ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

পর্যটক হয়রানির অপর নাম আগরতলা আইসিপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০১ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৭
পর্যটক হয়রানির অপর নাম আগরতলা আইসিপি ত্রিপুরার আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা: ভিতরে-বাইরে বেশ চাকচিক্য ত্রিপুরার আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের (আইসিপি)। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে কয়েকগুণ এগিয়ে ওপারের আখাউড়া ইমিগ্রেশন-কাস্টমস থেকে। কিন্তু বিশাল ভবনে কাচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই শুরু হয় হয়রানি। অন্য আর দশটা চেকপোস্ট থেকে প্রথমে একটু ব্যতিক্রম মনে হলেও আদতে সব প্রায় একই সুতোয় গাঁথা। সেটা প্রমাণ হয় পদে পদে।

ইমিগ্রেশন ভবনে ঢুকেই স্ক্যানার মেশিনে ঢোকানো হয় প্রত্যেকের ল্যাগেজ ও হ্যান্ডব্যাগ। অবৈধ কিছু পেলে ধরবে সেটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু সামান্য ইলেক্ট্রিক ব্রাশ, ছাতা, রাইটিং প্যাডের অস্তিত্ব পেলেও খোলা হয় ব্যাগ। দেখানো হয় বিভিন্ন আইন। অথচ যেন ব্যাগ খোলা না লাগে সেজন্যই এ পদ্ধতি। আর নারী যাত্রীদের ব্যাগ চেকিং প্রয়োজন হলেও সেটা করেন সেই পুরুষ চেকার। যা কোনোভাবেই শোভনীয় নয়। প্লেনে যাতায়াত করলেও চেকিংয়ে এই ঝামেলায় পড়তে হয় না ভ্রমণকারীদের। ত্রিপুরার আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, ছবি: বাংলানিউজউত্তরপূর্ব ভারতের মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার পার্শ্ববর্তী আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন।  তাই যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ভারত সরকার আখাউড়া সীমান্তের চেকপোস্টকে আইসিপিতে উন্নীত করে।  সুসংহত স্থলবন্দরে একই ছাদের তলায় রয়েছে বাংলাদেশ যাতায়াতকারী ও বাংলাদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা, বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে আসা ডলার এক্সচেঞ্জ করে ভারতীয় রুপি নেওয়ার জন্য ব্যাংকের শাখা।

যাত্রীদের বসার জায়গা, খাওয়ার পানি, শৌচালয়সহ নারী যাত্রী ও শিশুদের বসার জন্য আলাদা জায়গা।

এমনকি একই ছাদের তলায় রয়েছে যাত্রীদের বিদায় জানাতে আসা ও বিদেশ থেকে আগত অতিথিদের স্বাগত জানাতেআসা নিকটাত্মীয়দের বসার জায়গা।

কিন্তু বিএসএফ জওয়ান ও আইসিপির একাংশ কর্মচারীর অপেশাদার আচরণে আইসিপি বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আগরতলার বাংলাদেশ অ্যাসিসট্যান্ট হাই কমিশন সূত্রে জানা যায়, এই আইসিপি দিয়ে যাতায়াতকারীদের অধিকাংশই টুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসা-যাওয়া করেন।  এর এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে।  কারণ দেশভাগের সময় অনেকে পূর্ববাংলা থেকে এপারে চলে আসেন আবার তাদের অনেক আত্মীয়-পরিজনদের বাংলাদেশে রয়ে গেছেন।  আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যেমন সেদেশের মানুষ ত্রিপুরায় আসেন, তেমনি ত্রিপুরার মানুষও নিয়মিত বাংলাদেশে যান।

একদেশের মানুষ যখন অপর দেশে নিজের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে যান তখন নিজেদের লোকেদের জন্য নিজেদের ঘরে তৈরি খাবার-দাবার, বাজার থেকে কেনা মিষ্টি, চকলেট, চিপসসহ যৎসামান্য জামা-কাপড় কিনে নিয়ে যান।  একইভাবে বাংলাদেশিরাও তাদের পরিজনদের জন্য একইভাবে উপহার সামগ্রী নিয়ে আসেন।  আবার ফিরে যাওয়ার সময় পরিজনদের কাছ থেকে পাওয়া উপহার সামগ্রীগুলি নিয়ে যান।

এই সামান্য উপহার সামগ্রী পরিবারের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময়ও আগরতলা আইসিপিতে গলদঘর্ম হতে হয়।  কেন কিনেছেন, সব খরচের রিসিট দেখান, এতো কিনেছেন কেন, কার্ড নিয়ে গেলে কার্ড দিয়ে টাকা তোলার রিসিট দেখান ইত্যাদি ইত্যাদি। ত্রিপুরার আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, ছবি: বাংলানিউজএমনকি একাংশ কর্মী ভিনদেশি পর্যটকদের অফিসের ড্রয়ারে পুরে রেখে দেবেন বলে হুমকিরও অভিযোগ রয়েছে।  তবে যতই গরম দেখাক, একশো টাকার নোট বের করলেই সব ঠান্ডা হয়ে ‍যায়। আর এসব কাজে বেশি ভোগান্তির সৃষ্টি করেন কাস্টমস ইন্সপেক্টর রতন ঋষিদাস। তার বিরুদ্ধেই দু'পারের মানুষের যতো অভিযোগ। আগরতলাবাসীর বক্তব্য, একজন কর্মকর্তার জন্য তাদের দুর্নাম হচ্ছে।

আবার বাংলাদেশ থেকে আগত যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানাতে অথবা বিদায় জানাতে আইসিপিতে আসা ভারতীয় নাগরিকদের প্রতিক্ষালয়ে যেতে বাধা দেয় একাংশ বিএসএফ জওয়ান।  প্যান, আধার, ভোটার কার্ডের মতো ভারত সরকার প্রদেয় স্বচিত্র পরিয়পত্র দেখালেও তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।  এ নিয়ে জওয়ানদের সঙ্গে কথা অনেক জওয়ান বলেন এখানে ভারত সরকারের নয়, তাদের নিয়ম চলে।

যাত্রীদের বক্তব্য, আগরতলায় অধিকাংশ মানুষ যাতায়াত করেন নাড়ির টানে। পর্যটকের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কেউ অনেক কেনাকাটা করতে আসেন না। কিন্তু কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে যে হয়রানি ও ভোগান্তি হয় তাতে দিনে দিনে কমবে পর্যটক সংখ্যা।  

ঢাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায় আগরতলা। তাই ভোগান্তি এখানে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৭
এসসিএন/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।