ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

লোকসভা ভোটের আঁচে উত্তপ্ত ত্রিপুরাসহ গোটা ভারত

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
লোকসভা ভোটের আঁচে উত্তপ্ত ত্রিপুরাসহ গোটা ভারত গণসংযোগ। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): গ্রীষ্মকাল আসতেই পরিবেশে ছোঁয়া লেগেছে ঊষ্ণতার। দিন যতই বাড়ছে, ঊষ্ণতার মাত্রাও বাড়ছে ততই। তবে ভারতে এ ঊষ্ণতাকে কয়েকশ’ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন।

দেশটির সব প্রান্তেই এখন একটাই আলোচনার বিষয়। দেশের নির্বাচনের রায় কি হবে? ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম ও দেশের একেবারে প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরাও এর বাইরে নয়।

চায়ের আড্ডা থেকে অফিস চত্বর সব জায়গাতেই এ বিষয়ে আলোচনাই প্রাধান্য পাচ্ছে। এ সময় ভোট নিয়ে আলোচনার বিষয় বস্তু হচ্ছে কে হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী? মোদী কি আবার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, না মোদী ম্যাজিককে বোতল বন্দি করে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সভাপতি আবার বিরোধীদের কাছে পাপ্পু বলে পরিচিত রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন?

ত্রিপুরা রাজ্যেও লোকসভার দু’টি আসন রয়েছে। এগুলো- পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসন এবং পূর্ব ত্রিপুরা জনজাতি সংরক্ষিত আসন। তাই এ লড়াইয়ের ময়দানে ত্রিপুরাও অংশীদার। মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে ২৫ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে সরিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের শাসন ক্ষমতা দখল করেছে ভারতীয় জনতা দল (বিজেপি) এবং তাদের সহযোগী জনজাতি ভিত্তিক দল ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অব তিপ্রা (আইপিএফটি)।

বিজেপি নেতৃত্বের দাবি ত্রিপুরা থেকে বামফ্রন্টকে সরাতে ‘মোদী ম্যাজিকই’ ছিলো প্রধান শক্তি। তাই তারা লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরা রাজ্যের দু’টি আসনে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতে চাইছেন। তারা এ দু’টি লোকসভা আসনকে দু’টি পদ্মফুল হিসেবে দেখছেন। আর সে পদ্ম ফুলগুলোকে উপহার হিসেবে তুলে দিতে চাইছেন মোদীর হাতে।

এই কারণে মাত্র এক বছরের জোটসঙ্গী আইপিএফটির সঙ্গে বিজেপির তৈরি হয়েছে দূরত্ব। জোটসঙ্গী হিসেবে আইপিএফটি পূর্ব ত্রিপুরা জনজাতি সংরক্ষিত আসনটি তাদেরকে ছেড়ে দিতে দাবি জানিয়েছিলো। কিন্তু বিজেপির ত্রিপুরা রাজ্যের নেতারা মোদীকে দু’টি আসন উপহার দিতে চান। তাই তারা আইপিএফটির এ দাবি রাখতে পারেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দু’টি আসনেই নিজেদের মনোনীত প্রার্থী দিয়েছে আইপিএফটি।

লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরা রাজ্যের মেজাজ কী জানতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। মূলত এবার লড়াই হচ্ছে বিজেপি, আইপিএফটি, কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের মধ্যে।

শাসক বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্যকে লোকসভা নির্বাচনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, দু’টি আসনে বিজেপির প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত। ফল ঘোষণা ও তাদের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। যদিও এখনও পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনের ভোট হয়নি। তা হবে আগামী ২৩ এপ্রিল।

তিনি আরও বলেন, অন্য দলগুলোর মধ্যে কে দ্বিতীয় এবং কে তৃতীয় স্থান দখল করবে এ লড়াইয়েই তারা ব্যস্ত।

অপরদিকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিআই’র (এম)  ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও পশ্চিম জেলা কমিটির সম্পাদক পবিত্র কর বলেন, বর্তমানে রাজ্যের দুই সাংসদ বামফ্রন্টের। তারা জনগণের জন্য ভালো কাজ করেছেন। যদি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয় তবে দু’টি আসনেই বামফ্রন্ট প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত। তবে শাসক দলীয় দুষ্কৃতিকারীরা যেভাবে বামফ্রন্টের নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ করেছে তাতে তারা ঠিকমতো প্রচারও করতে পারেননি। এমনকি পশ্চিম আসনের বামফ্রন্ট প্রার্থীর উপর সাতবার আক্রমণের চেষ্টা করা হয়েছে। এনিয়ে তারা একাধিকবার রাজধানী দিল্লিতে ভারতের নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন।

ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস দলের সহ সভাপতি ও মুখপাত্র তাপস দে বলেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনে দু’টি আসনেই কংগ্রেস প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত। কারণ মোদী থেকে শুরু করে বিজেপির ত্রিপুরা রাজ্যের নেতারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। মানুষ তাদের এই মিথ্যা ধরে ফেলেছে। তাই তাদের একটি ভোটও দেবেন না। ত্রিপুরা রাজ্যে ভোটের আগে বিজেপি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, তার একটিও কাজ করেনি। একসময় বিজেপির ভোট ছিলো দুই শতাংশের নিচে। এই লোকসভা নির্বাচনে আবারও তা দুই শতাংশের নিচেই নেমে আসবে। এটা বুঝেই শাসক দল কংগ্রেসের কাজে বাধা দিচ্ছে।

আইপিএফটির সভাপতি এন সি দেববর্মাকে লোকসভা ভোটে তাদের জয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, তাদের দল একটি দাবি নিয়ে গঠিত। সেটি হল-ত্রিপুরা রাজ্যের একটি অংশ নিয়ে তিপ্রাল্যান্ড রাজ্য গঠন করা। এই দাবিকে সামনে রেখেই তারা লোকসভা ভোটে লড়াই করছেন। তাই যদি জনজাতি অংশের মানুষ ভোট দেয়, তাহলে তাদের জয় নিশ্চিত। তাছাড়া শুধু জনজাতি অংশের ভোটারই নয়, বহু বাঙালি ভোটারও আইপিএফটিকেই ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন দল নিজ নিজ দলের অভ্যন্তরীণ জরিপ থেকে এই দাবি করছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো দল বা কোনো প্রার্থী জয়ের হাসি হাসতে পারেন তা দেখার জন্য আমাদের সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে ২৩ মে পর্যন্ত। কারণ এইদিনই প্রকাশিত হবে ভারতজুড়ে ভোটের ফল।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
এসসিএন/এসএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।