড়িতে আমার আগেও আসা হয়েছে। এখানে এসে সুযোগ হয়েছে এই পদযাত্রায় প্রথমবারের মতো নদীতে গোসল করার। কর্ণফুলীতে গোসল সেরে সোজা কম্বলের উষ্ণতায়।

চলবে....

আরও পড়ুন
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।