ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

আখাউড়ার ‘কান কাটছে’ আগরতলা ইমিগ্রেশন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
আখাউড়ার ‘কান কাটছে’ আগরতলা ইমিগ্রেশন আগরতলার ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট-ছবি-আসিফ আজিজ

আগরতলা, ত্রিপুরা থেকে: অবস্থাটা ঠিক পচা ডোবা থেকে উঠে শুভ্র-সুন্দর টাওয়েল জড়ানোর মতো। স্যাঁতসেঁতে মেঝে, দেয়াল, মান্ধাতার আমলের কাঠের টেবিল-চেয়ার, পলেস্তরা খসে পড়ছে জায়গায় জায়গায়, আর ভবনের সামনে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি। যেটা আবার জমে থাকে কয়েকদিন। বলছি বাংলাদেশের আখাউড়া ইমিগ্রেশনের কথা।

ঠিক বিপরীত চিত্র বাংলাদেশের মানচিত্রের পেটে থাকা ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে। সুন্দর-পরিপাটি, চকচকে-ঝকঝকে, ঝামেলাহীন একটি ইমিগ্রেশন।

একটি সীমান্তে দুটি দেশের নিশ্বাস দূরত্বের চেকপোস্টের ফারাকটা এখানে বড্ড বেশি। প্রত্যেক বাংলাদেশিরই বিষয়টি মেনে নিতে বড়ই কষ্ট হয়। আর হয়রানির কথা তো বলাই বাহুল্য। যেটা কাস্টমসে ঢুকে ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়।
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ইমিগ্রেশন ও স্থলবন্দর বাংলাদেশের চেয়ে ত্রিপুরার মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নানা সুবিধার কারণ এটা ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশের কাছেও। কম সময়, কম খরচে তুলনামূলক ঝামেলামুক্ত ভারতভ্রমণের জন্য এ পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে।

আখাউড়া ইমিগ্রেশনের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ-ছবি-আসিফ আজিজ
 কিন্তু আখাউড়ার দৈন্য যাত্রীদের জন্য পীড়াদায়ক। ছোট্ট একটি ঘরে চলে ইমিগ্রেশনের কাজ। তাতে আবার বিদ্যুৎ থাকে না অধিকাংশ সময়। বিদ্যুতের অভাবে ক্যামেরা দিয়ে ছবি না তুলেই ছেড়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। আর কাস্টমসে উপরি আদায় তো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
 
কিন্তু বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে নো-ম্যানস ল্যান্ডে পা রাখলেই মনটা ভালো হওয়া শুরু করে। ভারতীয় জওয়ানরা তাদের পথটুকুও খুব পরিচ্ছন্ন গুছিয়ে রেখেছেন। যতদূর সামনে চোখ যায় পরিষ্কার-পরিপাটি। এরপর আগরতলা চেকপোস্টে মেলে এর ছাপ। ২০১৩ সালের শেষের দিকে উদ্বোধন করা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টটি (এক ছাদের নিচে সব সুবিধাযুক্ত চেকপোস্ট) যা আগামী ৫০-১০০ বছর টার্গেট করে তৈরি তা বোঝা যায়।

আগরতলা চেকপোস্ট-ছবি-আসিফ আজিজ
বিশাল ভবনটিতে টাইলস করা ফ্লোরে পা রাখতে হয় কাচের দরজা ঠেলে। স্ক্যানিং মেশিন থাকায় অযথা কারও ব্যাগ-ব্যাগেজ খুলে অস্বস্তিতে পড়তে হয় না। ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করা কর্মকর্তাও খুব কম কথায় সারেন তাদের কাজ। শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় গরমটা যা একটু বেশি।
 
এখানের বিশেষ সুবিধার মধ্যে রয়েছে মায়েদের জন্য আলাদা ব্রেস্ট ফিডিং জোন, যাত্রীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ও চেয়ার, সার্বক্ষণিক সুপেয় পানির ব্যবস্থা, শৌচাগার। এমনকি আগরতলা থেকে যে কেউ বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিকে স্বাগত জানাতে যেতে পারেন চেকপোস্টের ভিতর পর্যন্ত।

ঝামেলাহীন আগরতলা ইমিগ্রেশন-ছবি-আসিফ আজিজ
আবার পণ্যের ক্ষেত্রে মাছ থেকে শুরু করে সবকিছুই নেওয়া হয় কোয়ালিটি চেক করে। এর জন্য রয়েছে আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা।
 
এভাবে সবদিক দিয়ে আগরতলা ইমিগ্রেশন হাজার গুণ এগিয়ে বাংলাদেশের আখাউড়া ইমিগ্রেশন থেকে। এ পারে পা পড়লেই আসলে আমাদের কান কাটা যায়!

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।