ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

তৃষ্ণা অভয়ারণ্যে বাদামি কাঠবিড়ালির চোখাচোখি

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৭
তৃষ্ণা অভয়ারণ্যে বাদামি কাঠবিড়ালির চোখাচোখি তৃষ্ণা অভয়ারণ্যে বাদামি কাঠবিড়ালি ছবি: আসিফ- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ত্রিপুরা থেকে ফিরে: সফরের প্রথম দিন ভ্রমণের এনার্জি একটু বেশিই থাকে। ঢাকা থেকে আখাউড়া সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় পা রেখেই তাই রওয়ানা প্রায় ১শ কিলোমিটার দূরের এক অভয়ারণ্যে। টানা আরও ঘণ্টা তিনেকের রাস্তা। ৩৫ ডিগ্রি খরতাপ মাথায় নিয়ে মারুতি জেনে সওয়ার আমরা চার সহকর্মী। চালক রূপক সূত্রধর আমাদের সমবয়সী। বেশ স্মার্ট। গল্প-আড্ডায় তাই শুরু হলো চলা।

তৃষ্ণা অভয়ারণ্যের গেট-ছবি: আসিফ দক্ষিণের জাতীয় সড়ক দিয়েই আমাদের যেতে হবে। যেটা চলে গেছে নীরমহল ও ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিখ্যাত জেলা সিপাহীজলার উপর দিয়ে।

ওপারে বাংলাদেশের কুমিল্লা সীমান্ত। তাই বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কটা বেশ ভালোই পাওয়া যায়। তবে বিড়ম্বনা হলো দেশ থেকে কেউ কল করলে ত্রিপুরা মানে ভিনদেশে আছি শুনলে কেউ বিশ্বাস করে না। তাকে রীতিমতো ছবি দেখিয়ে বিশ্বাস করাতে হয়। গন্তব্য রাজ্যের সর্ব দক্ষিণের জেলার তৃষ্ণা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বাইসনের জন্য জায়গাটি বিখ্যাত।
তৃষ্ণা অভয়ারণ্যের পথে পথে-ছবি: বাদলযাত্রার শুরুতে রাস্তা খারাপ হলেও পরের দিকে বেশ ভালো। আঁকা-বাঁকা সড়ক। মাঝে মধ্যে ডুবে যেতে হয় আমাদের লাউয়াছড়া কিংবা খাগড়াছড়ির মতো ল্যান্ডস্কেপে। চা বাগান, রাবার বাগান আর সড়কের দুপাশে ঘন জঙ্গল। সিপাহীজলা বাজারে নেমে নলা মাছ, পাঠার মাংস আর ডাল-সবজি দিয়ে খেয়ে ফের রওয়ানা। বিশালগড় চা বাগান ও রাবার বাগানটি বেশ মনোরম। পথ চলতে চলতে বিকেলে পৌঁছালাম প্রায় ১৯০ বর্গকিলোমিটারের তৃষ্ণা অভয়ারণ্যে।
তৃষ্ণা অভয়ারণ্যে বাদামি কাঠবিড়ালি ছবি: আসিফ- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবনের তিনটি ভাগ রয়েছে। একটিতে লেক, পিকনিক স্পট, একটি প্রজাপতি পার্ক আরেকটি ইডেন অব বাইসন। জয়চণ্ডীপুর ইকো ট্যুরিজমের আওতায় বছর পাঁচেক হলো এখানে কিছু সুযোগ-সুবিধা চালু করা হয়েছে। মাত্র ৬ রুপির টিকিট কেটে ঢোকা যায় বনে। তবে বাংলাদেশ থেকে এতো দূরে এসেছি শুনে সেটাও মাপ করে দিলেন টিকিটম্যান।
তৃষ্ণা অভয়ারণ্যের লেকে ল্যাঞ্জা হাঁস।  ছবি: আসিফ- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমলেকের অংশে বানর, পাখি, সাপ, মায়া হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বাস। আমাদের ধারণা ছিলো এ বনেও বাইসন দেখা যাবে। তাই ঘন জঙ্গল ঘেরা বনে ঢুকে ঘোরাঘুরি। লেকের কাছাকাছি গিয়ে হঠাৎ সামনে পড়লো এক বাদামি কাঠবিড়ালি। বেশ নির্ভিকচিত্তেই সে আমাদের চিত্তবিনোদন দিতে থাকলো। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।
তৃষ্ণা অভয়ারণ্যএকটু এগিয়ে সামনে যেতেই খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ানো আরও দুটির দেখা। একেবারের কাছে হওয়ায় রীতিমতো চোখাচোখি হলো তাদের সঙ্গে। ক্যামেরার ক্লিকের সঙ্গে সঙ্গে সেও যেন দিতে থাকলো নানান পোজ। বর্ষায় বনের এখন যৌবন। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। তবে দর্শনার্থী কম। লেকের ঘাটে অলস শুয়ে থাকতে দেখা গেলো তত্ত্বাবধায়ক প্রদীপকে। ৩০ রুপিতে নৌকায় করে আধাঘণ্টা ঘোরা যায় এক কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে থাকা লেকে।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমলেকটি বেগুনি শাপলায় ঢাকা। দূরে দুটি ল্যাঞ্জা হাঁসকে দেখা গেলো ঘুরে বেড়াতে। লেকের পাড়ে রয়েছে বসার জায়গা। উপরে ব্রিজও রয়েছে একটি। চারদিকে নিরিবিলি সবুজে ঢাকা। দুটি ট্রেইলে ট্রেকিংও করার সুযোগ রয়েছে এখানে। হরিণ কিংবা বানর দেখার প্রয়াসে বেশ কিছুক্ষণ চুপিসারে হাঁটা হলো। কিন্তু হতে হলো নিরাশ। শেষ দিকে সেই বাদামি কাঠবিড়ালিটিই নিরাশার মাঝে কিছুটা ‍আশা জাগালো।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমঘোরাঘুরি এক পর্যায়ে টিকিটম্যানের কাছে জানা গেলো বাইসন দেখতে হলে এখনই চলে যেতে হবে ৫শ মিটার দূরে। বিকেলে নাকি বাইসনরা খেতে বের হয়। শুনেই দেরি না করে দৌড় ইডেন অব বাইসনে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দেখাও গেলো একপাল বাইসন।
তৃষ্ণা অভয়ারণ্যে বাদামি কাঠবিড়ালি ছবি: আসিফ- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমনিজস্ব ট্রান্সপোর্ট ছাড়াও আগরতলা থেকে গাড়িতেও যাওয়া যায় দক্ষিণ জেলা। ভাড়াও খুব বেশি না। সময় লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।