ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

মাজুলীর আদিবাসী জনজাতির স্বকীয়তা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
মাজুলীর আদিবাসী জনজাতির স্বকীয়তা তাঁতে মেখলা বুনছেন এক নারী

মাজুলী (আসাম) থেকে: বিশ্বের সর্ববৃহৎ নদী দ্বীপ মাজুলীর আদিবাসিন্দারা হলো মিসিং, দেউরী, সনোয়ালকসারী জনজাতির মানুষ। যুগ যুগ ধরে এসব জনগোষ্ঠীর মানুষ এখানে বসবাস করে আসছেন নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কৃষ্টি নিয়ে।

ভারত মিশ্র সংস্কৃতির দেশ। এখানে নানা জাতি নানা ভাষা সম্প্রদায়ের মানুষ এক সঙ্গে বসবাস করতে অভ্যস্ত।

তাই মাজুলীও এর বাইরে নয়। এখানে জনজাতির পাশাপাশি অসমীয়া, বাঙালিসহ নানা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাস করছেন।

কৃষি, নদী ও ডোবা থেকে মাছ ধরে তা বিক্রি করা, হস্ততাঁতে তৈরি কাপড় বিক্রি এ সকল আদিবাসী গোষ্ঠীর প্রধান জীবিকার উৎস। এছাড়া গৃহপালিত পশু পালনও এখানের অন্যতম প্রধান জীবিকার উৎস।
মাজুলির সড়কের দুই পাশে ঘন বাঁশঝাড়
এখানকার বাসিন্দারা প্রথাগত পদ্ধতিতেই মাচার উপর তাদের ঘর তৈরি করেন। স্থানীয়ভাবে চাংঘর নামে পরিচিত এসব ঘরের উপরে মানুষ ও নিচে গৃহপালিত পশু থাকে।

অন্যসব আদিবাসী মহিলাদের মতো মাজুলীর জনজাতি মহিলারাও পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি কঠোর পরিশ্রমী হয়। তারা গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি পুরুষের সঙ্গে মাঠেও সমান তালে কাজ করেন। ঘরে বাইরে কাজের সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে আবার হস্ততাঁতে কাপড় বুনেন তারা। মূলত বাড়ির মহিলা ও মেয়েরা তাঁতে কাপড় বুনেন বলে জানা গেছে।
 
তাদের হস্ততাঁতে তৈরি কাপড়কে বলে মেখলা চাদর। অসমীয় নারীরা এই মেখলা চাদর পরিধান করেন। এই কাপড়ের দুটি অংশ থাকে। কোমরের উপরের অংশে যে কাপড় পরেন তাকে বলে চাদর ও নিচের অংশের পরিধানের কাপড়কে বলে মেখলা।

এই মেখলা চাদরে আবার হাতের সুক্ষ কারুকার্য থাকে। সুক্ষ কারুকার্যভেদে মূল্যের তারতম্য হওয়া এসকল কাপড় সাধারণত ৩ হাজার রুপি থেকে ১০ হাজার রুপি পর্যন্ত মূল্যের হয়ে থাকে। মাজুলী আদিবাসীদের পাশাপাশি বর্তমানে পর্যটকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই মেখলা চাদর।
মেখলা বুনন করা কয়েকজন নারী
মাজুলির আদিবাসীদের মতো অসমীয়া ও বাঙালিরাও চাষবাস করেন। এই দ্বীপ ভূমিতে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি নানা প্রজাতির বাঁশ চাষ হয়। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে এই বাঁশ এখন বহু রাজ্যের কাগজ কলে পাঠানো হয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রথাগত কৃষির পাশাপাশি এখন যন্ত্র নির্ভর কৃষিও পৌঁছে গিয়েছে মাজুলীতে। ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ সহ মাড়াইয়ের কাজ হচ্ছে এখানে। এছাড়া বর্তমানে এখানের শিক্ষিত যুবক যুবতিরা আসামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাকরি করছেন।

অসমীয় জাতি গোষ্ঠীর মতো মিসিং ও দেউরি জনজাতির রয়েছে বহু উৎসব তবে তাদের সঙ্গীত ও নৃত্য শৈলী সম্পূর্ণ আলাদা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লড়াই করে দ্বীপের মাঝে প্রথাগত জীবন শৈলী বজায় রাখলেও বর্তমানে তা জনজাতিদের বাড়তি রোজগারের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ বিদেশের পর্যটকরা এখন চাংঘর ভাড়া করে থাকছেন এখানে এসে।

** মাজুলীর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম হলো সত্র

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।