ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

আগরতলা বনাম ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৭
আগরতলা বনাম ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা আগরতলা বনাম ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা- ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা) থেকে ফিরে: আইজিএম ক্রসিং পার হয়ে কয়েক সেকেন্ড যেতেই সহকর্মীদের মধ্যে একজন বললেন, আমাদের ট্রেনতো সেই সোয়া সাতটায়। এতো তাড়াতাড়ি সীমান্ত পার হয়ে কী লাভ! তার চেয়ে বরং দেখি কিছু কেনাকাটা করা যায় কি না। অন্যরাও তার কথায় সায় দিলেন।

ফোর লেনের সড়কটি উত্তরে গিয়ে ঠেকেছে আখাউড়া স্থলবন্দরে। হাতের বাঁ দিকে বীরচন্দ্র রাজ্য পাবলিক লাইব্রেরি, ডানে শিশুবিহার উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

যেই কথা সেই কাজ। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে বলা হলো চালক রাহুল ঘোষকে। সড়কটিতে কোনো ডিভাইডার নেই, আশপাশে ট্রাফিক পুলিশও নেই। আবার ছুটির দিন (রোববার) হওয়ায় পুরাই ফাঁকা। তবুও কোয়ার্টার কিলোমিটার সামনে (ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর) চৌরাস্তায় গিয়ে ইউটার্ন নিলেন চালক রাহুল ঘোষ।

আমরা সবাই তখন অবাক! এতোদূর যাওয়ার পর ইউটার্ন নিতে হলো কেন! রাস্তায় তো ডিভাইডার নেই। ইউটার্ন নিলেই হয়, মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারছিল কথাটা। শেষ পর্যন্ত মৃদূভাষী রাহুল ঘোষকে প্রশ্ন করতেই জানালেন, মোড়ের আগে ইউটার্ন নেওয়া যাবে না।

আগরতলা শহরে বেশিরভাগ সড়কে কোনো ডিভাইডার নেই। আমি যতগুলো পথ দেখেছি তার মধ্যে শুধু সার্কিট হাউস থেকে খেজুরবাগান (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সোনারতরী) পর্যন্ত অস্থায়ী রোড ডিভাইডার চোখে পড়েছে।
আগরতলা বনাম ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা- ছবি: বাংলানিউজ
গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মসজিদের মিনারের মতো ছোট্ট একটি গোলচত্বর রয়েছে। সেখানে একজন পুলিশ সদস্য কোনো রকমে দাঁড়াতে পারেন। কোমর সমান উঁচুতে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের সেই নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম পুরোপুরি এনালগ। কোথাও ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল নেই।

গোলচত্বরে দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিশ। হাতে ছোট্ট একটি প্ল্যাকার্ড। প্ল্যাকার্ডটি দেখতে অনেকটা টেবিল টেনিসের ব্যাটের মতো। তার দু’দিকে লাল কালিতে লেখা রয়েছে ‘STOP’ । প্যারেড করার সময়ে স্কাউট দল যেভাবে একবার রাইট টার্ন, লেফট টার্ন, অ্যাবাউট টার্ন হয়ে দাঁড়ায়, এখানেও ট্রফিক পুলিশ সেভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্টপ লেখা প্রদর্শন করছে। যখন যেদিকের স্টপ দেখাচ্ছে সেই রাস্তার যানবাহন থেমে যাচ্ছে।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে গোলচত্ত্বরে দাঁড়ানো ওই একজন পুলিশের নির্বাক নির্দেশনাকে কেউ অবমাননা করছে না। ধর্মীয় অনুশাসনের মতো মেনে চলছেন সবাই। অনেক মোড় দেখা গেছে যেখানে একজন ট্রাফিক পুলিশও নেই। আবার বাংলাদেশের মতো একটু পরপর বিশেষ চেকপোস্টও নেই। কিন্তু সবকিছু চলছে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে।

অথচ বাংলাদেশে কী হচ্ছে! গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে চোখ রাখলে মনে হবে সেখানে এক প্লাটুন ট্রাফিক মোতায়েন করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সহকারি উপ-পরিদর্শক, উপ-পরিদর্শক, ট্রাফিক পরিদর্শকের ছোটাছুটি। সঙ্গে থাকে কয়েকজন কমিউনিটি পুলিশও। তারপরও কোনো শৃঙ্খলার বালাই নেই। মাঝেমধ্যে ‘রশি থেরাপি’ও ব্যবহার করা হয়।

তবুও ট্রাফিক পুলিশের গা ঘেঁষে রাস্তা বন্ধ করে যাত্রী ওঠানামা করছে বাসগুলো। আবার ট্রাফিক সার্জেন্টের কোল ঘেঁষে উল্টো পথে যাচ্ছে গাড়ি। এক সময় ভিভিআইপিরা উল্টো চলার পথ দেখালেও, এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। উল্টো পথে লাইনধরে যাচ্ছে যানবাহন। ট্রাফিক পুলিশের প্লাটুন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
রাজধানী ঢাকার যানজট- ছবি: বাংলানিউজ
সকালের দিকে কারওয়ানবাজার থেকে সবজি বোঝাই করে বের হওয়া ট্রাক-ভ্যান-রিকশা সবই উল্টো পথ ধরে ফার্মগেট গিয়ে টার্ন নিচ্ছে। এ রকম ঘটনার ভুরিভুরি উদাহরণ দেওয়া যাবে। অথচ এসব এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ দল বেঁধেই অবস্থান করে থাকে। তাদেরকে থোড়াই কেয়ার করছে নগরের বাসিন্দারা।

আবার ঢাকার সব রাস্তায় রোড ডিভাইডার। মানুষ যাতে পার না হতে পারে সেজন্য কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া রয়েছে। তারপরও মানুষ কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে পার হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে।

ট্রাফিক পুলিশ হয়তো বলবে, আমরা নিয়মিত মামলা করছি। তাদের কথাও ঠিক, সম্প্রতি এক চালকের সঙ্গে কথা হয়, তিনি গাবতলী-সায়েদবাদ রুটে বাস চালান। পাঁচ বছরে তিনি সিগন্যাল অমান্য, ফিটনেস সমস্যাসহ নানান কারণে শতাধিক ‘মামলা খেয়েছেন’।

তবুও কি সেই চালক সংশোধিত হয়েছেন! না হননি। কেন হননি, কেন লোকজন ট্রাফিক আইন মানছেন না, কেন একদল ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। আর পাশের দেশ ত্রিপুরা, যারা বাংলাদেশের চেয়ে অবকাঠামোর দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তারা সবকিছু মেনে চলছেন। আমরা কেন পারছি না। মনে হয়, ভেবে দেখার সময় এসেছে। না হলে আইন অমান্য করার প্রবণতাই ঢাকাকে স্থবির করার জন্য যথেষ্ট।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭
এসআই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।